“অরুণ আইন। আমাদের সেই রঙিন টিভি-মোবাইল ফোন-ইন্টারনেটবর্জিত কৈশোরের এক অন্যতম প্রিয় নাম। আমরা অপেক্ষা করতাম তাঁর লেখা পড়ব বলে। কারণ সে সব গল্প-উপন্যাসে আমাদের চেনা বন্ধুবান্ধব চেনা বৃত্তে ঘোরাফেরা করত। সে সব লেখা পড়ে মনেই হত না, এ সব অচেনা মানুষ অচেনা জগতের কথা! আমরা তখন সেই সব গল্প-বলিয়েদের আপন করে নিয়েছিলাম, যাঁরা আমাদের বোধগম্য ভাষায় লিখতেন, আমাদের চেনা সাদা-কালো চরিত্রদের কলমের কারিকুরিতে আরও ঢের বেশি রঙিন করে আঁকতেন।”
ঈশানী রায়চৌধুরী এভাবেই শুরু করেছেন অরুণ আইন রচনা সমগ্র ২-এর ভূমিকা। অরুণ আইনের লেখালেখি সত্যি করেই আমাদের চারপাশের সাধারণ মানুষজনের আখ্যান। কল্পবিজ্ঞান তাঁর হাতে হয়ে ওঠে মানবিক, সামাজিক গল্পে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মানুষের সুপার-হিউম্যান হয়ে ওঠার কাহিনি। তাই একটা সরলরেখায় তাঁর লেখালেখিকে বিচার করার অর্থ হয় না। তাঁর রচনা সমগ্র-র দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পেল দুটো উপন্যাস — মেঘের দেশের রাজপুত্র এবং হলুদে-সবুজে।
মেঘের দেশের রাজপুত্র-র নায়ক বারিধিকে কেউ হুমকি পাঠাচ্ছে প্রায় অলৌকিক উপায়ে। ওয়েট মেশিনের টিকিট, বাসের টিকিট, কারেন্সি নোট হয়ে উঠছে বার্তা পাঠানোর মাধ্যম। পরে ফরেনসিক পরীক্ষায় ধরা পড়ছে ওই বার্তা যে কালিতে লেখা হয়েছে, তা আমাদের চেনাশোনা কোনও উপাদানে তৈরি নয়। রহস্য আরও ঘনীভূত হল যখন প্রকাশ্যে এল বারিধির মতোই হুবহু দেখতে আরেকজন মানুষ। ধোঁকা খেয়ে যাচ্ছে পুলিশও। টানটান উত্তেজনায় এগিয়ে যাওয়া এই কাহিনিকে থ্রিলার, অলৌকিক, কল্পবিজ্ঞান না ফ্যান্টাসি– কোন ধারায় ফেলা যায়, তার ভার রইল পাঠকের ওপর।
হলুদে-সবুজে গল্পটি বাঙালির সেরা আবেগ ফুটবল নিয়ে। স্বপ্নপূরণের এই গল্পে ফুটবল হয়ে উঠেছে নায়ক। আমাদের খুব চেনা এক প্লটে অভাব-অনটনের সংসার থেকে উঠে এসে বেকন্বাওয়ারকে কাটিয়ে গোল দিচ্ছে এক বস্তিবাসী তরুণ। পাড়ার এঁদো গলিতে বল পিটতে পিটতে কীভাবে সে ইডেন গার্ডেন্সে ইউরোপিয়ান একটা দলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পেল, সে কাহিনি রূপকথাকে হার মানায়। কিন্তু একই সঙ্গে সে রূপকথার শিকড় গাঁথা বাস্তবের রুক্ষ জমিতে। তাই গল্পের নায়কের সাফল্যে গায়ে কাঁটা দেয় আমাদেরও। কাহিনি শেষ করে আনন্দাশ্রু মুছে নেন পাঠক।
Reviews
There are no reviews yet.