Blog

দারুণ আল কিতাব-হারুণ আল রশিদ

হারুণ আল রশিদ, না, ইনি বাগদাদের খলিফা নন, কিন্তু খলিফাগিরিতে ইনি কম যান না। টুক করে ওঁর একটা লেখা পড়ে নেওয়া যাক। বইয়ের নাম ‘দারুণ আল কিতাব’।  সৃষ্টিসুখের স্টোরে অর্ডারের লিংক — https://goo.gl/wye6TK

====================

সুজিত ফিলিম বানায়। শখের অবশ্যই। এমনিতে তো চাকরি করে ও। শান্তনুর অফিসে। ওর ফিলিমগুলো দিনে দিনে ভালো থেকে আরও ভালো হচ্ছে। হওয়ারই কথা। লেগে থাকলে… পাগল ছেলে। মুখে নির্মল হাসি। বোধবুদ্ধি নেই বিশেষ… মানে সাধারণ বোধবুদ্ধি। সেটাও বেশ মজার। ওর ফিলিমগুলো সব ইউটিউবের জন্য করে ও। নিজের টাকায়। দু-তিন হাজার টাকার বাজেটের ভিতর। লোকে দেখলেই খুশি। গোড়ার দিকেরগুলো আমার তেমন ভালো লাগত না… কিন্তু ওই… দিন-দিন ভালো হয়ে উঠছে। একটা মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সাম্প্রতিক রাস্তার একটা নেড়ির সাথে কলিশন বাঁচাতে নিজের কাঁধের হাড় ভেঙে ফেলেছে। মাঝে একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিল। গল্প হল একটা লোক অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরছে। তাই নিয়ে ফিল্ম। অফিস থেকে বেরিয়ে আগে সে যায় একটা মদের ঠেকে। সেখান থেকে মাতাল হয়ে রাস্তায় ঠোক্কর খেতে খেতে ফিরছে। পথে নানান লোকের সাথে তার মুলাকাত হচ্ছে। একটা পাগল… একটা বেশ্যা… একটা ছিনতাইবাজ… এই রকম। তাদের সাথে ওই দু মিনিট পাঁচ মিনিটের সাক্ষাৎ… তার মধ্যেই যা হওয়ার… শেষে বাড়ির একদম কাছে এসে এই জীবনের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা এবং এতক্ষণ হিসি চেপে চেপে এসে ব্লাডার খালি করার সুতীব্র বাসনা থেকে রাস্তার ধারের ড্রেনে যখন ও হিসি করতে উদ্যত… তখন পেছন থেকে একটা রামছাগল এসে… রাম গুঁতো। শেষে নেশা ও পেছন দুইই ফেটে ওই ড্রেনেই পপাত চ… ব্যস, এই হল গল্প। মিনিট কুড়ি লম্বা। সুজিত নিজেই হিরো। এখন কথা হল পাগল, বেশ্যা, মদের ঠেক, রাস্তার ধারে ড্রেন সবই তো কলকাতায় চাইলেই অনন্ত মেলে। কিন্তু রামছাগল? আমার নিজস্ব ধারণা সেটাও অপ্রতুল না হওয়ারই কথা। কিন্তু সামহাও সুজিত তার মন মতো রামছাগল খুঁজে পায় না।
শান্তনুকে বলে লাভ হয়নি। অফিসের অন্যান্যরা সুজিতের এই শখকে স্পনসর করে বটে… কিন্তু সল্টলেকের অফিসে বসে রামছাগল স্পট করে তাকে কোঅরডিনেট করে শুটিং স্পটে এনে ফেলা চাট্টিখানি কথা নাকি? শেষে অফিসের যে উদয়দা… যে গ্রামে থাকে… তাকে বলা হল।
“এঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হে… রামছাগল?… হে হে… আমাদের পাশের গ্রামে একজন কসাই থাকে… তার আছে… কিন্তু ভাড়া লাগবে যে… দিন প্রতি।”
সুজিত বলে, “আরে আমি সারাদিন একটা রামছাগল নিয়ে কী করব? আমার তো লাগবে মোটে একটা সিন।”
“এঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ… ওরা ওভাবে তো রামছাগল দেয় না… যাদের ছাগলের বাচ্চা করানোর কারণ ঘটে, তারা সারাদিনের জন্য সেই রামছাগলকে ভাড়া দিয়ে নিয়ে গিয়ে ছাগলিনীদের মাঝে ছেড়ে দেয়। তাতে সারাদিনে মোটামুটি সব বাকি ছাগলী প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে… ব্যবসা… বিজনেস… বুঝলেন না।”
তো… বেশ… সুজিত মোটরসাইকেল দাবড়ে গেল সেই রামছাগল দেখতে। সিঙ্গুর। দেখে এসে সুজিত বাচ্চা ছেলের মতো খুশি হয়ে গেল। দারুণ ফোটোজেনিক নাকি সে ছাগল। আর সুজিতের সেই ছাগলই দরকার। কী বল… কী বীর্য… কী দৃপ্ত ভঙ্গি! কিন্তু মাঝে একটা প্রবলেম… সে রামছাগল থাকে সিঙ্গুরের একটা গ্রামে। আর শুটিং হবে লেকটাউনে। আসবে কী করে এতদূর? টেম্পো ভাড়া পোষাবে না। কারণ বাকিদেরও তো কিছু না হলেও খানিক টাকা তো দিতেই হয়… যেমন পাগল, বেশ্যা ইত্যাদি… প্লাস আরও আনুষঙ্গিক। ঠিক হল অফিসের যে গাড়ি দেয়, সেই প্রভাকরকে বলা হবে। প্রভাকরের প্রচুর টয়োটা ইনোভা পড়ে থাকে। তার একটায় সেই ছাগল চড়িয়ে নিয়ে আসা হবে। প্রভাকরকে টাকা দিলেও চলে… আবার না দিলেও… X এবার প্রভাকরের এতে কিছুই আসত যেত না। গাড়ি দিয়েই দিত, কিন্তু ওর কানে গেল যে তার ইনোভা করে একটা রামছাগল আসতে চলেছে। এমনিতে প্রভাকরের গাড়িগুলো নামীদামি এয়ারলাইনারের ভি আই পি রামছাগল নিয়ে যায়-আসে। কিন্তু তাদের গায়ে তো ভালো গন্ধ। তারা যদি একবার গাড়িতে ওই আসলি রামছাগলের গন্ধ পায় তো গেল। তাই প্রভাকর বাদ। মানে নিজেই খিস্তি মেরে বাদ হয়ে গেল। কী হবে এবার?
এবার কলকাতার ভেতর রামছাগল খোঁজা শুরু হল। প্রচুর পাওয়া যায়… আমি নিজেই জানি। কিন্তু আমায় তো বলেনি। আমায় বরঞ্চ ওর পরের ফিলিমে এক আরব সেখ ভিলেন হতে বলেছে… তাই… শেষে অফিসেরই অক্ষয় একটা ছাগল কোথা থেকে ধরে নিয়ে এল। একদম কচি পাঁঠা। কখনও ফিলিমে পার্ট তো করেইনি, প্লাস জীবনে কোনও প্রেশার সিচুয়েশানেরও সামাল দেয়নি। সে একদম ঝোল হবার জন্য রেডি পাঁঠা। তাকে একটু জোরে ‘এই ছাগল!’ বলে ডাকলেই সে মাথা নীচু করে চূড়ান্ত লজ্জিত হয়ে মুখ লুকিয়ে ‘ম্যা ম্যা ম্যাহ’ করে ডেকে উঠছে। সিঙ্গুরে দেখা সেই রামছাগলের দৃপ্ত ভঙ্গি তার কোথায়? সুজিত বাস্তবিক খুব মনমরা হয়ে পড়ল। তার সিনেমার ক্লাইম্যাক্স… এ পাঁঠা তো হাঁটেই না ভালো করে… গুঁতিয়ে সুজিতের ছ ফুট হিসিরত দেহ কী করে কীভাবে ড্রেনে বিসর্জন দেবে? যাই হোক, সুজিত সফটওয়্যারে দক্ষ। নিজের কাজের চাকরির কারণেই। তাই ঠিক করল, এই কচি পাঁঠাকেই সে সি জি আই টেকনোলোজির সাহায্যে দানব রামছাগল করে তুলবে। হিপোপটেমাসও করে তুলতে পারে, চাইলে। তো শুট করা হল… ক্লাইম্যাক্স। পাঁঠা এসে পেছনে গুঁতোতে চায়নি মোটে। দড়ি দিয়ে হিঁচড়ে আনতে হয়েছিল। পরে সফটওয়্যারে সেই দড়ি হাওয়া করতে হয়েছে। তারপর সেই ছবি কম্পিউটারের স্ক্রিনে সুজিত বানাল এক আশ্চর্য জন্তু। মাথাটা জালার মতো এত বড়… পাছাটা এতটুকুনি… সে যা-তা… সে যাক গে, ওর পরের প্রোজেক্টে আমার আরব সেখ ভিলেনের পার্টটা একদম বাঁধা… আর দাড়ি তো আমার আছেই… কাজে কাজেই…

====================

সংযোজন — এই ভিলেনের রোল কিন্তু হারুণবাবু পেয়েছিলেন। ছবির নাম ‘খঞ্জর’। ইউটিউবে চাইলেই দেখা যায় —
https://www.youtube.com/watch?v=xgWxR52M2zI

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>