তাঁকে নিয়ে কম বই হয়নি এ পর্যন্ত। তবু আরও একটা রইল নতুন করে। নীহারুল ইসলাম নস্রুদ্দীনের বেশ কিছু গল্প বেছে নিয়েছেন তাঁর পরবর্তী বইয়ের জন্যে। নস্রুদ্দীন খোজার গল্পগুলো যেমন হয় — কিছুটা কৌতুক, কিছুটা দর্শন, মুচকি হাসি, হালকা বোকামি।
***
খোজা তখন বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী। তাঁর বাড়িতে ইয়ারদোস্তের অভাব নেই। খাচ্ছে দাচ্ছে, যাচ্ছে আসছে। দিনরাত্রি কোনও বিরাম নেই।
এক পড়শি সব দেখেশুনে একদিন খোজাকে জিজ্ঞেস করল, ‘খোজাসাহেব, আপনার ইয়ারদোস্তের সংখ্যা কত হবে?’
খোজা বললেন, ‘গুনে দেখিনি ভাই।’
‘তা একবার গুনে দেখুন না! কত হয়?’
‘আরে গুনব তার সময় কই? ইয়ারদোস্তের খাতিরদারি করতেই তো সব সময় চলে যাচ্ছে। তবে তুমি যখন বললে, নিশ্চয় গুনে দেখব ’খন।’
‘তা কখন গুনে দেখবেন ’খন?’
‘যখন আমার ধনসম্পদ কিছু থাকবে না।’
***
একজন গেছেন আকশেহির শহরে। তাঁর মনের ইচ্ছে খোজার কবরটা স্বচক্ষে দেখে আসবেন। সেইমতো তিনি গিয়ে দেখলেন সামনে এক বিরাট প্রবেশদ্বার। আর তার বন্ধ দরজায় এক পেল্লাই সাইজের তালা ঝোলানো। লোকটি ভাবছে, খোজার কবরে কী এমন আছে যে, তিনমণি তালা ঝুলিয়ে রেখেছে? শুধু ভাবছেন না, সেই তালায় বাড়ি মেরে দেখছেন যদি খুলে যায়! সঙ্গে এদিক ওদিক গলা বাড়িয়ে হাঁকডাক করলেন, যদি কেউ বেরিয়ে আসে!
হ্যাঁ, বেরিয়ে এল এক পাহারাদার। তবে প্রবেশদ্বার খুলে নয়, সে বেরিয়ে এল পাশের পাঁচিল ডিঙিয়ে। বলল, ‘কী হবে ওই বিশাল তালা খুলে? ওটা কখনও খোলা হয় না। চলুন পাঁচিল ডিঙিয়ে যাই।’
লোকটি জিজ্ঞেস করল, ‘পাঁচিল ডিঙিয়ে যাব মানে?’
‘চলুন দেখবেন, একশ ফুট উঁচু প্রবেশদ্বার অথচ চারপাশের দেওয়াল এক ফুটও নয়। খোজার শেষ মশকরা ছিল এটাই। তিনি বলে গিয়েছিলেন তাঁর কবর যেন এরকমই হয়।’
‘এটা আবার কী রকম মশকরা?’
‘আসলে তিনি বলতে চেয়েছিলেন, এ জীবনে আমরা সামনের দিকটা সামলাতেই অতি ব্যস্ত থাকি, অথচ আর সব দিক দিয়ে সবকিছু বেরিয়ে যায় আমরা তার খেয়াল রাখি না।’
***
নস্রুদ্দীন খোজার কিসসা
নীহারুল ইসলাম
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ — সুমিত রায়
সৃষ্টিসুখ প্রকাশন