মহাবিশ্বের মাঝে এই যে আমাদের পৃথিবী, তা হালকা নীল একটি বিন্দু মাত্র। এই আমাদের ঘর। একমাত্র আশ্রয়। ওই বিন্দুমাত্র অস্তিত্বটুকুই আঁকড়ে থাকা। আমরা যেন তাকে আর একটু ভালোবাসি। যত্ন করি। মার্কিন পদার্থ বিজ্ঞানী কার্ল সাগান যখন আমাদের এই বোধে পৌঁছে দেন, তখন যেন আরও নিবিড় করে এই চরাচরটিকে ছুঁয়ে থাকতে সাধ হয়। মানুষের মিথ্যে দম্ভের প্রাকার ভেঙে আমাদেরই সম্মেলক জীবনে অঙ্গীভূত হয়ে থাকা রোগাসোগা নদীটি, খেত-মাঠ-ঘাট, আমাদের পালা-পার্বণ, উৎসব, সংস্কৃতি-সমেত আমাদের সামগ্রিক ও সামূহিক অস্তিত্বটিকে আমরা আর একটু জড়িয়ে ধরতে চাই। কিন্তু তা তো সহজ নয়। কারণ স্মৃতি-সাক্ষ্য-অভিজ্ঞতাই দেয় সেই কাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞান, যা আমাদের বিচ্ছিন্নতা নয়, বরং সমগ্রের মাঝে একক কিংবা একক হয়েও সমগ্র হতে শেখায়। এ বইয়ে যেন সেই মন্ত্রগুপ্তিই শিখিয়ে দেন জয়া মিত্র। তিনি খুলে দেন তাঁর স্মৃতির ভাঁড়ার ঘর। দীর্ঘ আর বিচিত্র তাঁর জীবনের যাত্রাপথ। ততোধিক বিস্ময়ের, জীবনের সে যাত্রাপথে তুলে রাখা অজস্র অভিজ্ঞতা। জিজ্ঞাসু জীবনপথিকের মতোই তিনি আহরণ করে রেখেছেন সে সব, যেন উত্তরকালের জন্যই। আর এই লেখাগুলির সূত্র ধরেই আমরা ঘনিষ্ঠ হতে পারি আমাদের চরাচরে। মহাবিশ্ব থেকে যা কেবল বিন্দু, তা আমাদের কাছে ধরা দেয় সিন্ধুর ব্যাপ্তিতে। হ্যাঁ, আমাদের দোষ-ত্রুটি-খামতিগুলোও আড়াল থাকে না। কিন্তু দোষারোপ নয়। বরং ভাবনার বিন্যাস পালটে নিলেই যে আমাদের চরাচর আরও একটু আলোময় হয়ে উঠবে– এই বোধেই আমাদের পৌঁছে দেন তিনি। তিরিশটিরও বেশি নিবন্ধে তিনি এ বইয়ে জ্বালিয়ে রেখেছেন তাঁর স্মৃতির জাগপ্রদীপ। পাঠ অন্তে পাঠক নিশ্চিতই অনুভব করবেন, ব্যক্তিগত ও সম্মেলক জীবনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সেই আশ্চর্য সেতুটিকে। আর তখনই হয়তো জাগপ্রদীপের শিখাটিকে অনির্বাণ করে রাখার দায়িত্ব তুলে নিতে চাইবে উত্তরকাল। এ বই, কেবল বই নয়, বস্তুত, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাহিত সেই অঙ্গীকার হয়ে উঠতে চায়।
Reviews
There are no reviews yet.