প্রখ্যাত ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সুকুমার রায়ের বন্ধু ছিলেন। একদিন বিকেলবেলা সুকুমার তাঁকে বলেন, “আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?” সুনীতিকুমার কোথায় জানতে চাওয়ায় সুকুমার বলেন তাঁর এক পরিচিত ভদ্রলোক গত হয়েছেন, সেই ভদ্রলোকের শোকসভা হবে ব্রাহ্মসমাজ হলে। সুকুমার যাবেন, যদি সুনীতিকুমারও সঙ্গে যান। সুনীতিকুমার জানালেন, ইতিপূর্বে তিনি সুকুমারের সঙ্গে কিছু জায়গায় গিয়েছেন এবং তাঁর সেই পূর্ব অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর ছিল না। সুকুমার তাঁকে আশ্বস্ত করেন, তিনি এমন কিছু করবেন না যাতে সুনীতিকুমার বিপদে পড়েন। দুজনে ব্রাহ্মসমাজ হলে গিয়ে উপস্থিত হন।
সেখানে সবাই সেই প্রয়াত মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। কেউ কেউ ব্রাহ্মসঙ্গীত পরিবেশন করেন। একেবারে শেষে সুকুমার বলেন যে, তিনি একটি গান গাইতে ইচ্ছুক। সবাই একমত হয়ে তাঁকে গান করার অনুমতি দিলে তিনি হারমনিয়াম সহযোগে গাইতে শুরু করেন ‘কাঁদো রে মন কাঁদো রে’। এই একটি লাইন তিনি অন্তত কুড়ি-পঁচিশবার বিভিন্নভাবে গাইলেন। সকল শ্রোতা আপ্লুত হয়ে পড়েছেন, এমন সময় তিনি দ্বিতীয় লাইনটি গান। সেটি ছিল, ‘আমার মনবাগানের সখের তরুর ফল খেয়ে যায় বাঁদরে’।
সুনীতিকুমার বলেছিলেন, তারপর যা হয়েছিল, তা আর না বলাই ভালো। তবে এরপরে শত অনুরোধেও সুনীতিকুমার আর সুকুমারের সঙ্গে কোথাও যাননি।
=========
ওপরের অংশটি বিমোচন ভট্টাচার্য-র স্মৃতিকথামূলক বই ‘তোমার পরশ আসে‘ থেকে নেওয়া। বইটির নির্বাচিত অংশ পাওয়া যাবে এখানে।
Be the first to review “তোমার পরশ আসে”