ফেলে আসা দিনের সঙ্গে যে গল্প জমে, তার নাম কখনও স্মৃতি, কখনও মনকেমন। আমরা যত এগিয়ে যাই, তত শুনি পিছুডাক। আর ভিড় করে আসে সেই হালখাতার দিন, সেই ক্যালেন্ডার আর রসে চেপেচুপে যাওয়া মিষ্টির প্যাকেটের দিন। মনে পড়ে যায় মা-ঠাকুমা আর দিদিদের হাতে নাড়ু বানানোর দিন, সেই প্রসাদ হওয়ার আগে নাড়ু খাওয়ার আহ্লাদ। রাসের কীর্তন, অঙ্গরাগ আরও কত ছাপোষা দিনকাল মহার্ঘ স্মৃতি হয়ে ধরা দেয়। আর আমরা বুঝতে পারি, আসলে আমাদের এখনকার জীবনের সঙ্গে যেন প্রতিনিয়ত দেখা হয় এক পুরনো বন্ধুর। সে বন্ধু আসলে আমাদের ফেলে আসা জীবনই। ফলে নিয়ত চলে আদানপ্রদান– একদিকে যেমন নস্ট্যালজিয়া, অন্যদিকে তেমন এই সময়ের হালহকিকত। গদ্য থেকে গদ্যের ভিতর ঢুকে পড়ে সময়ের স্রোত। আর তাই বিয়েবাড়ির ভিডিও থেকে ভুয়ো ডাক্তার বা ভেজাল বেবিফুডের দিনকাল ক্রমাগত উঠে আসতে থাকে। স্মৃতি আর সত্তার এই দেনাপাওনাই যেন আমাদের জীবনযাপন। সে যাপনেরই দিনলিপি লিখেছেন বিনোদ ঘোষাল। যাঁর কলমে কাহিনিরা সততই পাখা মেলে। এই গদ্যেরা কাহিনি নয় ঠিকই, তবে নিখাদ সত্যি হয়েও কাহিনির থেকে কম কিছু নয়। আসলে ওই ফেলে আসা দিনের সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে, তখনই যেন আমরা বুঝতে পারি, যে গল্প আমরা করতে চাই, সে সব আসলে গল্পই না।
পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে বিনোদ ঘোষালের এই গদ্যগুলি। সে স্বাদ তাই পাঠকের অজানা নয়। তবে একাধারে দু-মলাটের ভিতর তাদের পাওয়া, নিঃসন্দেহে এই বইমেলায় বিনোদের অনুরাগীদের কাছে অন্য এক অভিজ্ঞতাই হয়ে উঠতে চলেছে।
Be the first to review “গল্প না”