সোক্কোরো, নিউমেক্সিকো : ১৯৭৭
আসিয়াছ মধ্যরাত্রে, সত্তর দশক তব বিপন্ন চরণে ধ্বনিয়াছে।
দিশাহারা, দিকশূন্য, ত্রস্ত তুমি, তবুও তোমার
কোথাও যাওয়ার ছিল
নিদ্রিত সর্পের ন্যায় জনশূন্য হাইওয়ে বাহি
নিভন্ত চাঁদের প্রতি চাহি, নিতান্ত ভঙ্গুর তুমি
জাদুকর সাজিয়াছ, আস্তিনে লুকায়ে বেদনা
সমনাম্বুলিস্ট যথা স্থির হয়ে দাঁড়ায়েছ
(ঋজু হয়ে দাঁড়ায়েছ বুঝি!)
রিওগ্রান্দে নামধারী, অতিশীর্ণ নদীটির ধারে
নিস্তব্ধ একাকী অন্ধকারে
নিস্তরঙ্গ তটিনীতে তোমার মুখের ছায়া
হঠাৎ ছলাৎ করি উঠিয়াছে কেঁপে,
রোডরানার পাখি হয়ে জাদুবলে উড়ে গেছে
পকেটের চারটি ডলার, নির্জন নদীর বাঁকে
ভয়াল দুঃস্বপ্নে লগ্ন ’মেরিক্যান ড্রিমে
কয়েকটি বিষাক্ত সর্প চলিয়াছে ঝুমঝুমি বাজায়ে।
সোক্কোরো নামক এক অলীক নগরী বুঝি
জাগিয়াছে সেইরাত্রে নিদ্রাহীন শিয়রে তোমার।
সোক্কোরো শব্দের মানে সহায়তা।
ইস্পাহানী শব্দবন্ধে তোমার দক্ষতা নাই
তুমি এর অর্থ বোঝ অভিজ্ঞতা দিয়ে।
তুমি ক্লান্ত, হাঁটিতেছ, পৃষ্ঠে এক দুর্বিষহ বোঝা;
হঠাৎ থামিল গাড়ি, অচেনা চালক, তার প্রশ্ন শোনো:
“কোথা যাও একাকী সিনর? কোথায় তোমার ঘর?
আইস আমার সাথে,
হে বিদেশী, আসিয়াছ কোন গ্রহ হতে!”
বহুকাল গত হল, চলে গেছে সে সব মানুষ
তুমি কেন তাহাদের নাম জানো নাই?
বহুকাল কাটিয়াছে, সেইসব মুখ মনে নাই
কেন বলো?
তবু,
সোক্কোরো শব্দের অর্থ অভিধানে দেখিবে না
তুমি তাহা মর্মে মর্মে জানো!
রিওগ্রান্দে নদীতীরে আছে সেই অচিন শহর
কেহ তারে খুঁজে পায়, কেহ তারে ভালোবাসে
রহস্যের অভিঘাতে বেদনা ছড়ায়ে যায় প্রাণে।
প্রতিরাত্রে জন্ম তার, প্রতিস্মৃতি সতত নবীন:
অশ্বের খুরের ধ্বনি, চাঁদের উদ্দেশে ঘোড়া
ছুটায়েছে অ্যাপাচি বালক,
তমিস্রায় ঝলকায় পাখির পালক তার শিরস্ত্রাণে,
চলিতেছে অজানায় অলৌকিক ‘লাল ভারতীয়’!
তুমি সে মায়াবী ঘোড়া চড়িয়াছ, সে শহরে
সেও বুঝি ছিল: নির্মম কৃপাণ হাতে
র্যাগট্যাগ কনকুইস্তাদোর, অভিযাত্রী; নৃশংস সেনানী
তার সনে।
তোমাকে সে দ্যাখে নাই, চিনে নাই, সেদিনের
মরাচাঁদে রাত্রির আকাশে?
সুদূর ভারত হতে আসিয়াছ, সত্তর দশকে
যেন এক নওল কিশোর:
নিরস্ত্র, অপাপবিদ্ধ
পটভূমি বহ্নিমান
সর্বাঙ্গে অগ্নিদগ্ধ ক্ষত!
========
নিরুপম চক্রবর্তীর ‘বেস্কিড পাহাড়ের ভার্জিন মেরি’ কবিতা সংকলন থেকে। সৃষ্টিসুখ প্রকাশন থেকে খুব শীঘ্রই বইটি প্রকাশ পেতে চলেছে। বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন অতনু দেব।