স্বপ্নের ভিতর

দেবাশিস সেনগুপ্তর দ্বিতীয় অণুগল্প সংকলন।

125.00

7 in stock

SKU: 93-86937-30-8 Categories: , Tag:

Book Details

ISBN

978-93-86937-30-8

Published on

January 2018

Publisher

Sristisukh Prokashan LLP

Cover and Illustration

সুমিত রায়

Language

Bengali

E-book Version

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.sristisukh.ebook

About The Author

দেবাশিস সেনগুপ্ত

হান্ডিটা রসুইতে নামিয়ে উঠোনে এসে দাঁড়াল নিয়ামত আলী। কপাল গড়িয়ে দু-ফোঁটা ঘাম মিশে গেল সাদা দাড়ির জঙ্গলে। সকাল দশটা বাজে, এখনই আগুনের হলকা বইছে শহরটা জুড়ে। অটোর জন্য দাঁড়াতে হল প্রায় বিশ মিনিট। আমিনাবাদ থেকে অটোওয়ালারা আজকাল আসতে চায় না এটুকু পথ, লোকসানের গল্প শোনায়। হুজুরের মুখে তো অন্য রাবড়ি রুচবে না! একশ বছর হয়ে গেল, এই হাভেলিতে রাবড়ি আসে আমিনাবাদ থেকে। সারাবছরের সমস্ত খরিদারিও হয় সেখান থেকে। বাহাত্তর বছর পার করে দিল নিয়ামত এসব নিয়ে।
– নিয়ামত আলী! দুসরি চা কি পেশ হবে না আজ? দোতলার বারান্দা থেকে হাঁক আসে তেজি গলায়।
উজিরী মঞ্জিল এখন শুনশান। তিনদিক ঘেরা হাভেলির দক্ষিণের চারটে ঘর বাদ দিলে বাকি সব বন্ধ হয়ে আছে। ইমতিয়াজ হোসেন খান নিজেকে নবাব-উজির ভাবেন না বটে, তবে পূর্বপুরুষের আদতগুলো ছাড়তেও পারেন না। একমাত্র ছেলের ব্যবসা মুম্বাই নগরীতে। বেগমসাহিবার ইন্তেকালের পর এই হাভেলিতে একা পড়ে আছেন ইমতিয়াজ, সঙ্গী নিয়ামতকে নিয়ে।
– হুজুর! দশ মিনিটে আনছি।
নিয়ামত এখনও তটস্থ হয়, এতকাল পরেও। রসুইয়ের নতুন নোকরানি রেশমা ফুট কাটে, যাও তোমার নবাব হাঁক দিয়েছে গো চাচা!
– আস্তে বল বেওকুফ মেয়ে! শুনতে পেলে নোকরি খতম হয়ে যাবে তোর!
শিউরে ওঠে নিয়ামত।

দেখেশুনে বেকুব বনে যায় রেশমা। জুম্মা জুম্মা সাতদিন হল কাজে ঢুকেছে এই উজিরকোঠিতে। দিনের বেলাতেও গা ছমছম করে। আব্বুর মুখে শোনা নবাবী লক্ষ্ণৌ যেন আটকে আছে এই বাড়িতে। চাচার কাছে শুনেছে কাল, কোন এক ইমদাদ হোসেন খান বানিয়েছিল এই হাভেলি, সেও প্রায় দুশ বছর আগে। নবাবের খাস উজির ছিল। তারপর ওয়াজেদ আলী শাহ নবাব হল। ফিরিঙ্গীরা তাকে খেদিয়ে নিয়ে গেল কলকাতা। ইমদাদ হোসেন যাননি সঙ্গে, এই হজরতগঞ্জেই রয়ে গেলেন। তারপর পাঁচপুরুষ ধরে এই হাভেলিতে। বলতে বলতে চোখটা চকচক করছিল নিয়ামত চাচার।
রোজ সকালে রাবড়ির হান্ডিটা দেখে জ্বলে ওঠে রেশমার চোখও। আব্বু যতদিন বেঁচে ছিল লাডলি রেশমার জন্য মাঝেমাঝেই আসত এই রাবড়ি। চিক্কন বাজারে কাজ করত আব্বু। স্কুল থেকে ফিরে সবজি রোটির সঙ্গে দু-চামচ পাতে বরাদ্দ হত তার। আশ মিটত না। আম্মি বোঝাত — বেটি, মিলেমিশে খেলে সোয়াদ বাড়ে!
এই হুজুরের মতো আব্বুও বলত, খেলে আমিনাবাদের রাবড়ি খাও, হজরতগঞ্জের কাবাব। নইলে খেও না!

দুম করে মরে গেল আব্বু, কিছুদিন পর স্কুল যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। ভাইয়া ঢুকে গেল গোমতীনগরের চুড়ি ফ্যাক্টরিতে। বাড়িতে রাবড়ি আসাও বন্ধ হয়ে গেল। কাল চাচার চোখ বাঁচিয়ে দু-চামচ চেখে দেখেছে রেশমা, সেই সোয়াদ, সেই বচপন ফিরে এল যেন এক লহমায়। ভয় ছিল খুব, বুড়ো হুজুর যদি ধরে ফেলে!
ফাই ফরমাসের কাজ তার। এদের অবস্থা ভালো না। ছেলে যা সামান্য পাঠায় আর হাভেলির পেছনের বস্তির কয়েকঘর ভাড়া সম্বল। তন্দুরি রোটি, ডাল-সবজিটুকু বানিয়েই হাঁপিয়ে যায় চাচা। চান্দির থালায় ওটুকুই বেড়ে দেয় রেশমা, সঙ্গে বড় বাটিতে রাবড়িটুকু। আজও দু-চামচ মেরে দিয়েছে চাচার চোখ বাঁচিয়ে।
নিজের খাওয়া সেরে সবে উঠেছে, নেমে এল চাচা। এবার এই বুড়োকে খাইয়ে তবে ছুটি।
– লে বেটি, রাবড়ি খা আজ মন ভরে। বাটিটা এগিয়ে ধরে নিয়ামত। চমকে দু-পা পিছিয়ে আসে রেশমা।
– হুজুরসাব খাননি?
গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না ভয়ে।
– হুজুরের তবিয়ত ঠিক নেই আজ। বললেন, নিয়ে যাও, নতুন বিটিয়াকে দাও। কাল থেকে তোমরাও নিও। আমিনাবাদের রাবড়ি! মিলেমিশে খেলে সোয়াদ বাড়ে।
মুখে না তুলেও টের পায় রেশমা, বচপন ফিরে আসছে আবার!

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “স্বপ্নের ভিতর”

Your email address will not be published. Required fields are marked *