ক’দিন আগে কলকাতায় একটি পারিবারিক উৎসবে সায়ন্তিকার বাবার সাথে দেখা। আমাকে দেখেই নিমের পাঁচন খাওয়া মুখ করে সোফাতে বসলেন। টিভিতে তখন কোনও একটি সিনেমা চলছিল, যেখানে দুটি ছেলেমেয়ে ভালোবেসে বিয়ে করে অসুখী দাম্পত্যে জড়িয়ে পড়েছে। কফির কাপে চুমুক দিয়ে আমার দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সায়ন্তিকার বাবা বললেন, “কখনও কখনও এক মুহূর্তের ভুলের ফসল সারাজীবন বইতে হয়, বুঝলে...” আমি সপাটে বললাম, “হ্যাঁ। জলের মতো বুঝলাম।” সায়ন্তিকার বাবা একটু থতমত খেলেন। তারপর অফিসিয়াল স্মার্টনেস বজায় রেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কী বুঝলে?” আমি ঠান্ডা গলায় উত্তর দিলাম, “বুঝলাম এই যে, আপনি একমুহূর্তের ভুল করেছিলেন আর সেই ভুলের ফসল হল সায়ন্তিকা যাকে আপনি তেইশ...
গল্প ২৪-অভীক দত্ত
অভীক দত্ত স্মার্ট লেখে, সপাট লেখে। গল্পটাই লেখে। অহেতুক টেনে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা নেই। আর তাই একেবারে সদ্য ইস্কুল পাশ, কলেজপড়ুয়া বা সদ্য চাকরিতে জয়েন করা নওজওয়ানদের কাছে অভীকের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। বিদেশ থেকে এক সপ্তার ছুটিতে বাড়ি আসা যুবক গলিঘুঁজি খুঁজে সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটে সৃষ্টিসুখের আউটলেটে আসেন অভীকের বই কিনবেন বলে। বা হাইকোর্টে সদ্য প্র্যাকটিসে আসা তরুণী ফোন করে অনুরোধ করেন -- 'ওনার সব বইগুলো আমার চেম্বারে পাঠিয়ে দেবেন প্লিজ? যা লাগে দেব।' ২০১৮ কলকাতা বইমেলায় তাই তামাম পাঠককুলের চাহিদা মাথায় রেখে সৃষ্টিসুখ প্রকাশন থেকে পার্থপ্রতিম দাসের করা মলাটে অভীকের নতুন দু-ডজন গল্প নিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে 'গল্প ২৪'।
ত্রিস্তর-রাজর্ষি দাশ ভৌমিক
সব স্বৈরাচারীই কি একলা? প্রশ্নটা করার পরেই মনে হল শ্রীমন্ত নস্কর কি আদৌ স্বৈরাচারী ছিলেন? নাটকের দল ছিল তাঁর। গাঁ-গঞ্জে থিয়েটার করে বেড়াতেন। হঠাৎ একদিন পার্টি থেকে তাঁকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দেয়। তখন দেশ জুড়ে অন্য হাওয়া, শ্রীমন্ত এবং তাঁর পার্টির অনেকেই জিতে গেলেন। লেখাপড়া জানার সুবাদে আর থিয়েটার করায় পরিচিত মুখ হওয়ার কারণে তিনিই হলেন তালদা তালদা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। তারপর দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর রাজনীতির নিয়ম মেনে হেরেও গেলেন একদিন। কিন্তু তাঁর দলের বাকিরা থেকেই গেল ক্ষমতায়। পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হলেন শ্রীমন্তর সহযোগী পরান মণ্ডল। তাহলে কি ষড়যন্ত্র করে সরানো হল শ্রীমন্তকে? শ্রীমন্ত ভোটে হেরে [caption id="attachment_4085"...
পৃথিবীর বাইরের শহরে-সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়
গাছ আজ তার মাটি আর টব নিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। আমার মনখারাপ। ওয়াতাশিভা বলছে, ‘আটকিও না’। আটকাচ্ছি না। আমিও আজ জানি, পৃথিবীর যে কোনও স্তরেই কেউ কারও না। অধিকার আসলে একটা মিথ। যে মিথ বা মিথ্যেটা আছে বলেই আমরা কোনো-না-কোনো স্তরে বেঁচে থাকতে পারি। কিন্তু আমি তো ‘সত্যি’ খুঁজতে চেয়েছিলাম, আর তাই... আর কোনও মিথ্যেকে আঁকড়াব না কখনও। গাছ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে... শেষবারের মতো আমি ওকে বুকের আলো দিচ্ছি। শরীরের জল দিচ্ছি। শেষবারের মতো... হাঁ করে... বাতাস দিচ্ছি ওকে। গাছ এইবার হেঁটে যাচ্ছে। পৃথিবীর এত এত গাছের মধ্যে হারিয়ে যাবে ও। ওর কোনও জন্মদাগ নেই। জন্মব্যথা আছে, আর...
আমোদিনীর আরশি-সঙ্গীতা দাশগুপ্তরায়
বাপির যাওয়ার ডাক এল খুব জলদি। যেদিন চলে গেল বাপি, সেদিনই যেন হঠাৎ করে অনেকটা বয়স বেড়ে গেল মামুর। কেবল ঘুরেফিরে মাথা নাড়ে আর বলে, “আমায় ‘গোরাবাবু’ বলে আর কোনোদিন ডাকবে না কেউ!” আমোদিনী চায়ের কাপটা মুড়ির বাটিটা নিয়ে সামনে যায়। এখন তো সে আর ছোটটি নেই। দুজনেই নিঃশব্দে চোখ মোছে। কাজকম্ম মিটিয়ে ফেরার সময় আমোদ মামুর হাত ধরে বলে, “সাবধানে থেকো মামু। তুমি ছাড়া...” মামু ধমকে বলে, “ওসব বলে কাঁদাবি নাকি আবার আমাকে! আমি ঠিক থাকব। তুমি ঠিক থেকো, মা-কে দেখো...” আমোদিনী আশ্বস্ত হয়। মামু তো বলেইছে ঠিক থাকবে। শুধু খেয়াল থাকে না যে কতদিন ঠিক থাকবে সে হিসেব...
মায়াজন্ম-সেলিম মণ্ডল
এঁটো বাসন-কোসন মেজে মা যখন চকচকে থালায় ভাত বাড়ে হে রাষ্ট্র, তখন তোমার কথা না মনে পড়ে, খেটে খাওয়া বাবার কথা বাবা শিল্প বোঝে না বোঝে, আমরা তিন অভুক্ত প্রাণী রাষ্ট্র নামক কোনও কুয়োর ভিতর আটকে আছি আরও অনেক প্রাণীর সাথে ============= সৃষ্টিসুখ প্রকাশন থেকে কলকাতা বইমেলা ২০১৮-য় প্রকাশ পেতে চলেছে সেলিম মণ্ডলের প্রথম বই 'মায়াজন্ম'। প্রচ্ছদ এঁকেছেন নক্ষত্র সেন।
বউ সিরিজ রিভিউ-সুমন সরকার
অঞ্জন চৌধুরীর বউ সিরিজের বইগুলো দেখেছিলেন? চোখের জলে নাকের জলে নাকানি চোবানি খাওয়া সেইসব ছবির রিভিউ আর সঙ্গে আরও কিছু গদ্য নিয়ে সুমন সরকারের এই বইটা পড়ুন এবার। সৃষ্টিসুখ থেকে প্রকাশিত হতে চলা বইটি পাওয়া যাবে কলকাতা বইমেলা ২০১৮-য়। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সুমিত রায়।
আবছা অ্যালবাম – ইস্টম্যানকালার:ঈশানী রায়চৌধুরী
বুদ্ধদেব গুহ বইটির ভূমিকায় লিখলেন -- ঈশানীর স্মৃতিকথন ‘আবছা অ্যালবাম - ইস্টম্যানকালার’-এর পাণ্ডুলিপি দেখলাম। চোখে এখন দেখতে পাই না, তাই একজন পড়ে শোনাল। শুনে আমি অভিভূত। ঈশানীর লেখার হাত এবং দেখার চোখ, দুই-ই অত্যন্ত চমৎকার। উত্তর কলকাতার একটি বনেদী বাড়িতে বড় হয়ে ওঠা, তার কলেজ-জীবন এবং যৌথ পরিবারের আবহ, এই সবকিছু ফুটে উঠেছে এই লেখায়। তার দাদুর স্নেহ এবং প্রশ্রয় তাকে যেভাবে ঘিরে ছিল বর্মের মতো এবং দাদুর মৃত্যু... সেই বর্ণনা দিয়ে এই বইয়ের শুরু। অনুপুঙ্খভাবে। তারপর এসেছে তার লেখাপড়ার জগৎ, বন্ধু-বান্ধবীদের কথা এবং নানা অধ্যাপকের শারীরিক ও চারিত্রিক গুণাবলী সম্বলিত সরস ও সসম্ভ্রম বর্ণনা। রক্ষণশীল সমাজের টুকরো ছবিও এসেছে।...
নস্রুদ্দীন খোজার কিসসা -নীহারুল ইসলাম
তাঁকে নিয়ে কম বই হয়নি এ পর্যন্ত। তবু আরও একটা রইল নতুন করে। নীহারুল ইসলাম নস্রুদ্দীনের বেশ কিছু গল্প বেছে নিয়েছেন তাঁর পরবর্তী বইয়ের জন্যে। নস্রুদ্দীন খোজার গল্পগুলো যেমন হয় -- কিছুটা কৌতুক, কিছুটা দর্শন, মুচকি হাসি, হালকা বোকামি। *** খোজা তখন বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী। তাঁর বাড়িতে ইয়ারদোস্তের অভাব নেই। খাচ্ছে দাচ্ছে, যাচ্ছে আসছে। দিনরাত্রি কোনও বিরাম নেই। এক পড়শি সব দেখেশুনে একদিন খোজাকে জিজ্ঞেস করল, ‘খোজাসাহেব, আপনার ইয়ারদোস্তের সংখ্যা কত হবে?’ খোজা বললেন, ‘গুনে দেখিনি ভাই।’ ‘তা একবার গুনে দেখুন না! কত হয়?’ ‘আরে গুনব তার সময় কই? ইয়ারদোস্তের খাতিরদারি করতেই তো সব সময় চলে যাচ্ছে। তবে তুমি যখন...
হাওয়া শহরের উপকথা-অলোকপর্ণা
অলোকপর্ণা 'ঝিঁঝিরা' লেখার পর লেখক হিসাবে বেশ কিছুটা রাস্তা পেরিয়ে এসেছে। বর্ণনা আরও সংযমী হয়েছে, ভাষা আরও বলিষ্ঠ। নতুন লেখকদের জন্যেই সৃষ্টিসুখ, র বই করতে গিয়ে সেই কথাটাই বারবার মনে পড়ে যায়। দ্বিতীয় গদ্য সংকলন 'হাওয়া শহরের উপকথা'র প্রচ্ছদ এঁকেছেন আর এক তরুণ তুর্কি, সৃষ্টিসুখ পরিবারের নতুন সদস্য নক্ষত্র সেন।