‘কুড়িয়ে বাড়িয়ে’ পড়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন সহস্রাংশু গুহ। লিখেছিলেন, ‘কৌশিক বাবুর লেখা হল অনেকটা গরম চপের মতো। গরম গরম ফুঁ দিয়ে খাবার মজাই আলাদা । তবে সব থেকে বেশি মজা হল এই যে গরম হয়তো অনন্তকাল থাকেনা এই চপ তবে বাসি কখনো হয়না । তাই স্বাদটা সবসময় প্রায় সমান ভাবেই পাওয়া যায়।
লেখকের লেখনীর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল ‘হোমসনামা ’ দিয়ে । তাতেই এমন মজে গেছি যে তারপর থেকে একদম পারলে কড়াই থেকে ছো মেরে গরম চপ খাচ্ছি তাড়িয়ে তাড়িয়ে । গেলো শনিবার সৃষ্টি সুখের সাহিত্য উৎসবে গিয়ে একদম ফ্রেশ ফার্স্ট কপিটা সংগ্রহ করেছিলাম ‘কুড়িয়ে বাড়িয়ে’র উপরি পাওনা ছিল লেখকের সাক্ষর । রবিবার থেকে পড়া শুরু করে আজ এই ঘন্টাখানেক আগে শেষ করলুম । সাধের লেখকের সাধের বই পড়ে বৈরাগী হয়ে তাই সদ্য সদ্য পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে বসেছি ।…
১) গবেষণা ধর্মী ৫০ টি প্রবন্ধ রয়েছে এই বইতে যেগুলোর মধ্যে অন্তর্বর্তী কোনও সম্পর্ক নেই (আক্ষরিক অর্থেই কুড়িয়ে বাড়িয়ে ) তাই এ বই শেষ থেকে শুরু করে প্রথম অবধিও পড়া যেতে পারে । পাঠক ইচ্ছে করলে শিবরামের মতন মাঝখান থেকে শুরু করে সমান্তরাল ভাবে শুরু ও শেষের দিকে এগোতে পারেন, কোনও অসুবিধে নেই ।
২) পঞ্চাশটি ভিন্ন প্রবন্ধ পরে পাঠক বন্ধুরা বিষয় বস্তুর স্বাদ আস্বাদন করতে পারেন তবে বিশেষ কোনও বিষয়ে পণ্ডিত হওয়ার জন্য এই বই নয় । এ বই সবার জন্য । সীমিত সংখ্যক তথ্য সুচারু ভাবে পরিবেশন করেছেন লেখক ।
৩) বইটির অনবদ্য প্রচ্ছদ বানিয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী দেবাশীষ দেব , প্রচ্ছদটিই যথেষ্ট যেন পাঠকের পাঠ পূর্বক অ্যাড্রিনালিন রাশ ঘটানোর জন্য। আর হ্যাঁ, বইটি যে বয়েস নির্বিশেষে সকলের পাঠ যোগ্য তারও যেন আভাষ পাওয়া যায় প্রচ্ছদ দেখেই।
৪) লেখকের লেখনীর গুনে তথ্য সমৃদ্ধ লেখাও যে সুখপাঠ্য হতে পারে সে পরিচয় আমি আগেও পেয়েছি কৌশিক বাবুর লেখা পরে । এ বই তার ব্যতিক্রম নয় । কলমের গুণে তথ্য নির্ভর ছোট ছোট প্রবন্ধ গুলি যেন জীবন্ত হয়ে এ বইকে আনপুটডাউনেবেল করে তুলেছে ।
৫) বইয়ের নাম যতই কুড়িয়ে বাড়িয়ে হোক প্রবন্ধের সংকলন কিন্তু লেখক করেছেন অত্যন্ত যত্ন নিয়ে। প্রতিটি প্রবন্ধই মন ছুঁয়ে যায়। আরও বেশি জানার খিদেটা বাড়িয়ে তোলে।
৬) লেখার সাথে সাথে রয়েছি ছবি ও তথ্য সূত্র যাতে পাঠকের বিষয় সম্বন্ধে আরও গভীরে জ্ঞানার্জনের ইচ্ছে হলে নিদেনপক্ষে শুরুটা কোথা থেকে করবেন সে ব্যাপারে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় ।
৭) ছোটবেলায় যারা আনন্দমেলা পড়তেন তাদের মনে থাকা উচিত আনন্দমেলায় ছোট ছোট অনুচ্ছেদে একসময় দেশবিদেশের নানা অজানা নতুন খবর থাকতো । মার্জিত ভাষার গুণে এ বই পরে অনেক দিনের হারানো সেই স্বাদটা আস্বাদনের মজা পেলাম ।’
অপর মনযোগী পাঠক স্বর্ণপালি মাইতি জানিয়েছিলেন, ‘সত্যজিৎ রায় কে তো আপনি হরলিক্সের ন্যায় গুলে খেয়েছেন। এই বইয়ের মজা হল যেখান থেকে খুশি পড়া শুরু করা যেতে পারে। টুকরো টুকরো জ্ঞানের ভান্ডার৷ আপনার লেখনির গুণে যতগুলি প্রবন্ধ পড়লাম, সব কটি সুখপাঠ্য। দেবাশীষ দেবের প্রচ্ছদ আর তার মধ্যে বেড়াল টাকে দেখতে পেয়ে যার-পর-নাই খুশী হলুম।
পরিশেষে বলি,বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এত পড়াশুনো এক জন্মে করতে পারলেই জন্ম সার্থক হয়ে যায় মানুষের। আপনি লিখতে থাকুন। লেখনী আরো সমৃদ্ধ হোক। আর আমরা সে সব পড়ে আনন্দে থাকি।’
শুভ আইচ সরকার লিখলেন – ‘ জ্ঞানের আড়ৎ এই বই টা। যারা ক্যুইজ করেন, তাদের জন্য লাইনে লাইনে রসদ। কোনদিক বাদ দেন নি লেখক, সিনেমা, সাহিত্য, বিজ্ঞান কি নেই এই বই তে। এবং সংক্ষিপ্ত না, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেশ বিস্তারিতই আছে বলে মনে হয়েছে। ননফিকশন ঘরানার এমন বই বিগত কয়েক বছরে বাংলাতে বেরিয়েছে বলে মনে পরছে না। (লেখকের আগের বই গুলো যারা পড়েছেন, তারা হয়ত একমত হবেন যে ননফিকশনের এই ঘরানায় এই মুহুর্তে তিনিই সেরা।) তার উপরে পাতায় পাতায় ছবি আপনাকে বই এর সাথে ধরে রাখবে। লেখার স্বচ্ছলতা আর সাথে ঝা চকচকে পৃষ্ঠা ও ছাপা অন্য মাত্রা দেয়। ব্যক্তিগত ভাবে আমি এইরকম লেখার অনুরাগী তাই আমার খুব ভাল লেগেছে, তাই বলছি যারা এখনও ভাবছেন তারা কিনে ফেলুন।’
দেবলীনা দাস জানিয়েছেন, ‘”কুড়িয়ে বাড়িয়ে” আমার পড়া কৌশিক মজুমদারের তৃতীয় বই। ঠিক এর আগের বই ‘তোপসের নোটবুক’ পড়ে এতো অসাধারণ লেগেছিল যে এই বইটা অর্ডার দিতে দেরি করিনি। পুরো বইটা পড়ে জাস্ট ব্যোমকে গেছি। শুরুতেই সিনেমার ইতিহাস নিয়ে লেখা প্রবন্ধ গুলো সমসাময়িক বাংলা প্রবন্ধের মধ্যে অন্যতম হয়ে থাকবে। বিশেষ করে “এক দৃশ্যের জন্ম” এবং “বাংলা ছায়াছবির নির্বাক নায়িকারা” বাংলা সিনেমার ইতিহাস রচনায় অন্যতম মাইলস্টোন হয়ে থাকবেই। কমিকস নিয়ে লেখকের আগেও লেখা পড়েছি কিন্তু কমিকসের স্রষ্টাদের নিয়ে এই লেখা আগের সব লেখাকে যেন ছাপিয়ে গেছে। সাহিত্য বিভাগে “জুল ভাৰ্ণ” আরেকটি মাস্টারপিস এই বইয়ের। তবে সমালোচনা করতেই হয় বলে বলা “কিং আর্থার” প্রবন্ধটির মধ্যে লেখকের পূর্ববর্তী বই “হোমসনামা” বেশ কিছু অংশ পাওয়া যায়। আমি আদৌ সাহিত্য সমালোচক নই। তবে এমন বইটি হাতে পেয়ে কয়েকটা কথা লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।’
এখন আপনি, কী বলছেন?