রূপঙ্কর সরকারের ‘অপ্রাকৃত ২’ বইটি অনলাইন অর্ডারের লিংক — https://goo.gl/NRp6Pr
অফলাইন — সৃষ্টিসুখ, ৩০ এ সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট, কলকাতা ৯। যোগাযোগ — ৯০৫১২ ০০৪৩৭
==================================
সংকলন থেকে ‘রান্নাঘর’ গল্পের অংশবিশেষ।
=================================
বেলাল বললেন, “আসলে মিসেস তালুকদার ভয় পেতেন, যদি তাঁর দস্যি ছেলে কারও বাড়িতে কিছু ভেঙে-টেঙে ফেলে। নিজেদের ঘরেও অনেক শখের জিনিস ছিল তো ওঁদের, খুব দুরন্ত ছিল বাচ্চাটা। সেদিনও রান্নাঘরে ওকে বন্ধ করে লন্ড্রিতে কাপড় দিতে গেছিলেন। রান্নাঘরের জানলাগুলো বন্ধ ছিল, খেয়াল করেননি। ছেলেটা একটা প্লাস্টিকের টুলের ওপর উঠে জানলা খোলার চেষ্টা করছিল। টুলটা হঠাৎ স্লিপ করে –” রাইফা চোখে ওড়না চেপে ধরলেন।
“মাথার ঠিক পেছনে লেগেছিল কিচেনের টেবল টপটা। হাসপাতালেও নিয়ে যেতে পারিনি আমরা। তার আগেই –”
পারি বলল, “ইশ! ওঁরা এখন থাকেন কোথায়? মানে এটা বেচে কোথায় গেলেন? আমি রেজিস্ট্রেশনের সময়ে অত কথা আর জিজ্ঞেস করতে পারিনি।”
বেলাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “মিসেস তালুকদার পাভলভে ভর্তি আছেন। শিশিরবাবু সরকারি অফিসার ছিলেন, রেজিগনেশন দিয়ে বর্ধমান চলে গেছেন। নিজেদের কিছু জমি ছিল। চাষবাস করেন এখন শুনেছি।”
পারিজাত গম্ভীর হয়ে বাড়ি ঢুকল। শ্রীময়ী বলল, “কী হল, ও বাড়ি গেছিলে? দরজাটা সারানোর কোনও ব্যবস্থা হল?”
পারিজাত বলল, “নাঃ, ও বাড়িটা বেচে একটা ছোট ফ্ল্যাট নেব ভাবছি। বাবা আর কদিন। তারপর আমরা তো দুজন। দুজনের অত বড় ফ্ল্যাটের কী দরকার।”
শ্রীময়ী বলল, “দুজন?” তারপর আস্তে আস্তে ঘনিয়ে এসে সোফার হাতলে বসে পারির গলা জড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, “অ্যাই, জানো, এ মাসে হয়নি।”
পারি হতাশ গলায় বলল, “এই কি প্রথম নাকি?”
শ্রী বলল, “না গো, আমার মন বলছে ঠাকুর গড়া হয়ে গেছে, শুধু প্রাণ প্রতিষ্ঠা বাকি।”
পারি আরও হতাশ। বলল, “ওটাই তো হয় না। ঠাকুর তো কতবার গড়লে।”
দিন দশেক পরের কথা। পারি অফিস থেকে ফেরার পথে একবার ঢুঁ মারল ফ্ল্যাটটায়। আসলে ফ্ল্যাট দেখার আর তেমন ইচ্ছে ছিল না। বেলালদা বাড়ি থাকলে একটু আলোচনা করা যেত। লোকাল দালাল-টালাল ধরে যদি ছোট একটা ফ্ল্যাট দেখা যায় – নিজেদের ফ্ল্যাটের দরজার দিকে তাকিয়ে পারি দেখল, দরজাটা পুরো বন্ধ নয়, ভেজানো আছে শুধু। সে ভুরু কুঁচকে ভাবল কিছুক্ষণ, শেষ কবে এসেছি? দরজা ভালো করে টেনে দিয়ে যাইনি? খুব সাবধানে দরজাটা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিল পারিজাত –
যদিও ভেতরে অন্ধকার, কিন্তু রাস্তা থেকে খানিক আলো তো বন্ধ জানলার কাঁচের মধ্যে দিয়ে আসছেই। লিভিং রুমের মধ্যে চোখ পড়তেই বুকটা ছাঁৎ করে উঠল পারির।
লিভিং রুমের মধ্যে রান্নাঘরের দিকে মুখ করে হাঁটু গেড়ে বসে এক ছায়ামূর্তি। সে মূর্তি এক নারীর। তার খোলা চুল ছড়িয়ে আছে কাঁধের দুপাশে, দুই হাত সামনের দিকে প্রসারিত। ফিসফিস করে সে আওড়াচ্ছে, “আয়, আয়, আমার কোলে আয়, কোত্থাও বন্ধ করব না, প্রমিস –”
পারি দেখল, রান্নাঘরের বন্ধ দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে, একটা হাওয়া যেন ছুটে এল নারী মূর্তিটির দিকে।
==============
রূপঙ্কর সরকারের ‘অপ্রাকৃত ২’ সংকলন থেকে ‘রান্নাঘর’ গল্পের অংশবিশেষ।
বইটি অনলাইন অর্ডারের লিংক — https://goo.gl/NRp6Pr
অফলাইন — সৃষ্টিসুখ, ৩০ এ সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট, কলকাতা ৯। যোগাযোগ — ৯০৫১২ ০০৪৩৭