কাঁদনাগীত বা কাঁদনাগীতি পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের জনজীবনের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর আবেদন করুণরসে মোড়া। সেসময়ে যে-জায়গাতে যেসব বাইরের লোকও থাকেন, তারাও সেই ভারী পরিবেশে গানের ব্যাকুল বেদনায় হৃদয়ভাবপ্রপীড়িত হয়ে পড়েন। কাঁদনাগীতির সঙ্গে তার পরিবেশ, ভাষা ও সুর– একটি অবিচ্ছেদ্য ঐক্যে বিধৃত হয়ে আছে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী এবং মেধাবী ছাত্রী বেবী সাউ, ভাষাকে ভালোবেসে, শেকড়ের টানে, বিপুল উদ্যমে মাটির সঙ্গে যোগ রেখে, প্রায় পাঁচ বছর ধরে সুবর্ণরেখা অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে এই কাঁদনাগীতগুলি সংগ্রহ করে। স্নাতকোত্তর স্তরে গবেষণাটিকে জমাও করে। আগত পরীক্ষকরা ওর এই কাজটি দেখে যারপরনাই মুগ্ধ এবং উচ্চ প্রশংসা করেন। বেবী, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়। এখন সেই কাজটি বই আকারে প্রকাশ পাচ্ছে জেনে, খুব আনন্দ হচ্ছে। এতদিনের এই হারিয়ে থাকা গানগুলিকে এভাবে বিদগ্ধ সমাজের কাছে তুলে ধরেছে, ধরতে পেরেছে শুধুমাত্র ওর নিষ্ঠার সঙ্গে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসে বলেই। বেবী সাউ কবি হিসেবে ইতিমধ্যেই বোদ্ধা পাঠকদের সমীহ আদায় করে নিয়েছে। ওর প্রতিটি কাব্যগ্রন্থ -ই স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল। ও এখন গবেষণা জগতে পদার্পণ করে, এই ‘কাঁদনাগীতঃ সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থ উপহার দিয়েছে, তাতে তার গবেষণাশক্তির পরিচয়টিও প্রকাশিত। ও এইক্ষেত্রেও যে সফল হবে, তাতে আমি নিঃসন্দেহ। ওর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেই বলছি — চরৈবেতি, চরৈবতি…
সমীরকুমার সরকার
( অধ্যাপক, প্রধান, বাংলা বিভাগ, জামশেদপুর গ্রাজুয়েট কলেজ)
Be the first to review “কাঁদনাগীত”