কাউয়াম্যান প্যারাডক্স

Back To Shop

কাউয়াম্যান প্যারাডক্স

135.00

রোহণ কুদ্দুসের নভেলা সংকলন।

Out of stock

SKU: KMPRK_SS Category: Tag:

Description

তিনটে নভেলার সংকলন হিসাবে সৃষ্টিসুখ প্রিন্ট থেকে প্রকাশ পাচ্ছে রোহণ কুদ্দুসের ‘কাউয়াম্যান প্যারাডক্স’। ফ্যান্টাসি আর ননসেন্স, মূল উপজীব্য এই। কেমন ফ্যান্টাসি? কেমন ননসেন্স? বোঝানোর জন্যে রইল ‘অরিত্র সান্যালের ঘুড়িরোগ’ থেকে একটি অংশ।

 

===========

 

স্ট্যাটাস আপডেটে জানা গেল অরিত্র ঘুড়ি খুঁজতে বের হচ্ছে। আমি সেই সময় গল্পের জন্যে মরিয়া। তাই অরিত্রকে মেল করলাম। সঙ্গে যেতে চাই। নানা ভঙ্গিমায় নিজের ছবি দুমদাম (সপ্তায় অন্তত গোটা দশেক) ফেসবুকে পোস্ট করে বলে ভেবেছিলাম লোকটা আমার মতোই অবিবেচক নার্সিসিস্ট। কিন্তু মেলের উত্তরে বুঝলাম, সে অকৃতজ্ঞও বটে। এতদিন ধরে লাগাতার তার ছবি লাইক করার এই প্রত্যুত্তর?

 

প্রিয় রোহণ,

ঘুড়ির খোঁজে বের হচ্ছি। তুমি তো জানোই আজকাল ঘুড়ি কী ব্যাপক হারে বিরল হয়ে আসছে। একটা প্রাণালো রঙিন ঘুড়ির অনুসন্ধানে যে ঝুঁকি তা-ও তোমার অজানা নয়। যদি ফিরে আসতে পারি, সে গল্প তোমাকেই দেব কথা দিলাম। কিন্তু এই অভিযানে তোমায় সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

শুভেচ্ছা জেনো।

অরিত্র

 

শেষ লাইনটা পড়ে গা পিত্তি জ্বলে গেল। আমি যেন লঙস্কার্ট পরা পোপাইয়ের বৌ জামার হাতা টেনে ধরে আছি – “আমাকেও নিয়ে চলো।”

অরিত্রকে লিখলাম – “ঘুড়ি খোঁজার গল্প তো তুমি ফিরে এসে আমাকে শোনাবেই। কিন্তু এই বিপদসঙ্কুল অনুসন্ধানের ছবি কে নেবে? সবসময় কি তুমি নিজে ঠিকঠাক জায়গায় ক্যামেরা বসিয়ে নিজের ছবি নেওয়ার সুযোগ পাবে?”

আমি সফো, আমি সম্পাদক, আমি প্রকাশক – তাই আঙুল বাঁকিয়েই কর্ম হাসিল করতে হয়। ঠিক হল, সামনের মঙ্গলবার বের হচ্ছি। বসকে SMS পাঠালাম – “কেস জন্ডিস। ডাক্তার দু-মাস বিছানায় থাকতে বলেছে। একা।” ইচ্ছা করে দু-চারটে বানান ভুল রাখলাম, যাতে বোঝা যায় আমি মরণাপন্ন।

 

মঙ্গলবার ভোর পাঁচটায় হাজির হলাম ধর্মতলায়। অরিত্র তখনও এসে পৌঁছায়নি। ওদিকে কাঁথির বাস পাঁচটা পনেরোয়। চিন্তিত হব কিনা ভাবছি, অরিত্র এসে হাজির। কপালের ডান পাশে একটা ব্যান্ড-এড লাগানো। মাথার চুল এলোমেলো। একটা জিন্সের ওপর লাল-সাদা চেকশার্ট চাপানো। পায়ে স্পোর্ট শু। কাঁধে বোঁচকা। বাসে উঠে জিজ্ঞাসা করলাম – “কপালে ওটা কী?” অভিষেক বচ্চনের স্টাইলে আমার দিকে তেরছা তাকিয়ে অরিত্র জবাব দিল – “ওটাকে ব্যান্ড এড বলে। কেটে গেলে-টেলে লাগায়।” কথা না বাড়িয়ে আমি ক্যামেরাটা খাপ থেকে বের করলাম – “এদিকে তাকাও দেখি একবার।” ক্যামেরার প্রায়-অনুচ্চারিত ‘ঝ্যাকাস’ শব্দে বাবুর মুখের রেখাগুলো একটু সহজ হল।

এই ভোরেও বাস প্রায় ভর্তি। একটা বাদামওয়ালা হাজির। তাকে ইশারায় কাছে ডেকে পকেট থেকে পয়সা বের করতে করতে অরিত্র বেশ রোমহর্ষক গলায় ব্যান্ড এডের ইতিহাস বর্ণনা করল।

“ঘুম থেকে উঠে কলতলায় দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছি। তিনতলার ওপর থেকে আমার বাড়িওয়ালা দত্তবাবুদের এসিটা ধড়াস করে পড়ল। তার সাথে কী সব কাঠের ফ্রেম-ট্রেমও খসে পড়েছিল। তার একটার খোঁচাতে কপালের পাশটা কেটে গেল। আর একটু এদিক-ওদিক হলেই…” দুটো বাদাম মুখে ফেলে ভুরু নাচাল সে। বিপজ্জনক ঘটনা সন্দেহ নেই। তাই আমি আর একটু খোঁচালাম – “দত্তবাবুর মেয়ে কত বড়?” অরিত্র জানালার কাচটা একটু টেনে দিতে দিতে বলল – “এই তো ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে।” আমি একেবারে শার্লক হোমস – “ব্যান্ড এডটাও কি সেই লাগিয়ে দিয়ে গেল?” সামান্য বিস্ময়ের সাথে অরিত্র ঘাড় নাড়ল – “কী করে বুঝলে?” এলিমেন্টারি ওয়াটসান। শেষ দু-তিনটে বাদাম মুখে ফেলে প্যাকেটটা কোথায় ফেলা যায় দেখতে দেখতে আমি উত্তর দিলাম – “ওপর থেকে এসি পড়েছে, সেই শব্দে ওই ভোররাতেও দত্তবাবু, তাঁর গিন্নি হৈ-হৈ করে উঠে পড়েছেন। তাঁদের মেয়ে বুঁচকিও উঠে হাই তুলতে তুলতে ওপরের বারান্দা থেকে দেখল এসির পাশে কপালে হাত চেপে তুমি দাঁড়িয়ে। এরপর তোমার কাতর অনুরোধ হোক বা বুঁচকির মানবিকতা, তোমার কপালে ব্যান্ড এড চিপকে গেল।” অরিত্র রুমালে মুখ মুছতে মুছতে বলল – “ব্যাপারটা তেমন নয়। আমি ডেটল খুঁজতে গিয়ে ব্যান্ড এড পেলাম আর কী।”

আমি একটু গম্ভীর স্বরে উত্তর দিলাম – “ব্যাপার যা-ই হোক না কেন। বাড়িওয়ালার মেয়ের থেকে ব্যান্ড এড, ডেটল এইসব চাইতে গেলে মাথায় এসি পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। বিশেষত বুঁচকি যদি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।” অরিত্র একটু তেরিয়া গলায় প্রতিবাদ করল – “সেরকম কোনও চান্সই নেই এখানে। আর দত্তবাবুর মেয়ের নাম বুঁচকি নয়। বুঁচকি একটা অতিপচা নাম। শুনলেই নাকে সিকনিওয়ালা মেয়ের কথা মনে পড়ে।”

“আচ্ছা চলো। মানা গেল বুঁচকির সঙ্গে তোমার তেমন কোনও ব্যাপার নেই। বা বুঁচকির নাম বুঁচকি নয়।” গলা একটু নরম করলাম – “কিন্তু তোমার কি মনে হয় না, আকাশ থেকে এসি মেশিন তোমার ঘাড়ে পড়ার পেছনে দত্তবাবুর হাত থাকতে পারে? কারণ নিজের কাজ করতে করতে বোর হয়ে গিয়ে এই অফ সিজনে একটা এয়ার কন্ডিশনার আত্মহত্যা করতে ঝাঁপ দিল, এমনটা গপ্পো কাহিনিতেও সম্ভব নয়।” বাদাম ব্রেকফাস্টের পর অরিত্র বোধহয় ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাসের সিটে আরাম করে হেলান দিয়ে বন্ধ চোখে বলল – “তোমার গল্পে এরম জিনিস তো আকছার দেখা যায়। সফো বাঘ নিয়ে ঘুরছে। আর একটা লোক পিঠে ডানা লাগিয়ে উড়ছে। কার আবার থেকে থেকে ভূমিকম্প হচ্ছে মনে হয়। তা এই এসি মেশিনের আত্মহত্যা নিয়ে একটা গপ্পো লিখে দাও।” খোঁচাটা গিলে নিয়ে আমিও নাছোড়বান্দা – “হত্যার পরিকল্পনা হয়তো নয়। কিন্তু এমনও হতে পারে ভোরবেলা উঠে দত্তবাবু তার গিন্নির সাথে ইয়ে করছিলেন। খাটের মাথার দিকে উইন্ডো এসিটা বসানো ছিল। দত্তবাবুর নড়াচড়ায় অস্থির খাটের বেমক্কা একটা ধাক্কা খেয়ে সেটা ফ্রেম ছেড়ে সোজা নিচে।”

অরিত্র একইরকম গলায় উত্তর দিল – “যে লোকটার মেয়ে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে, রাত সাড়ে তিনটের সময় তার মনে এমন জোশ জাগল যে বিছানার ধাক্কায় একটা একমণ ওজনের এসি উড়ে গেল। সারা কলকাতা কি আজকাল মনোহর আইচে গিজগিজ করছে নাকি?” আমি দমে গিয়ে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিলাম দেখে অরিত্র ফুট কাটল – “তবে একটা কথা মেনে নিলাম। ডমরুধরের পর তুমিই।”

 

প্রচ্ছদ – সুমিত রায়

(Visited 217 times, 1 visits today)

Additional information

Author

রোহণ কুদ্দুস

Cover

সুমিত রায়

Publisher

সৃষ্টিসুখ প্রিন্ট

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “কাউয়াম্যান প্যারাডক্স”

Your email address will not be published. Required fields are marked *