বইয়ের নাম ‘আশ্চর্য ভ্রমণ’। শুনে প্রথমেই মনে হয়, কী এমন ভ্রমণ যে তা আশ্চর্য! তবে কি কোনও শৃঙ্গবিজয়ের অভিযান বা কোনও প্রায় দুর্গম স্থানে দুঃসাহসী ভ্রমণের দিনলিপি তুলে ধরেছেন লেখক সব্যসাচী সেনগুপ্ত! অথচ গোড়াতেই লেখক জানাচ্ছেন, প্ল্যান ছিল মোটে দিঘা যাওয়ার। তারপর ঠিক কোথায় গেলেন লেখক ও তাঁর বন্ধুরা, তা না বললেও, আঁচ করে নেওয়া যায়, দিঘা যাওয়ার প্ল্যান করে কেউ মঙ্গলে পাড়ি দেওয়ার মতো কষ্টকল্পনাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না। তাহলে এ ভ্রমণ কেন আশ্চর্য! সেই তো ভাগাভাগি করে চাঁদা দেওয়া, কখনও গাড়ি মিস করা, কখনও হোটেলের নানা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বা এরকমই নানা চেনা বা কম চেনা ঘটনার সমাহার। তাহলে আশ্চর্যটা কীসের?
এ কাহিনি ধরে যত এগোনো যায়, তত মালুম হয় আশ্চর্য আসলে এই পুরো ভ্রমণটাই। এই ভ্রমণ ঠিক আজকের বা সাম্প্রতিক নয়। আজ পিছু ফিরে তাকালে মনে হয় সে যেন কোনও গতজন্মের কাহিনি। অথচ আমরা তাকে জীবনের আবর্তে ফেলে এসেছি, সংখ্যার হিসেবে হয়তো এই বছর কয়েক আগেই। বছর কয়েক আগেই ছিল সেই কলেজ জীবন, সেই জীবনকে হাত পেতে চেটেপুটে নেওয়ার সু-অভ্যেস। আজও কি তা নেই! আছে হয়তো! তবু ধারালো সময় যখন দুই জীবনের মাঝে চেপে বসে, তখন অজান্তেই যেন একরকমের বিভাজন চলে আসে। অচেনা হয় অতীত। আবার তাকে ছুঁতে ভীষণ মন চায়। তবু তা সম্ভব নয়, সেটাই বাস্তবতা। এই দ্বন্দ্ব হেতুই রক্তক্ষরণ তথা নস্ট্যালজিয়া। সেই মেদুর দৃষ্টি যেন আজ, এই সময়ে দাঁড়িয়ে ওই ভ্রমণ কিস্সার পরতে পরতে খুঁজে পায় কেবলই বিস্ময়। আজ সত্যিই আশ্চর্য মনে হয় সে ভ্রমণ। এ বই তাই ভ্রমণের নয় কিছুতেই, আবার ভ্রমণেরই বটে।
Be the first to review “আশ্চর্য ভ্রমণ”