ভূ মি কা
২০২০ সালের মার্চ মাস। দেশে মারণব্যাধি ধেয়ে এল। তখন সবে শুরু। সে-মাসের ঠিক মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হল ‘লক-ডাউন’ বা গৃহবন্দি দশা। ভয়ঙ্কর একটা অস্বস্তি ও আশঙ্কার মধ্যে কাটছে জীবন। যত দিন যাচ্ছে, শুনেছি একের পর এক মানুষের অকাল প্রয়াণের খবর। যে যে উপায় অবলম্বন করলে নিরাপদ থাকা যায় শুনেছিলাম, তারও বেশ কিছু দেখা গেল হিসেবে মিলছে না। এই অবস্থায় কিছু একটা আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন অনেকেই। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিছুটা পরীক্ষামূলক ভাবেই শুরু করলাম একটা লেখা। নাম দিলাম ‘কল্পবিন্যাস’। কেন, তা বলি— প্রথমেই নাম দিয়ে ফেললাম ‘আলো চালের ভাত’। এ নাম কেন দিলাম, কী ভাবে এই নামের ব্যাখ্যায় পৌঁছব, কিছুই জানা ছিল না। কিছু কিছু ছোটগল্প লেখার সময়ে আমি এমন কাণ্ড আগে করেছি। উপন্যাসের মাঝামাঝি পৌঁছে একসময়ে নামটির ব্যাখ্যা দিতে পেরে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
কোনও প্লট ভাবিনি, কোনও স্টোরিলাইন ছিল না। এক কিশোর ও এক ফুলওয়ালিকে নিয়ে কাহিনি শুরু করলাম। তাঁরা পরদিন কী করবেন, তাঁরাও জানতেন না, আমিও। প্রতিদিন পাঠকরা উৎসাহ যুগিয়ে গেছেন এবং বহু ক্ষেত্রে, তাঁরাই বলে দিয়েছেন কাহিনির গতিপথ। সকলের কথা যে শুনেছি, তা বলতে পারি না, কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই নিজের মাথায় যা এসেছিল, তা বদলে ফেলেছি পাঠকদের সেন্টিমেন্টের কথা চিন্তা করে। কাহিনি শেষ করার অব্যবহিত আগেও ঘুরিয়েছি গল্পের মোড়।
এ উপন্যাস যদি সফল হয়, তার কৃতিত্ব আমার একার নয়, অনেকের। ডিটেল জিনিসটার ব্যাপারে আমি নিজে খুব খুঁতখুঁতে। আমার ফেসবুক বন্ধুবৃত্তে নানা পেশার মানুষ আছেন, অ্যাডভোকেট, পুলিশ, টিচার, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নানা শ্রেণির কর্মী ও আধিকারিক, সকলের মতামত চেয়েছি ফোনে, বিভিন্ন কাজ কী ভাবে হয়, সবই জেনে নিয়েছি। এ লেখার পেছনে কৃতিত্ব তাঁদেরও। সকলের নাম উল্লেখ করতে পারলাম না। লেখার ঝোঁকে কিছু ডিটেলে ভুল করেছিলাম, পরে বদলেছি সে সব।
এ উপন্যাসে বেশ কিছু চরিত্র বাস্তবে যা দেখা যায়, তেমন নয়। তেমন হওয়ার কথাও নয়। নইলে মানুষ গল্পের বই না পড়ে খবরের কাগজ পড়বেন। সেটুকু আনন্দ পাঠককে দিতে পেরে থাকলেই আমার অসীম আনন্দ।
এই বছর মার্চ মাসের ২১ তারিখ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শুরু করেছিলাম ‘আলো চালের ভাত’, প্রতিদিন একটি করে পর্ব পোস্ট করেছি, হয়তো লিখেছি তিন-চারটি সর্বাধিক, কিন্তু তার বেশি নয়। অগস্ট মাসের ১২ তারিখ শেষ করি উপন্যাস। শেষ হওয়ার তিন-চার দিন আগেও আমি জানতাম না শেষ এভাবে হবে।
খুব আনন্দ হয়েছে এভাবে একটা সৃষ্টিকে এত কাছ থেকে দেখার জন্য।
সে সব দিন আর নেই, যখন বইয়ের মলাটে শুধু উপন্যাস বা গল্পের নাম থাকত, সঙ্গে থাকত লেখকের নাম। বেশ কয়েক দশক ধরে মলাট বা প্রচ্ছদ একটি বইয়ের অতি উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মলাট চিত্তাকর্ষক হলে একটি বইয়ের সংগ্রহের আকর্ষণও অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছে বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত। কী অসম্ভব পরিশ্রম করে সে এই প্রচ্ছদ করেছে, তা কেবল সে জানে আর আমি জানি। নিত্যদিন ফোনে বায়না করে করে বিভিন্ন এলিমেন্ট বদল করিয়েছি। হাসিমুখে তা করেছে বিশ্বনাথ। সে আমার ভ্রাতৃস্থানীয় বলেই এত অত্যাচার সয়েও করেছে এই অপূর্ব প্রচ্ছদ। তাকে ধন্যবাদ দিলে ছোট করা হবে, তবে তার উল্লেখ তো করতেই হয়।
রূপঙ্কর সরকার
Reviews
There are no reviews yet.