আড্ডা বিহনে বাঙালির বাঙালিয়ানা আদেক্ট থাকে কি? পরিচয় পত্রিকার অধিকাংশ সদস্যকেই আমবাঙালির মধ্যে ফেলা যায় না, অথচ এ সওয়ালে পাইপ চিবোনো বন্ধ করে কী ব্যোদিলিয়রের কবিতার বই থেকে মুখ তুলে বা কমিন্টার্নের রাজনীতি নিয়ে কাটাছেঁড়া বন্ধ করে সবাই একবাক্যে বলে উঠতেন ‘কস্মিনকালেও না’। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত পরিচয় পত্রিকার লেখক-সমালোচকরা মাঝে মাঝেই জমিয়ে আড্ডা দিতেন। সত্যেন বোস, লীলা মজুমদার, বিভূতিভূষণ, অপূর্ব চন্দ — তৎকালীন বিদগ্ধজনদের এই আড্ডায় ওয়াজিদ আলি শাহর পাচক থেকে শুরু করে পেনেটির বাগানবাড়ি বা আফ্রিকার মাম্বা, কিছুই বাদ যেত না।
‘পরিচয়ের আড্ডায়’ সেই আদি বিশ্বায়িত বাঙালিদের নতুন করে চেনাবে আড্ডার মধ্য দিয়েই।
Bibudh Lahiri –
বাস্তব আর কল্পনার পারফেক্ট ককটেল এই বইটি এমন এক সময়ের পটভূমিকায় যখন “কৃতী বাঙালী” কথাটা “সোনার পাথরবাটি”র মতো হয়ে ওঠেনি, আর নিজ কর্মক্ষেত্রে কৃতী হওয়ার সঙ্গে কাজের বাইরে পাঁচরকম বিষয়ে আগ্রহ নেওয়া বা আড্ডাবাজ হওয়ারও কোনো বিরোধ ছিল না। আড্ডার নিয়মিত সদস্যদের মধ্যে হয়তো সত্যেন বোস, লীলা মজুমদার আর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বাকি কাউকে বৃহত্তর বাঙালি সমাজ সেভাবে চিনবে না, তবে তাতে এই বইয়ের আনন্দ নেওয়া থেকে বাদ পড়ার কোনো কারণ নেই। আড্ডার মেজাজ জীবন্ত হয়ে ওঠে লেখকের কলমের গুণে। বিষয়-নির্বিশেষে অগাধ পড়াশুনো এবং পড়াশুনোর প্রতি নিখাদ ভালোবাসা না থাকলে ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ের জটিল তত্ত্বকে (যেমন “গণেশপুরাণ” বা “শব্দসন্ধানী” গল্পগুলি) এতো হাল্কাচালে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে “পেনেটির সেই রাত ” গল্পে নিকোল কিডম্যানের “The Others” সিনেমার প্লটের ছায়া পেলাম বলে মনে হলো।