পাঁচুর ভাট

Back To Shop

পাঁচুর ভাট

149.00

পাঁচুর সমস্ত ভাট একত্রে। হাসিবুর রহমানের প্রথম বই।

26 in stock

Description

সেবার ইতিহাসের ক্লাসের পরীক্ষায় পলাশির যুদ্ধ সম্বন্ধে লিখতে বলা হল।

পাঁচু চরম খুশি, অনেকদিন পর একটা কমন প্রশ্ন পড়েছে, গুছিয়ে লিখতে শুরু করল — “পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল নদিয়া জেলার পলাশির আমবাগানে। এই তো সেদিনকার কথা। ‘আনন্দে পলাশির যুদ্ধ’ বলে একটা অনুষ্ঠানে যুদ্ধের লাইভ টেলিকাস্টও দেখা গেছিল। নবাব ইচ্ছে করেই নদিয়াতে যুদ্ধ রেখেছিলেন, যাতে মুর্শিদাবাদের কোনও ক্ষতি না হয়। তাছাড়া ভেবেছিল আমবাগানে যুদ্ধ হলে একটা সুবিধাও আছে, গাছের ছায়ায় বেশ আরাম করে যুদ্ধ করা যাবে, বেশি জল-টল জোগান দিতে হবে না। সৈন্যদের সব লালগোলা প্যাসেঞ্জারের টিকিট কেটে দিয়ে নিজে ভাগীরথী এক্সপ্রেসে এসে পলাশিতে নেমে একটা অটোরিকশা রিজার্ভ করে সোজা পলাশির আমবাগান। ওদিকে ইংরেজরা দু-দিন আগেই এসে গাছের উপর মাচা করে বসে আছে, আসলে ব্যাটারা খবর পেয়েছিল বাগানের গাছপাকা আম নাকি জাগ দেওয়া আমের থেকে খেতে বেশি ভালো।

নবাব নিজের সঙ্গে মোহনলাল ও মিরমদনকে এক্সপ্রেস ট্রেনে আনলেও মিরজাফরকে লালগোলা প্যাসেঞ্জারে আসতে বলেছিল। আর সেখানেই তার রাগ, সেই কারণেই নাকি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল বলে বেশ কয়েকজন ইতিহাসবিদ মনে করেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক পাঁচুরাম সাউ বলেছেন, ‘এটাকে আসলে বিশ্বাসঘাতকতা ঠিক বলা যায় না, রাগের বদলা বলা যেতে পারে।’ যাই হোক, সবাই বাগানে হাজির, নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের একপ্রস্থ কথা হল, কখন যুদ্ধ শুরু করা যায়! কিন্তু সাহেব ব্যাটাদের সকালের চা জোটেনি, কালু চা-ওয়ালা এখনও দিয়ে যায়নি। দেবে কী করে, কালু তো সকালবেলাটা লালগোলা ফাস্ট প্যাসেঞ্জারেই চা বেচে। তাই ঠিক হল একটু বেলায় যুদ্ধ শুরু হবে। নবাবও দেখল ভালোই হল, তার সৈন্যদের আসতে এমনি একটু দেরি আছে। খবর এসেছে সারগাছিতে একটা মালগাড়ির সাথে লালগোলা প্যাসেঞ্জারের ক্রসিং হবে, তাই সেখানেই সব আটকে আছে।

অবশেষে যুদ্ধ শুরু হল। সে এক বিরাট যুদ্ধ, যে যাকে পারছে মারছে, ছুটে পালানোর তো জো নেই। এত আমগাছ যে বলার নয়, ছুটতে গেলেই গাছে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাচ্ছে। মিরমদন ও মোহনলাল একেবারে জান লড়িয়ে যুদ্ধ করছে, ওদিকে মিরজাফর যুদ্ধ ছেড়ে আমগাছের মাচায় উঠে আম খাচ্ছে। নবাবের হঠাৎ খেয়াল হল তার সৈন্যসংখ্যা বড্ড কম লাগছে। গুনে দেখল ঠিকই তো, যতজনকে ট্রেনের টিকিট দিয়েছিল তার অর্ধেকেরও বেশি জনতা আসেনি। প্রচণ্ড রাগ হল তার, ভাবল এইবার যুদ্ধ হয়ে যেমন-তেমন করে জিতে গেলে সবকটাকে ছাঁটাই করবে। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস, মিরমদন-মোহনলাল আর কত লড়বে! পারল না শেষ রক্ষে করতে। হেরে গেল নবাব, সেই ফাঁকে ইংরেজরা জিতে গেল। তারও আধঘণ্টা পরে সেই বাকি সৈন্যগুলো এল, কিন্তু আর লাভ নেই, যুদ্ধ শেষ, হার-জিতের ফয়সালাও হয়ে গেছে। এদিকে মিরজাফর মাচায় বসেই ঠিক করল, যে করেই হোক আমের বাগানটা ইংরেজদের কাছ থেকে তাকে বাগিয়ে নিতে হবে, বেশ সুস্বাদু আম হয় এই বাগানে। সেই যে যুদ্ধ হল, তারপর আর পলাশিতে কোনোদিন যুদ্ধ হয়নি।

স্যর পড়ে পুরো নির্বাক। কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরঘুর করছে, ট্রেনের বাকি সৈন্যরা সেই এল, কিন্তু এত দেরি করে কেন! এর জবাব পাঁচুই জানে, তাকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া উপায় নেই। তাই জানতে পাঁচুকে জিজ্ঞেস করলেন।
পাঁচু একগাল হেসে বলল — “স্যর, টাইম ছিল না তাই লিখতে পারিনি। আসলে হয়েছিল কী, নবাব তো মিরজাফরকে লালগোলা প্যাসেঞ্জারে যেতে বলেছিল, আর সেই ট্রেনেই তো সব সৈন্য আসছিল। ব্যস রাগের চোটে এক চা-ওয়ালাকে হাত করে চায়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল, ব্যস সব ঘুমে কাদা। ফলে তারা পলাশি স্টেশনে নামতে পারেনি, একেবারে সোজা শিয়ালদহ। পরের লালগোলা আপ ট্রেন ধরে ফের পলাশি আসতে দিনও শেষ, যুদ্ধও শেষ।”

(Visited 1,281 times, 1 visits today)

Additional information

Author

হাসিবুর রহমান

Cover and Illustration

জয়ন্ত ঘোষাল

Publisher

সৃষ্টিসুখ প্রকাশন

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “পাঁচুর ভাট”

Your email address will not be published. Required fields are marked *