কুসুম কুসুম গরম জলে নরম নরম তুলোগুলোকে ডুবিয়ে যখন স্লেটের উপরে লম্বালম্বি আড়াআড়ি পোঁচ টানা হয় তখন যে নিশ্চিত অথচ অমলিন জলের দাগগুলি পড়ে, সঙ্গীতার গল্পগুলি সেই রকমের।
যে গল্প আগুন হয়ে জ্বালায় আবার প্রদীপ হয়ে জ্বলে, সঙ্গীতার গল্পও সেই রকমের।
‘সুয়োকথা দুয়োকথা’য় এক ডজন সঙ্গীতা পাঁজরের মতো করে আগলে রেখেছে সেই কুসুম কুসুম নরম নরম আগুনের হৃদয়কে।
— সৌরাংশু
হস্তিমূর্খ –
আদর্শ ছোট গল্পের নিয়মকানুন মেনে তৈরি এই বইটির বারোটি গল্পে এমন কোনও ইচ্ছাপূরণ নেই যা বাস্তবে খুব কম ঘটে। তথাকথিত সেন্টিমেন্টের জাল বুনে অকারণে ভারাক্রান্ত করে তোলার প্রচেষ্টা অনুপস্থিত।
প্রায় প্রতিটি গল্পের কেন্দ্রবিন্দু এক একটি বিশেষ পরিস্থিতি। নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষের আচরণ কিরকম হতে পারে সেইসব ঘটনা নিয়েই এগিয়েছে প্রতিটি গল্প। কখনও সেই পরিস্থিতি আর্বান ক্রাইসিস, কখনও বা অস্ত্বিত্বের সঙ্কট, কখনও বা ফ্যান্টাসি। এইসমস্ত ব্যাপার নিয়ে লিখতে গিয়ে লেখিকা অত্যন্ত সংযত। এবং এই সচেতনতাই লেখিকাকে সাহায্য
করে প্রতিটি চরিত্রকে রক্তমাংসের মানুষ করে তুলতে। ফলত গল্পও হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়।
আজ যখন প্রচুর একঘেয়ে লেখা পড়তে পড়তে ক্লান্ত লাগে বেশ তখন এই গ্রন্থ, এই বারোটি গল্পের সংকলন নিঃসন্দেহে এক ঝলক টাটকা হাওয়া।
সৌগত পারিজাতপতি –
সই’য়ের লেখা’র রিভিউ লেখাটা আমার মত অর্বাচীনের পক্ষে কতখানি সুপ্রযুক্ত তা নিয়ে নিজ অন্তরেই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আমি তাই কিছু ব্যক্তিগত মতামত জানাই।
সই’য়ের লেখার আমি একজন বায়াসড্ ফ্যান
ফলে, সই যা লেখে আমি নির্বিবাদে বৃষ্টিভেজার মত করে তা শুষে নিই।
আমার ব্যক্তিগত মতে, বাংলা সাহিত্যে, সই – লীলা মজুমদার, আশাপূর্ণা দেবী ও নবনীতা দেবসেন’এর যোগ্য উত্তরসূরী।
dr sonali mukherjee bhattacharyya –
ফেসবুকের পাতায় মগজাস্ত্রের ঝিলিক খুঁজতে থাকি।এমন লেখা যা ঝিমিয়ে পড়া অস্তিত্বকে জাগিয়ে তুলবে। খাড়া বড়ি থোড় জীবনে আমের আচার বা কাঁচা লংকার চিরচিরে ঝাল চুরমুরের মত জিভে জল আসা, ভাল লাগায় ভরিয়ে তুলবে ভেতরটা।সংগীতা অনায়াস অক্ষর বিন্যাসে সে চাহিদা পুরন করে দেন।
সুয়ো কথা দুয়ো কথার গল্পেরা এত অন্য অন্য রকমের, যে টান টান হয়ে বসে পড়ে শেষ করতে হয়।আর তারপর মনে হয়, আহা এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল কেন?
প্রতিটি গল্পের রঙ আলাদা।কল্পনার পেগেশাস কত দূর পাখা মেলে আবার বাস্তবের মাটিকে ছুঁয়েছে শক্ত পায়ে।
আরও অনেক অনেক লেখা পড়ার আশায় রইলাম।
সোনালী সরকার –
বইমেলা থেকে যথারীতি গুচ্ছ বই নিয়ে ফেরা। প্রথমে কোনটা পড়ব ভাবতে ভাবতে সই এর বইটাই বেছে নিলাম। বহু আগে সই এবং সইয়ের লেখার সাথে পরিচয় হয়েছে মুঠোফোনে, ফেসবুকের মাধ্যমে। ‘সুয়োকথা দুয়োকথা’ হাতে নিয়ে ভেবেছিলাম একটা -দুটো গল্প পড়ে শুয়ে পড়ব, কিন্তু বই শেষ করে যখন আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠলাম তখন ভোর রাত! কী অদ্ভুত মায়াবী লেখা! তত্ত্ব – তথ্যের কিচিরমিচিরের বাইরে মায়াময় আবেশে এতটা সময় কাটিয়ে দিয়েছি তা বুঝতেই পারিনি। এ শুধু লেখিকার লিখনশৈলীর মুন্সিয়ানা নয়, নরম সংবেদনশীল মননের সংস্পর্শ এবং তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ছাড়া বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া রসদ দিয়ে এ মায়াজাল বোনা সম্ভব নয়। লেখিকার আগামী প্রকাশের অপেক্ষায় রইলাম।
সুস্মিতা সরকার –
সইয়ের লেখার সঙ্গে পরিচয় ফেসবুকের পাতায়, বইমেলায় সামনাসামনি আলাপ। সইয়ের গল্প আমাদের প্রাত্যহিক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে হয়েও যেন রূপকথার আবেশ আনে। ১২টি গল্প পড়তে বসে সময় ভুল হয়ে যায়। পরবর্তী বইপ্রকাশ আশা করি আমাদের অপেক্ষা দীর্ঘতর করবে না। অনেক ভালবাসা সইকে, আর অপেক্ষা আগামী বইপ্রকাশের ।
অনুপম ভট্টাচার্য্য। –
বারোটি ছোটো গল্পের অনবদ্য কোলাজ। শুধু চমকপ্রদ ধারাবিবরণী নয়, বেশ কয়েকটি গল্পে ফেলে-আসা মূল্যবোধের অন্তঃসলিলা ধারা। বিষয়ের দিক থেকে বহুমাত্রিকতা প্রশংশনীয়। যেমন রয়েছে আরবান ফেয়ারীটেল, তেমনি আছে স্যররিয়্যাল ধূসরতা, প্রেমের উপাখ্যানের পাশাপাশি নাগরিক নৈর্ব্যক্তিকতা। ভাষা ঝরঝরে। আদ্যন্ত উপভোগ্য সমসাময়িক কথকতা।
bappa –
এরকম বই বেরিয়েছে জানতাম না। লোকমুখে শুনে ধার দেন করে জোগাড় করে পড়লাম। মানুষটিকে একসময় খুব ভালো করে চিনতাম। নাম না বলে দিলেও বলে দিতে পারতাম এ কার লেখা।
আমার লেখা সেরা মন কেমন করা বই। এবার কলকাতায় গেলে নিজের জন্যে একটা কিনব। এমন বই সবসময় পড়ার সৌভাগ্য হয় না। লেখিকার জন্য শুভেচ্ছা রইল।