জাতশিল্পী সকলেই নয়, কেউ কেউ মাত্র হতে পারেন। এত শিল্পী কেন, এরকম প্রশ্নের অরণ্যে হাঁটতে হাঁটতে এঁদের চোখে পড়ে, যাঁদের উত্তর দেবার গরজ নেই। সৃষ্টির আনন্দ ও তাকে রসোত্তীর্ণ করে তোলার নেশাতেই তাঁরা বুঁদ। বাংলা অণুগল্পকে যদি পৃথক ঘরানা ধরা হয়- যদিও এ নিয়ে বিতর্ক বিস্তর- তবে ব্রতী মুখোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে সেই জাতশিল্পীদের একজন হিসাবেই চিহ্নিত হবেন। এমনিতে ছোটগল্পের স্টেপ জাম্প করে বিশ্বসাহিত্য ক্রমশ সরাসরি উপন্যাসের দিকে এগিয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে। তবু বাঙালি পাঠক, কয়েকজন জাতশিল্পীকে পেয়েছে বলেই জানে ছোটগল্পের মণিমুক্তো ঠিক কত জমা আছে সিন্দুকে। একই কথা বলা যায় অণুগল্পের ক্ষেত্রেও। যদিও বহর, বিস্তার ইত্যাদির নিরিখে অণুগল্পের আকাশে বহু দ্বিধা, সংশয়, প্রতর্কের মেঘ ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু আসল কথা হল রামধনুর উদয়। ওই মেঘের ভিতরেই থাকে অনুভবের পরিশ্রুত জল। আর জাতশিল্পী যখন পলকাটা হিরের মতো দ্যুতিময় অক্ষর আর তার বিন্যাসকে সেই জলের সামনে আনেন, তখনই পাঠকমনে সাত-রঙের উদয়। তার কোনও ব্যাখ্যা হয় না। ভালোলাগাতেই ভালোলাগার শেষকথা। আর সেই মাপকাঠিতেই ক্রমশ জিতে যেতে থাকেন ব্রতী মুখোপাধ্যায়। এই রোজকার খসখসে জীবনকে তিনি দেখেন একটু দূরত্ব থেকে। হাহাকার জাগে। কিন্তু তিনি হাউ হাউ কান্নায় বিশ্বাসী নন। ফলে দহন ঘনীভূত হয় অন্তর্দহনে, সময় গড়ালে তারই সংহত প্রকাশ ঐশ্বর্যে ঝলমল করে ওঠে। অণুগল্পের মিতায়তন পরিসরটিকে তিনি খুব ভালো কাজে লাগাতে পারেন মনের বিস্তার প্রসারী করে তোলার ক্ষেত্রে। লেখেন একটি লাইন, কখনও আবার মোক্ষম কথাটি লেখেনও না, শুধু পরিবেশ তৈরি করে শুধু অঙ্গুলিনির্দেশ করেন, আকাশের প্রতি। বাকিটা ব্যক্তিগত, পাঠকের প্রাপ্তি। কারও সঙ্গে কারও মেলে না। দু-মলাটের ভিতরের পৃথিবী তার খবরও পায় না।
Reviews
There are no reviews yet.