বাঙালি গোয়েন্দাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন ব্যোমকেশ এবং ফেলুদা। বাংলা সাহিত্যের গবেষক সৌরভ দত্ত তাঁর ব্লগে জানিয়েছেন প্রেমেন্দ্র মিত্রর গল্প ‘তিনটি শিকার’-এ ব্যোমকেশকে অতিথি গোয়েন্দার ভূমিকার দেখা গেছিল। এছাড়া পূর্ণেন্দু পত্রী ব্যোমকেশের ছেলেকে নিয়ে লিখেছিলেন ‘জুনিয়র ব্যোমকেশ’-এর গল্পগুলি, কিন্তু ব্যোমকেশকে নিয়ে সম্পূর্ণ প্যাস্টিশ বোধ হয় লেখা হয়নি। ফেলুদাকে নিয়েও প্যাস্টিশ নেই, তবে ফ্যান ফিকশন নয় নয় করে আছে বেশ কিছুই। দুই বাংলা থেকে একটি করে উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০১৫-র অক্টোবরে অনলাইনে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশি লেখক মাসুদ সরকার রানার ফ্যান ফিকশন ‘কুমিল্লায় ফেলুদা’, আর তারও চার বছর আগে কলকাতার সৌমিত্র ব্যানার্জী এবং মিঠু ঘোষাল যৌথ উদ্যোগে লিখেছিলেন ‘কেলুকা রিটার্নস’ (প্রকাশক – বইপোকা)। মাসুদের গল্পে ফেলুদা, তোপসে, জটায়ুর নাম অপরিবর্তিত থাকলেও সৌমিত্রর লেখায় ফেলুদা হয়েছে কেলুকা, তোপসের সঙ্গে মিলিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে পারশে (মেছো গন্ধটুকুও থাকল), আর লালমোহনবাবু হয়েছেন নীলমাধববাবু। এমনকী নীলমাধবের একটি ছদ্মনামও আছে, গরুড় (যদিও বইতে বানান গড়ুর)। এই দুটি লেখাই অবশ্য নিছক ফ্যান ফিকশন, প্যাস্টিশ আর হয়ে উঠতে পারেনি। তার প্রধান কারণ সত্যজিৎ-এর লেখার স্টাইল বা এলিগ্যান্স কোনওটিই এসব লেখায় বিন্দুমাত্রও ধরা পড়েনি।
ফেলুদার প্রথম গল্পের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘টগবগ’ পত্রিকার উৎসব সংখ্যার জন্য লিখেছিলাম ফেলুদার নতুন গল্প ‘রাজধানীতে তুলকালাম’। সেই লেখা পড়ে বন্ধুবর এবং সৃষ্টিসুখের কর্ণধার রোহণ কুদ্দুস লেখাটিকে বই আকারে বার করতে চাইলেন। আর প্রায় সে সময়েই খেয়াল পড়ল ব্যোমকেশের গল্প নিয়ে প্রস্তুত প্রথম চলচ্চিত্র ‘চিড়িয়াখানা’-র পঞ্চাশ বছর পূর্তিও হবে ২০১৭-তে। সে কথা মাথায় রেখেই লেখা হল ‘গরল তমসা’। এক মলাটে ফেলুদা এবং ব্যোমকেশকে ধরতে চাওয়ার মধ্যে অনেকেই দুঃসাহস দেখবেন, হয়তো স্পর্ধাও, তবে প্রকাশক এবং লেখকের তরফ থেকে বলতে পারি, এই দুই চরিত্র এবং তাঁদের স্রষ্টাদের প্রতি নিখাদ ভালোবাসাই আমাদের সাহস জুগিয়েছে। হয়তো এই নিখাদ ভালোবাসা থেকেই টগবগের একাধিক পাঠকও জানিয়েছিলেন ‘রাজধানীতে তুলকালাম’ তাঁদের মন ছুঁয়ে গেছে, কৃতজ্ঞতা থাকল তাঁদের প্রতি। নিখাদ ভালোবাসার টানে বাঁধা পড়েছিলেন আরও একজন, তিনি শিল্পী এবং বন্ধু অভীক কুমার মৈত্র। অভীকের করা প্রচ্ছদ এবং অলঙ্করণ বাদ দিয়ে এ বই দাঁড়ায় না। আইডিয়া জেনারেশন থেকে শুরু করে বাকি প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁর কত রাত্রি যে বিনিদ্র কেটেছে তার সাক্ষী থাকল ফেসবুক মেসেঞ্জার। কিন্তু রোহণ এবং আমি জানি, অভীক সে নিয়ে কোনওদিনই অভিযোগ করবেন না, কারণ তাঁর মতন ফ্যানবয় ফেলুদা এবং ব্যোমকেশের ভাগ্যেও চট করে জুটবে না।
– প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
Reviews
There are no reviews yet.