চারটি কবিতা
রাজর্ষি দে
অপেক্ষার বসন্ত নেই
অপেক্ষার বসন্ত নেই
এ শহরেও বসন্ত আসে না বহুদিন হল
পুড়ে যাওয়া রাজপথ আর ছাইচাপা হলুদ পাতা
মাঝরাতে চার হাত মিললে
হিসেব শুরু হয়
১-এ ১-এ ২, ২-এ ২য়-এ ৪
৮-এর ঘরে ডিপোজিট আর
১০-এর ঘরে ইএমআই
রতিস্নান সারা হলে
ক্লান্ত শরীর জানালা দিয়ে
হলুদ মাখতে বেরোয়
শহরের অলিতে গলিতে যে লাশগুলো সকালে পড়ে থেকে
তাদের ময়নাতদন্ত নেই
পোড়াবার অপেক্ষা নেই
তবে
মোড়ের নেড়িরা ঠিকই চিনে রাখে
রোজ রাতে কারা তাদের চাঁদ খেয়ে যায়
ফাঁকি দিয়ে
কবিতার জল
কবিতা দীর্ঘ হয়ে
পাকদণ্ডি বেয়ে নেমে চলে
আঁচলের ভাজে ভাজে
খেলে চলে পিপাসুর ক্রীড়া
ফোঁটা ফোঁটা বাসন্তী রং ধরলে
কবিতায় নাব্যতা আসে
নব্য আনাড়ি শুধু পাড় চেনে
প্রাণপণে ভেসে থাকা শেষ অব্দি
শুধু বুড়ো কাপ্তান জানে জল মাপা
কতটা ঢাললে ঠিক
জল ডুবে যাবে
এই খেলা সারাবেলা
বিকেল গড়ালে
মাপা হয় ফর্মার গুণিতক
এক দুই চার
বাণিজ্যে মিশে গেলেও কবিতার জল
পাড়ভাঙা আদরের মাটি মনে রাখে
তুকারাম
শীত এলে ন্যাপথলিনের ঘ্রাণ মনে পড়ে
এ ছাড়া আমার শীত নেই
“হলুদ পাতা ঝরে যায়”—
এসব লিখতে হয় তাই লিখি
আমার শহরে পাতা দেখা দুষ্কর
শুধু পাতা শোঁকা যায় সহজেই
সেই গন্ধে গন্ধে পথ ফিরি
এখনও স্লোগানের দিন শেষ হয়নি
বিছানা থেকে নামলেই তিয়ানমেন স্কোয়ার
ট্যাংকের পিঠে চেপে মঞ্চ শিকার খুঁজতে বেরোয়
কিন্তু বলা কি যায়
কোন নদীর বুকে কবিতা পুঁতে রেখেছেন তুকারাম?
লাশের গন্ধ ছোটে না
মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে
কাচের জানালা ঘরবাড়ি
নিঃশব্দ আশ্রয়
এর বেশি কী পাওয়ার ছিল যেন?
ভুলে যাওয়া সুরের মতন ছুপা রোদ
টুকি দিয়ে যায়
কর্কশ গলবাদ্য আর দাঁতেদের ক্যাকোফোনি
কতদিন এসময় হাসির শব্দ শোনেনি?
ওরা কিছু বলে যায়
ঠোঁট নড়ে
কালকের মাংসের কুচি
লেগে থাকে প্রতি বাক্যের শেষে
এসির শীতল হাওয়া হিমবাণী নিয়ে আসে
ভাবি কত নীচে নেমে গেলে পারা
লাশের গন্ধ ছোটে না?