Warning: The magic method Vc_Manager::__wakeup() must have public visibility in /home/sristisukh29/public_html/ss_wp/wp-content/plugins/js_composer/include/classes/core/class-vc-manager.php on line 203

Warning: Undefined array key "msg" in /home/sristisukh29/public_html/ss_wp/wp-content/plugins/Woocommerce302_PumCP/index.php on line 24

Warning: The magic method Automattic\WooCommerce\RestApi\Utilities\SingletonTrait::__wakeup() must have public visibility in /home/sristisukh29/public_html/ss_wp/wp-content/plugins/woocommerce/packages/woocommerce-rest-api/src/Utilities/SingletonTrait.php on line 48

Warning: The magic method Automattic\WooCommerce\Admin\FeaturePlugin::__wakeup() must have public visibility in /home/sristisukh29/public_html/ss_wp/wp-content/plugins/woocommerce/packages/woocommerce-admin/src/FeaturePlugin.php on line 312

Warning: Constant WP_MEMORY_LIMIT already defined in /home/sristisukh29/public_html/ss_wp/wp-config.php on line 91
সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়-এর সেভেন রাউন্ড – সৃষ্টিসুখ

Blog

সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়-এর সেভেন রাউন্ড

সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায় গল্প লিখছেন গত কয়েক বছর ধরে। মূলত ইন্টারনেটকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে তাঁর নিজস্ব পাঠকবৃত্ত। সম্প্রতি সৃষ্টিসুখ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গল্প সংকলন ‘সুয়োকথা দুয়োকথা’। সৃষ্টিসুখের পক্ষ থেকে রোহণ কুদ্দুসের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এল সঙ্গীতার সাহিত্যভাবনা এবং পরবর্তী বই সম্পর্কে কিছু তথ্য।

 

রোহণ — আমি তোমার লেখা পড়েছি একেবারে পাণ্ডুলিপি হিসাবে। অনেক ম্যাচিওরড লেখা সেগুলো। কিন্তু সবারই একটা হাতমকশোর ব্যাপার থাকে। সেই গল্পটা জানি না। তোমার লেখালেখির শুরুটা নিয়ে বলো।

সঙ্গীতা — শুরু বলতে স্কুলে দেওয়ালপত্রিকায় ছোট দু-চারটে কবিতা লিখে নিজে নিজেই খুশি হওয়া। তারপর আর কখনওই কিছু লিখিনি। কলেজ শেষ করে চাকরিজীবনের শুরুতে মিনিয়াপলিসে গিয়ে দেখি সেখানে অনেক আগে প্রতি পুজোয় একটা ম্যাগাজিন বেরোনোর চল ছিল, নাম ‘সন্নিকট’, যেটা লেখা ও উদ্যোগের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি অতি উৎসাহে সেই ম্যাগাজিনের দায়িত্ব নিয়ে লেখা যোগাড় করার পাশাপাশি নিজেই লিখতে শুরু করি এবং তাতে বাৎসরিক একটা করে গল্প লিখতে থাকি। এই সময়েই বাংলালাইভ-এর খোঁজ পাই। সেখানে মজলিশ এবং মাসিক পত্রিকা বিভাগে লেখা নেওয়া হত। সেই ছিল আমার হাতমকশোর স্লেট। মজলিশে ছোট গল্প বা প্রাসঙ্গিক সামাজিক ঘটনা নিয়ে লিখতে লিখতে বেশ উৎসাহ পাই এবং সাহস করে ওদের মাসিক পত্রিকায় লেখা দিই একটি। সেই লেখাটি ভীষণভাবে চর্চিত হয়েছিল সাইটের ‘মতামত’ বিভাগে। এরপর ওদের শারদীয় সংখ্যাতেও লিখেছি দু-একবার। তবে মজলিশ বিভাগে নিয়মিত পাঠকদের পজিটিভ এবং নেগেটিভ ফিডব্যাকের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে আমার হাতমকশোর পাঠ।

সরাসরি পাঠকের প্রতিক্রিয়া পড়তে পড়তেই একবার সাহস করে দেশ পত্রিকার অফিসে গিয়ে কবিতা জমা করে আসি এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছুদিন পরে কবিতা দপ্তর থেকে চিঠি আসে আমার পাঠানো চারটি কবিতা থেকে দুটি তাঁদের পছন্দ হয়েছে। এই সময়েই ২০০৭-এ আনন্দবাজার রবিবাসরীয় বিভাগ একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যাতে সীমিত শব্দসংখ্যার মধ্যে (সংখ্যাটা মনে নেই এখন) গল্প লিখে পাঠাতে হবে। গল্পের প্রথম লাইনটি ওরা লিখে দিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল মনোনীত গল্পটি রবিবাসরীয়র পাতায় ছাপা হবে। আমি আবার অতি দুঃসাহস দেখিয়ে একখানা গল্প লিখে পাঠাই এবং আবারও আমাকে অবাক করে গল্পটি রবিবাসরীয়তে ছাপা হয়।

এরপর আমি মাঝেমাঝেই লিখতে থাকি। কখনও বড় পত্রিকায় কখনও লিটল ম্যাগাজিনে। তবে একটা কথা মানতেই হবে লেখার অভ্যেসের ব্যাপারে প্রথমে বাংলালাইভ আর পরে ফেসবুক আমাকে খুব বড় প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে। হাতমকশো এখনও চলছে, তবে তা মূলত ফেসবুক এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।

 

রোহণ — যে কোনও লেখকেরই লেখালেখির মূলে থাকে তাঁর পড়াশোনা। তোমার লেখালেখির শুরুতে পড়াশোনাটা কেমন ছিল? সেটা কীভাবে তোমার লেখাকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে হয়?

সঙ্গীতা — লেখালেখির শুরুতে পড়াশুনো কিচ্ছুই ছিল না আলাদা করে। আর যখন লিখতে ভালোবাসতে শুরু করলাম, তখন হাতের কাছে পড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি পেতাম খবরের কাগজ। সেটা খুব ভালোবেসে পড়তাম, কারণ মূলত যে বাঙালি সমাজের গল্প লিখতাম, তাঁদের থেকে অনেক দূরে বিদেশে এক্কেবারে অন্যরকম মানুষজনের সাথেই থাকতাম বেশি। অতএব খবরের কাগজে পড়া সাম্প্রতিক ঘটনা আমাকে লেখার বিষয় জোগাত কিছুটা হলেও।
পরে আমি বুঝতে পারি যে, লিখতে গেলে পড়তে থাকাটা জরুরি। পড়তে শুরু করি যা পাই তাই-ই। এমনকী ম্যাপও পড়তাম। দেখেছিলাম ম্যাপে একটা জায়গার নাম পড়ে আমার বেশ ভাবতে ভালো লাগত, সেসব জায়গার মানুষের জীবনযাত্রা, পোশাক, তারা দুধ থেকে ছানা বানায় নাকি চিজ, মাংস কীভাবে রাঁধে, পোড়ায় না সেদ্ধ করে। থ্যাঙ্কস টু গুগল, নিজের ভাবনার সাথে কতটা মেলে সেটা অনায়াসে খুঁজে বারও করতাম। অতএব একটা জায়গার নাম থেকে উইকিতে সেটাকে খুঁজে তার লোকজন, জীবনযাত্রা অবধি গিয়ে হয়তো পরের সার্চটা দিলাম ‘ফেমাস মানুষ অফ অমুক প্লেস’… এভাবে পড়েই যেতাম। এদিকে পাশাপাশি পড়তাম বাংলা গল্পের বই। বুঝতে চেষ্টা করতাম কোন ধরনের লেখা আমাকে টেনে রাখে। এটাও জরুরি, জানো? মানে কেমন লেখা পড়তে ভালো লাগে আর কেমন লেখা বেশিক্ষণ টেনে রাখে না, সেটা বুঝে নিজের লেখাতেও সেটা অ্যাপ্লাই করা যায় বলে মনে হয় আমার।
আর একটা কথা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও বলি, আমার লেখাকে প্রভাবিত করে ভালো ইলাস্ট্রেশন। মানে আমার লেখার ইলাস্ট্রেশন নয়। ধরো, আমি পুরনো ইন্দ্রজাল কমিক্স বা দেব সাহিত্য কুটিরের কোনও বই খুলে কোনও ছবির দিকে তাকিয়ে আছি অনেক সময়। এমনকী চাঁদমামা বা ছোটদের যে কোনও বইয়ের ইলাস্ট্রেশনই অনেকক্ষণ দেখি বসে বসে। কোনও ভালো ইলাস্ট্রেশন মাথার মধ্যে নাড়াচাড়া করতে করতে অনেক লেখা উঠে এসেছে আমার। একটা ভাঙা দেওয়ালের পাশে একটা পাগড়ি পরা লোক উঁকি দিচ্ছে আর ঝুড়ি মাথায় মহারাস্ট্রিয়ান স্টাইলে শাড়ি পরা এক ফেরিওয়ালি হেঁটে যাচ্ছে পিছন ফিরে… এমন একটা ইলাস্ট্রেশন যে গল্পেরই হোক না কেন, আর একটা গল্প জন্ম দেয় মাথার মধ্যে। এই সবের প্রভাবই আমার লেখার মধ্যে আছে মনে হয় আমার।

 

রোহণ — তুমি এর আগে বলেছ ফেসবুক তোমার জন্যে একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। এটা কি জাস্ট তোমার লেখালেখি বা বইয়ের প্রচারের জন্যে? নাকি এখানেও ভাবনার আদানপ্রদান বা ইন্টার‍্যাকশান হয়ে চলেছে? সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এখন সাহিত্যকে কতটা প্রভাবিত করছে বলে তোমার মনে হয়?

সঙ্গীতা — ভাবনার আদানপ্রদান কিছুটা থাকে কোনও সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে লিখলে। কোনও ঘটনাকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কে কীভাবে দেখছে তা জানা যায়। যেমন ধরো, আমি এখনকার টিভি সিরিয়ালে বাচ্চাদের চরিত্রায়নের সমালোচনা করে লিখলাম এবং দেখলাম আমি একা নই, এ নিয়ে প্রচুর মানুষ চিন্তিত এবং ক্ষুব্ধ। লেখার নিচের মন্তব্য, শেয়ার ইত্যাদি দেখে আমি আন্দাজ করতে পারি সাধারণ মানুষ কী চায়, কী চায় না। কিন্তু সেটা আমাকে লেখার ব্যাপারে প্রভাবিত করবে না, কারণ আমি টিভি সিরিয়ালের চিত্রনাট্য লিখি না। লেখালেখির জন্য ফেসবুক আমার প্ল্যাটফর্ম অন্যভাবে। আমি লিখছি। কখনও পরিচিত ছন্দের বা লেখার ধরনের বাইরে গিয়ে লিখছি, দেখছি কতজন পড়ছে, কেমন মন্তব্য করছে… শিখছি সেগুলো থেকেও। যেমন একবার ছোটদের একটি পত্রিকার জন্য গল্প লিখে আমি গল্পের নাম দিয়েছিলাম ‘দাদা হওয়া’। পত্রিকাটিতে লেখাটা ছাপা হয়েছিল, প্রশংসিতও হয়েছিল। আমার টাইমলাইনে লেখাটি যখন দিই, তখনও অনেকেই খুব ভালো ভালো মন্তব্য করেন। শুধু একজন লিখেছিলেন, গল্পের নামেই তো গল্পটা বলে দিয়েছ। এরপর আর গল্পটা না পড়লেও জানা যায় যে, কী আছে গল্পে। কথাটা কিন্তু ঠিক। ছোটদের জন্য লিখেছি, তাই অত মাথাতে আসেনি যে, গল্পের নামকরণেই মূল গল্পটা দেওয়া উচিত না। পরের বার থেকে গল্প সে ছোটদেরই হোক বা বড়দের, নামকরণ ভেবেচিন্তে করি।
তাছাড়া সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যথেচ্ছ লেখার স্বাধীনতা আছে। ফলে, হয়তো আমি এমনিই লিখতে বসলাম এবং দেখলাম একটা ছোট অণুগল্প লিখেও ফেললাম। লোকে পড়ল, মতামত দিল, আমিও উৎসাহ পেলাম আরও অণুগল্প লেখার। পরীক্ষামূলক লেখা নিজের ইচ্ছেমত ফর্মে লেখার স্বাধীনতাও সেখানে আছে ভালোমত। ভালো লেখার খিদে জন্মানোর ব্যাপারে পাঠকের মতামতের একটা বিরাট ভূমিকা আছে, যা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক দেয়। আমাকে দিয়েছে। লিখতে ভালোবাসি, কেউ পড়ছে জানলে আরও ভালো লাগে, ভালো লাগে তাৎক্ষণিক ফিডব্যাকও। যথেচ্ছ লেখার এবং সে লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অবাধ স্বাধীনতা সোশ্যাল নেটওয়ার্কই সবচেয়ে বেশি দেয়।
আর হ্যাঁ, বইয়ের প্রচারের জন্যও খুব কার্যকরী। আমি যত বড় পত্রিকাতেই লিখি না কেন, ক’টা মানুষ আমার লেখা পড়ছেন ভালোবেসে আমি কখনই জানতাম না এবং আমার বই বেরোলেও তা কেউ কিনতে চান কিনা এবং কেউ আদৌ কিনবেন কিনা তাও আমার অজানাই থাকত। আমি যখন ফেসবুকে আমার বই বেরোনোর কথা জানালাম, তখন আশাতীত আগ্রহ দেখেছিলাম পাঠকের। আমার মনে হয় আমার বই যে পাঠকরা নিজেরাই খুঁজে কিনেছে, তার কারণ তারা বইয়ের নাম, ধাম, ঠিকানা সবই ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছিল ঠিকমতো।
তবে এটাও ঠিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যারা মতামত দেন, অনেকদিন ধরে লিখতে লিখতে তাঁদের সাথে লেখকের একটা পরিচিতি গড়ে ওঠে। তাই কিছুদিন লেখার পর থেকে লেখকের নিজের লেখা ইভ্যালুয়েট  করতে শেখাটা খুব জরুরি। কারণ অনেক সময়েই ফিডব্যাকগুলো সাহিত্যের বিচারে আসে না, আসে পরিচিতির কারণে। লাইক বা কমেন্ট দিয়ে জনপ্রিয়তার মাপ বোঝা গেলেও নিজের লেখার সাহিত্যমূল্য বুঝতে গেলে  শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার ফিডব্যাকের ওপর নির্ভর করাটা আমার ঠিক মনে হয় না। লেখার কারণে লেখাটি আদৃত, না লেখকের কারণে, সেটা বোঝার মতো ম্যাচিওরিটি না থাকলে সোশ্যাল মিডিয়াতে পাওয়া মন্তব্য একজন লেখকের লেখার ক্ষমতা সীমিত গণ্ডিতে বেঁধে ফেলতেও পারে।  অতএব ভালো এবং মন্দ দুদিকেই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব বেশ ভালোমতই থাকে আমার মতে।

 

রোহণ — পাঠকের মতামতকে একজন লেখক গুরুত্ব দেবেন সেটা স্বাভাবিক। ফেসবুক সেটার একটা বড় মাধ্যম বোঝা গেল। কিন্তু কোনও লেখা লিখতে শুরু করে পাঠকের মতামতের ব্যাপারটা কি তোমার মাথায় আসে? ধরো, ‘চন্দ্রলেখার প্রেম’ গল্পটা। একটা ব্যাঙ একজন মানুষকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা তো একেবারেই ফ্যান্টাসি, তোমার অন্য লেখার থেকে অনেকটাই আলাদা। লেখার সময় মনে হয়নি, তোমার অন্য লেখার থেকে একেবারে অন্যরকম এটা, পাঠকের হয়তো ভালো লাগতে না-ও পারে?

সঙ্গীতা — না, লেখার সময় পাঠকের মতামতটা নিয়ে ভাবি না। যা যেভাবে মাথায় আসে, তাই-ই লিখি। নিজের ফ্যান্টাসিকে কাগজে ফুটিয়ে তোলার সময় আমার ভাবনা আর কলম ছাড়া আর কিছুই  থাকে না মাথায়। স্বার্থপরের মতো নিজের ভালোলাগাটাকেই প্রাধান্য দিই তখন। ‘চন্দ্রলেখার প্রেম’ লিখতে বসে আমি নিজেও জানতাম না লেখাটা কীভাবে এগোবে। লিখেছিও অনেকদিন ধরে। ওটা একটা চ্যালেঞ্জের মতো ছিল আমার কাছে। আমি কীভাবে ভাবতে পারি, কতদূর অবধি ফ্যান্টাসির মধ্যে গল্প বুনতে পারি, সেটা আমি জানতাম না। আজও যে জানি তা নয়। তবে ওই গল্পটা লিখতে বসে বুঝেছিলাম আমাদের ভাবনার পরিধি আমাদের কাছেও অজানা। তাই ভাবনার পায়ে কখনও শিকল পরাতে নেই। বরং তাকে লাগাম ছেড়ে ছুটতে দাও আর নিজেও ছোটো তার সাথে। যদিও লেখা শেষ করেই বুঝেছিলাম, কোনও ম্যাগাজিনের সম্পাদক এই গল্পটা ছাপবেন না। ছোটদের ম্যাগাজিনের সম্পাদকের কাছে ওটা ‘বড়দের রূপকথা’ আর বাকি সব ম্যাগাজিনের জন্য ওটা ‘ম্যাগের বাকি গল্পের সাথে যায় না’। তাও লিখেছি। কিচ্ছু না ভেবে শুধু চন্দ্রলেখা নামে একটা ব্যাঙকে ভালোবেসে লিখেছি, কারণ লেখা প্রথমে লেখকের, তারপর পাঠকের। পাঠকের মতামত ভীষণ মূল্যবান। লিখতে পারছি কিনা, লেখার ধরন পাঠককে টানছে কিনা, এগুলো বোঝা যায় মতামত থেকে। পরের লেখা এডিট করতে বসে সেই কথাগুলো মাথায় রাখলে লেখাটা যথাযথ সাজানো যায়। কিন্তু বিষয়বস্তু নির্বাচনে বা লেখার গতিপ্রকৃতির দিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ওই মতামতটা গৌণ।
আমার মতে লিখতে বসে মাথায় কিছু না রাখাই ভালো। কারণ আগে লেখা, তারপর মতামত। আগে মতামত, তারপর লেখা নয়।

 

রোহণ — দারুণ ভাবনা এটা। সত্যি বলতে কী, কিছু কিছু পাণ্ডুলিপি পড়তে পড়তে মনে হয়, লেখক আগে থেকেই ঠিক করে নিয়েছেন একটা গল্প বা কবিতা কোথায় ছাপতে দেবেন সেটা ভেবে লিখছেন। একজন পাঠক হিসাবে সামান্য হলেও নিজেকে বঞ্চিত মনে হয় সেই সময়। যাই হোক, পরের প্রশ্নে আসি। ‘সুয়োকথা দুয়োকথা’ তোমার প্রথম বই। বইমেলায় তুমি গিয়েছিলে বইপ্রকাশের পর। তোমার পাঠকদের সঙ্গেও দেখা হয়েছে সে সময়। কেমন অভিজ্ঞতা হল?

সঙ্গীতা — অবিশ্বাস্য লাগছিল প্রথমে। বইমেলায় স্টলে সাজানো একরাশ বই, তাতে শুধু আমার লেখা কিছু গল্প, এমন কিছু কখনও কল্পনাই করিনি আমি। অনেকে এসেছেন, আমাকে খুঁজে বলেছেন বই কিনেছি, সই চাই। হাত কাঁপছিল তখন। কারণ এমন কোনও মুহূর্ত আমার কল্পনায় ছিল না কখনও। অনেকের সাথে সামনাসামনি আলাপ হয়েছে যারা, ফেসবুকে বা অন্য পত্রিকায় আমার লেখা পড়েছেন আগে এবং আরও পড়তে চেয়েছেন। ফেসবুকে বইয়ের খবর পেয়ে কিনতে এসেছেন। নিজের শখে লিখতে বসে এত মানুষের মনে পৌঁছতে পারব, এটা ভাবার কথাও ভাবিনি আমি কোনওদিন। নিজের লেখা বই অন্যের হাতে দেখার যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। কেউ অভিনন্দন জানিয়েছেন, কেউ বলেছেন এই তো শুরু, আরও অনেক দূর যেতে হবে, কেউ বলেছেন পড়ে জানাব কেমন লাগল। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল এও কি সত্যি!

অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটা ঘটনা বলি… বছরকয়েক আগে একবার শারদীয় আনন্দবাজারে আমার কবিতা বেরিয়েছিল। তো সে পত্রিকা বেরিয়েছে বোধ হয় জুলাই বা অগস্টে। মাসখানেকের মধ্যে সে আনন্দ থিতিয়ে গেছে মনে। ওই সময়ে আমি একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। পাশেই বেশ বড় একটা ম্যাগাজিনের দোকান। হঠাৎ ঝেঁপে বৃষ্টি আসতেই আমি দৌড়ে পাশের শেডের নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। এদিকে ম্যাগাজিন স্টলের ভদ্রলোক তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে প্লাস্টিক দিয়ে একরাশ শারদীয় আনন্দবাজারকে ঢেকে দিচ্ছেন। বইগুলোর ভেতরে সবার সাথে সাথে আমার লেখাগুলোকেও বৃষ্টি থেকে বাঁচিয়েছিলেন বলেই হয়তো ওই মুহূর্তে ওই দোকানদার ভদ্রলোককে আমার বড় নিজের মানুষ মনে হয়েছিল। বইমেলায় সৃষ্টিসুখের স্টলে বসে বসে আমার আবার ঠিক সেই অনুভূতিটাই শ’গুণ বেশি হয়ে ফিরে এসেছিল। পাঠক, লেখক, সম্পাদক এবং স্টলে আসা প্রতিটি মানুষকে আমার খুব আপন মনে হচ্ছিল। তারা সবাই যে সুয়োকথা দুয়োকথা কিনেছেন বা পড়েছেন, তা  নয়। তবু আমার বইয়ের আশেপাশে থাকা সব্বাইকে আমার খুব ভালো লাগছিল শুধু কাছে থাকার কারণেই। সব মিলিয়ে এ এমন এক অভিজ্ঞতা যা আমি বারে বারে ফিরে পেতে চাই।

সঙ্গীতা এবং লেখক, বার্ড ফটোগ্রাফার রূপঙ্কর সরকার, কলকাতা বইমেলা ২০১৭

রোহণ — এখন কী লিখছ? কোনও নতুন পাণ্ডুলিপি কি তৈরি হচ্ছে?

সঙ্গীতা — হ্যাঁ, লিখছি। আমোদিনী লিখছি ধীরে সুস্থে । আর তাছাড়া বেশ কিছু অণুগল্প লিখেছি, যেগুলো ফেসবুকে বা অন্যান্য ম্যাগাজিনে দিয়েছি। আরও কিছু অণুগল্প লিখে একটা সংকলন করতে চাই। প্রতিটি গল্প একেবারে আলাদা ধরনের যেন হয়, সেটা মাথায় রাখতে ব্রেক নিয়ে নিয়ে লিখছি। তাছাড়া বেশ কিছু পত্রিকায় নিয়মিত এবং কোথাও অনিয়মিত গল্প লিখছি। যেমন জিলিপি, অন্যদেশ, বম্বে ডাক ইত্যাদি। কিছু ম্যাগাজিন বছরে এক বা দু’বার বেরোয়, বৈশাখী ও শারদীয়া। সেরকম কয়েকটায় লিখছি। লিরিক্যালের একটা গল্প সংকলনের জন্যও লিখছি। তবে মনোযোগের সিংহভাগ জুড়ে আছে আমোদিনী।

 

রোহণ — যদ্দূর জানি আমোদিনী একটা সিরিজ হিসাবে আগে প্রকাশ পেত ফেসবুক। আমোদিনী সম্পর্কে কিছু বলো প্লিজ।

সঙ্গীতা — হ্যাঁ, আমোদিনীর বেশ কিছু গল্প ফেসবুকে আমার পাতায় প্রকাশিত। পরে ফেসবুকেরই একটা কমিউনিটি তাদের মাসিক পত্রিকাতেও সিরিজটা ছাপতে শুরু করে। কিন্তু বারোটা গল্প প্রকাশের পর আমি পত্রিকাটিতে আমোদিনী দেওয়া বন্ধ করে দিই। কারন আমোদিনী যত জনপ্রিয় হয়েছে, তত আমি চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছি নিজেকে। আমোদিনীর প্রতিটি গল্প আলাদা ধরনের রাখতে চাই, তাই পত্রিকার ডিমান্ড আর ডেডলাইন মেনে লেখা সম্ভব হচ্ছিল না। ওই যে, নিজের জন্য লেখা… ওটা মাথায় রেখেই  অনেকদিন পর পর ভেবে চিন্তে একটা করে গল্প লিখছি। এখনও আমি প্রায়ই পাঠকের কাছ থেকে অনুরোধ পাই ‘আমোদিনীকে আনো’ বলে। সুয়োকথা দুয়োকথা বেরোনোর সময়ে অনেকেই বলেছেন ‘সে কী! আমোদিনী বেরোবে না বই হয়ে?’ বইমেলাতে বারবার শুনেছি পরেরবার আমোদিনী আসছে তো?

আসলে আমি আমার দিদাকে আর তাঁর বন্ধুদেরকে খুব কাছ থেকে দেখেছি অনেকদিন। পশ্চিমবঙ্গীয় হওয়ার সুবাদে দু-দুখানা আস্ত গ্রামে আমার যাতায়াতও খুব বেশি ছোট থেকেই। ওইসব অভিজ্ঞতাই আমোদিনীর কলমে লিখছি আমি। আমোদিনী আসলে একটা বড় ফুলের তোড়া, যাতে কোনও একধরনের ফুল একাধিক নেই।
আমোদিনীর চোখে দেখা  গ্রামের গল্প, আমোদের পূর্বজদের গল্প ইত্যাদি যেমন থাকবে বইতে। তেমনই আবার বিদেশের এয়ারপোর্টে দেখা কিছু ঘটনা বা কলকাতার বিলাসবহুল মলের কফিশপে বসে চারপাশের চরিত্রদের নিয়ে লেখা গল্পও থাকবে। থাকবে হঠাৎ মেঘলা দিনে ট্রেনে চড়ে যেতে যেতে অচেনা একটা স্টেশনে শুধু ছড়িয়ে থাকা রাধাচূড়ার টানে নেমে পড়ে সময় কাটানো গল্প আবার কর্পোরেশন স্কুলের এমন ছাত্রের গল্পও থাকবে, যার মা স্কুলের ঝাড়ুদারনি এবং আমোদিনীর বড় প্রিয় একজন মানুষ। দিদার স্বচক্ষে দেখা ভূতের গল্প, গ্রামতুতো দিদার ঠাকুরঘরে কৃষ্ণের পায়ের ছাপের গল্পর সাথে সাথেই নিজের মামার মৃত্যুদিনের অনুভূতি এবং হঠাৎ দেখা কোনও স্বপ্নের বিবরণ — সবই থাকবে পাশাপাশি। আমোদিনীতে কী কী থাকবে, তা বইটা শেষ না হওয়া অবধি আমিও জানি না সঠিক। তবে এটা জানি যে, আমোদিনী পাঠকের জন্য এমন এক উপহার, যা তাঁদের হাতে  তুলে দেওয়ার পরেও আমি অতৃপ্ত থাকব আরও কিছু দিতে পারতাম কিনা এই প্রশ্ন মনে নিয়ে।

 

রোহণ — আমাদের এতটা সময় দেওয়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ সঙ্গীতা। পাঠকদের মতো আমরাও অধীর অপেক্ষায় থাকব আমোদিনী-র বই হয়ে আসার অপেক্ষায়। আগাম শুভেচ্ছা রইল।

সঙ্গীতা — সবই বললাম। শুধু এটা বলা বাকি রয়ে গেছে যে, সৃষ্টিসুখের কাছে আমি ততটাই কৃতজ্ঞ, যতটা কৃতজ্ঞ আমি আমার প্রথম প্রাইমারি স্কুলটির কাছে। সৃষ্টিসুখ আমাকে যে সুযোগ দিয়েছে, সেটা না দিলে আমি আমোদিনীকে এত যত্নে বড় করার কথা ভাবতাম না। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা সৃষ্টিসুখ ও তার টিমের জন্য। কারণ লেখক ও পাঠককে মিলিয়ে দেওয়ার বাগানটি তাদেরই তৈরি।

9 Comments on “সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়-এর সেভেন রাউন্ড

  1. খুব ভাল লাগল চেনা সই কে নতুন করে চিনতে , রোহনের সঙ্গে যুগলবন্দী অনবদ্য !

    • সই এর সাক্ষাৎকার এ তার লেখা সব গল্প,কবিতার কথা এত সুন্দর সাবলীল ভাবে ব্যক্ত করা আমায় অভিভূত করেছে.

  2. সই সংগীতা। আগে ফেসবুকে এই নামটি দেখলেই তাড়াতাড়ি পুরো লেখাটি খুলে পড়তে শুরু করতাম।বেশি কিছু জানতাম না,খালি টের পেয়েছিলাম, এটি অনেকখানি ধারালো গ্রে সেলওয়ালা একটি মানুষের হাতের ছাপ।
    ক্রমশ আমোদিনীর সাথে আলাপ হল।মুগ্ধ হলাম সেই গল্পদের পড়ে।যখনি পড়ি ভাল লেখা পড়ার তৃপ্তিতে ভরে ওঠে ভেতরটা।
    হাতে পেলাম সুয়ো কথা দুয়ো কথা।
    ইদানীং প্রিয় গল্পবলিয়েদের নতুন লেখা পড়তে না পাওয়ার দু:খ অনেকখানি কমিয়ে দিল এ গল্পগুচ্ছ। প্রত্যেকটি আলাদা স্বাদ, আলাদা রঙ এবং বুদ্ধির ছটায় উজ্জ্বল।
    প্রিয় কলমের কাছে আর অনেক লেখা পাওয়ার আশা রাখি

    • ভালোবাসা তোমাকেও। এই আগ্রহ আর উৎসাহই আমাকে স্বপ্ন দেখায় সোনালী। খুব ভালো থেকো।

  3. এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপিত এবং বিশ্লেষণ …ভালো লাগলো সই—- সিক্তা দাশ

    • ভালো থেকো সিক্তা। ভালোবাসা ও ধন্যযোগ

  4. বইমেলায় সৃষ্টিসুখের স্টলেই তোমার সাথে দেখা। লেখালেখির মত অবিচ্ছিন্ন করে রেখেছো আমোদিনী। আরো সাফল্য আরো উজ্জ্বলতা কামনা করি।

    • ভালোবাসা নিও। আবার দেখা হওয়ার দিন এসে গেল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>