‘কালো যদি মন্দ তবে, কেশ পাকিলে কান্দ কেনে?’– এ কলি মনে পড়ে যায় যখন ভালোবাসা ও তার যন্ত্রণার কথা উঠে আসে। সত্যিই তো যে ভালোবাসায় মিশে আছে এত গোপন রক্তক্ষরণ, যে সম্পর্কের পরতে দূরত্ব জমলে তা অতিক্রমের অঙ্ক আর মেলে না, সেই ভালোবাসার জন্যই তবে কেন ছুটে ছুটে মরে মানুষ তথা সভ্যতা? এর উত্তর মেলে না। মেলে না বলেই ভালোবাসাকে আজও ভালোবাসা যায়। মনে পড়ে বিনয় মজুমদারকে, তাঁর সেই ঐশ্বরিক পংক্তির দর্শনে–
তবু সব বৃক্ষ আর পুষ্পকুঞ্জ যে যার ভূমিতে দূরে দূরে
চিরকাল থেকে ভাবে মিলনের শ্বাসরোধী কথা।
ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নভেলা ‘আবহমান’-এর অন্তে আমাদের এনে হাজির করেন এই উপলব্ধিতেই। কাহিনি হিসেবে তিনি বেছে নেন আমাদেরই খুব চেনা এক মা ও মেয়েকে। হয়তো পাশের ফ্ল্যাটে বেল বাজালেই তাঁদের দেখা যাবে। যে পুরুষ এই দুই নারীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন জীবনানন্দ, সেই পুরুষ আজ তাঁদের দুজনের থেকেই ঐহিক ও মানসিক দূরত্বে অবস্থান করছেন। একজনের কাছে তিনি স্বামী, অন্যজনের কাছে বাবা। এই দূরত্ব কি মিটতে পারে? সম্পর্কের স্থানাঙ্ক স্কেলের হিসেবে মেলে না বলেই জীবন এত বৈচিত্রময়। ফলে ঘটনা পরম্পরায় আমরা দেখি এই মা ও মেয়ের মধ্যেও এক অনতিক্রম্য দূরত্ব মাথাচাড়া দিচ্ছে। আবার ওই পুরুষের মা, অর্থাৎ একজনের প্রাক্তন শাশুড়ি, অন্যজনের ঠাকুমা– তিনি বহু দূরে প্রায় ভূমিকাহীন হয়ে থেকেও কী করে যেন নির্মাণ করছেন সম্পর্কের কোলাজ। আসলে কেউই কিছু করছে না। করছে ভালোবাসার কাছে মানুষের আত্মসমপর্ণ করার আবহমান ইচ্ছা।
Be the first to review “আবহমান”