একটি সাধারণ মেয়ের অসাধারণ গল্প— ভেবলির ডায়রি। ভেবলি তার নামের প্রতি সুবিচার করে ছোট থেকেই স্কুলে পেছনের বেঞ্চে। খেলাধূলায় সবার শেষে। বন্ধুবৃত্তে পরিধির সামান্য বাইরে। কিন্তু এ মহাবিশ্ব সবার জন্যেই আশ্চর্য পরিকল্পনা তৈরি করে রাখে। সেই চিত্রনাট্যের ধারা মেনেই শহুরে ভেবলি খারাপ ফলাফল করার অপরাধে গিয়ে হাজির হল উত্তরবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। আসল লড়াইটা শুরু হল সেখান থেকে। ওই অসহ পরিবেশ থেকে মুক্তির উপায় স্কুলের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল। তাই আর সবকিছু ভুলে ভেবলি পাঠ্যবইয়ে ডুব দিল। যথাসময়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করে ভেবলি গিয়ে হাজির হল পশ্চিমবঙ্গের এক বিখ্যাত আবাসিক স্কুলে। এই প্রথম তার ওপর এসে জেঁকে বসল তার ধর্মীয় পরিচয়। শুধুমাত্র মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে গড়ে ওঠা সেই স্কুলের ইসলামিক আদবকায়দার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ভেবলি আবার ফিরে এল তার চেনা কারাগারে। এবার লড়াই আরও কঠিন। অন্য স্কুল থেকে বছরের মাঝখানে সরে আসার ফলে তাকে ভর্তি হতে হল নতুন এক স্কুলে। সেখানে একের পর এক বাড়ি আর মেস বদলে ভেবলি ক্রমশ বড় হয়ে উঠতে লাগল। সে জানল পুরুষ কেমন এবং কত প্রকারের হয়। স্কুলের পাঁচিল পেরিয়ে কলকাতায় ভরতি হল এক বিখ্যাত কলেজে। সে শিখল বন্ধুত্ব কতটা সুনিবিড় হতে পারে। সে বুঝল শুধুমাত্র প্রেম কীভাবে বদলে দেয় মানুষকে। শেষমেশ, এই উপলব্ধিও তার হল— কেমন করে মানুষ দাঁড়িপাল্লায় চেপে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে মান্যতা দিয়ে থাকে।
সরিতা আহমেদ-এর ‘ভেবলির ডায়রি’ একজন গড়পড়তা মেয়ের, থুড়ি, একজন গড়পড়তা বাঙালি মুসলমান মেয়ের কাহিনি। আমরা সবাই কমবেশি সেই গল্প জানি। এবং আমরা এও জানি সে গল্প খুব স্বস্তিদায়ক নয়। একজন সচেতন পাঠকের জন্যে এই বই লজ্জার, অস্বস্তির এবং অসুখের। নিজের মুখোমুখি দাঁড়ানোর ইচ্ছে না থাকলে তসলিমা নাসরিনের ভূমিকা সম্বলিত এই বইয়ের সঙ্গে সযত্নে দূরত্ব তৈরি করা আবশ্যক।
বইটি সম্পর্কে ‘সাপ্তাহিক বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশিত আলোচনা –
Reviews
There are no reviews yet.