তন্বী হালদারের গল্পের ভুবন আসলে মানুষের মঙ্গলকাব্য। তাঁর প্রধান চরিত্ররা তাই দেবত্বে আর্দ্র নয়। বরং স্বার্থ-দ্বেষের রুক্ষ্মতা তাদের অহরহ ছুঁয়ে থাকে। কিন্তু সেই সূত্রেই কুশলী গল্পকার আমাদের পৌঁছে দেন মানবমনের নির্জ্ঞান ভূমিতে। আমরা আবিষ্কার করি, আমাদের এই সাজানো সমাজের অকল্পনীয় আধিপত্য, শক্তির মদমত্ততাকে। যা প্রতি মুহূর্তে ভেঙে দিচ্ছে ব্যক্তির আকাশ। তন্বী যেন পরম মমতায় ফিরিয়ে দিতে চান সেই আকাশের অধিকার। অবশ্য তিনি তাঁর চরিত্রদের দোষ ঢেকে রাখেন না। বরং নিষ্ঠুর হাতেই নগ্ন করেন তাদের আর আদপে দেখিয়ে দেন দোষের সত্যিকার উৎসস্থল! ঠিক কোথায় কতখানি অন্যায় জমে জমে মেঘলা হয়েছে আকাশ, তা বুঝতে পাঠকের বাকি থাকে না। ফলে সবরকম চারিত্রিক রুক্ষ্মতা সত্ত্বেও মঙ্গলকাব্যের প্রধান চরিত্রদের মতোই তন্বীর চরিত্ররাও উত্তীর্ণ হন শেষমেশ। সচেতন এই প্রয়াস। ততখানিই অনায়াস এই নির্মাণ। ফলে, এই চরিত্ররা যতক্ষণ গল্প হয়ে সৃষ্টির দোরগোড়ায় পৌঁছায়, ততক্ষণ চুম্বকটানে পাঠক আটকে থাকেন পুরো জার্নিটাতেই। দীর্ঘদিন ধরে লেখালিখি করছেন তন্বী হালদার। তাঁর এ যাবৎ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্য থেকে বাছাই ২৫টি নিয়ে এই সংকলন। এ বইয়ের প্রতিটি গল্পেই পাঠক আবিষ্কার করবেন সেই দোষ-গুণের মানুষকে, যে কেবল মানুষ হিসেবেই স্বমহিম। যে মানুষের ভুবন রুক্ষ্ম বলেই অন্তরগহীনে তা আর্দ্রতা বয়ে আনে।
Reviews
There are no reviews yet.