“বড়ো বেশি কথা বলা হল, এ বছর?”
তদসত্ত্বেও নতুন সূর্য উঠিলে আর্দ্রতার কথা মনে পড়ে, বোরোলিনের কথাও। রাস্তার মোড়ে চায়ের ভাঁড়ে চুমুকের কথা, সেও কি…?
সব ছন্দ ইদানীং বিলম্বিত লয়ে শুরু হয়। লেখায় বিশেষণের সংখ্যা নগণ্য এবং আশ্চর্য ধ্রুবপদের ব্যবহার ছাড়িতে পারি নাই বলিয়া নম্রসুরে বলিতে চাই, তফাত যাও!
নিঃশব্দের তর্জনী বাংলা কবিতাকে ও বাংলাভাষার কবিকে দিয়েছে যে সম্ভ্রান্ত উত্তরাধিকার, সৃজিতা সান্যাল তাঁর সময়ে বসে আপন করে নিয়েছেন সেই নিঃশব্দকেই। তাঁর ভাষা স্বতন্ত্র। উচ্চারণ নম্র এবং দৃঢ়। বিনোদনমুখর সুলভ বাজার থেকে তিনি সরিয়ে রাখতে চান তাঁর অক্ষরের শক্তি ও প্রেম। কারণ, তিনি জানেন ‘লিখতে হবে নিঃশব্দে কবিতা, এবং নিঃশব্দ কবিতা’। অতএব সেই দুঃসহ অন্তরাল থেকে ঝাঁপ দেওয়া তাঁর নিয়তি। এবং কাঙ্ক্ষিতও বটে। আমরা তা টের পাই, যখন তিনি বলেন,
ঈর্ষাবান ক্ষতমুখ, এবার আমার কথা বলি
দিনজুড়ে বসে থাকি জানা-অজানার কিছু দূরে
প্রশ্নহীন হতে চাই। জমে ওঠে বিস্ময়কণিকা
প্রতিরাত্রে পুড়ে যাই কী অসীম স্নেহভূমিকায়
প্রতিটি নিহত তারা আমার দাহের পাশে আসে
ইচ্ছে হয় একবার হেলাভরে মেধাচক্র ছেড়ে
চলে যাই। একবার। লিখি কোনও সহজ কবিতা।
তিনি জানেন, সত্য কঠিন। আরও কঠিন নিঃশব্দকে ধারণ। কারণ, এই নিঃশব্দ আসলে জীবনানন্দ, এই নিঃশব্দ আসলে এ-আমির আবরণ উন্মোচন, এ-নিঃশব্দ আসলে চিৎকৃত সভ্যতার বিপ্রতীপে কেন্দ্র অস্বীকারের দৃঢ়তা। এই স্পেক্টাকল-সময়ের ভিতরে বসেই সেই নিঃশব্দকেই মৃদু স্বরে আহ্বান জানান তরুণ কবি সৃজিতা। এ অনুশীলন সহজ নয়। তবু সে-কষ্ট তিনি স্বীকার করেন বলেই, আমরা পাই ‘শরবিদ্ধ ক্যারাভান’। পাঠক, আশা করি, এই কবিকে চিনে, আপন করে নিতে ভুল করবেন না।
প্রচ্ছদ – রোহণ কুদ্দুস
Reviews
There are no reviews yet.