মনের দরজাগুলো আবজে দিয়ে আমরা ক্রমাগত দিনগত পাপক্ষয়ের জীবন বেছে নিই। তারপর টানা বন্ধ রাখার অভ্যাসে একদিন সেগুলোকে খুলতেই ভয় পাই। আমাদের গা শিরশির করে, এই বুঝি ধরা পড়ে যাব! সুতরাং হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর কোনও প্রশ্ন নেই। ঠিক এখান থেকেই খেলা শুরু করেন সিদ্ধার্থ দত্ত। তাঁর অণুগল্পে জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তের সাপ-লুডোয় তিনি আমাদের হাজির করান ওই বন্ধ দরজাগুলোর সামনে। তারপর এক ঝটকায় খুলে দেন সেটিকে। আলো আসে। হাওয়া খেলে। আর প্রায় প্রতিবারই শিউরে উঠি আমরা। ঠিক যেভাবে সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও স্রেফ চপ্পল কিনে সেটি কাগজে মুড়ে নিয়ে কেউ হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরার পথে অনুভব করেন তাঁর বাবাকে, শৈশবকে। আবার ছেলের হাত ধরে প্রথমবার প্লেনে চড়ে কোনও বৃদ্ধা যখন খুঁজে ফেরেন তাঁর মৃত স্বামীকে, কারণ মৃত মানুষরা উপরে যায় বলেই তিনি শুনেছেন, আর কতটা উপরে উঠলে তবে তাঁর দেখা মিলবে!– এই অপেক্ষার ভিতরেই আমরা আসলে ঢুকে পড়ি বিশ্বাসযোগ্য মিথ্যের পৃথিবীতে। যা আসলে গল্প হয়েও গল্প নয়। সিদ্ধার্থ দত্তের ঝোঁক আসলে সেদিকেই। গল্প বলার ছলে তিনি ওই জীবনের বন্ধ দরজাগুলোর সামনে আমাদের নিয়ে যান। অণুগল্প বলেই বেশি পরিসর নেন না। কিন্তু যজ্ঞভূমি ছোট হলেও হোমাগ্নির তেজে কোনও ঘাটতি হয় না। অনুগল্পের অনুশীলনে সে সত্যিটাই পরতে পরতে বুঝিয়েছেন লেখক। নিপাট সরল করে, সহজ জীবনের এইসব মুহূর্তেরা, যার সঙ্গে সিদ্ধার্থ পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিতে চান, তা আসলে যেন বুকের আড়ালে থাকা গ্রামের বাসিন্দা। যে গ্রামে আমরা সচরাচর যাই না বা যেতে পারি না। সিদ্ধার্থর ‘আড়াল গ্রামের কথা’ এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সেতু হয়ে উঠেছে। যে সেতু ছুঁয়ে আমাদের মনে পড়ে যায়, দেখার অতীত আরও কিছু দেখা বাকি থেকে গিয়েছে। এখনও। সফল কাহিনিই জীবনের সেই অন্তর্দৃষ্টির খোঁজ দেয়। নাকি উলটোটা? সে বিচারের ভার না হয় পাঠকের উপরই থাকল।
Reviews
There are no reviews yet.