‘অবান্তর’ বইটি কেমন? কেনই বা এই লেখারা সব ‘অবান্তর’। পাঠ-প্রতিক্রিয়া খ্যাতনামা সাহিত্যিক সৈকত মুখোপাধ্যায়ের। —
“অবান্তর” নামেই একটা ব্লগ লিখতেন কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই কিছু লেখার প্রিন্ট ভার্সন এই বই। প্রকাশক সৃষ্টিসুখ।
পঁয়ত্রিশটা ছোট ছোট লেখার সংকলন। লেখাগুলো জাতে অ্যানেকডোটাল, স্মৃতিকথামূলক। অবান্তর আর স্মৃতি এই শব্দদুটোকে কাছাকাছি দেখলেই মনে পড়ে যায় “অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে তোমার মুখ অশ্রু ঝলোমলো”। কিছু করার নেই।
তুচ্ছ সব স্মৃতি। তুচ্ছ সব ঘটনা…স্থান… মানুষ। আবারও মনে পড়ে যায় রবি ঠাকুরের কবিতা। “এই যে এসব ছোটোখাটো, পাইনে এদের কূলকিনারা। তুচ্ছ দিনের গানের পালা আজও আমার হয়নি সারা”।
এইসব তুচ্ছ স্মৃতিগুলোকেই অসামান্য লিখনশৈলীর রসে জারিয়ে কি আশ্চর্য কান্ডই যে ঘটিয়েছেন লেখিকা, না পড়লে বিশ্বাস করা যায় না। তুমুল হিউমার। হাসতে হাসতে চোয়ালে ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ শেষদিকের দুটো প্যারাগ্রাফে এসে ব্যথাটা স্থানান্তরিত হবে গলার গুটলিতে। চোখ ভিজে যাবে।
কিন্তু এই যদি সব হত, তাহলে নিশ্চয় সাতটা প্রিয় বইয়ের মধ্যে এই বইটাকে রাখতাম না। পঁয়ত্রিশটা লেখার মধ্যে আরো এক সংক্রামক প্রত্যয় ধরা আছে — কিছুই হারায় না। হারায় যা তা হারায় শুধু চোখে। ঠাকুমা, মা আর নাতনি মানে কুন্তলার স্মৃতির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় একই মেধা, সৌন্দর্যপ্রিয়তা, ভালোবাসা।
এইখানেই স্মৃতি আর শুধু স্মৃতিকথা থাকে না। সত্ত্বা হয়ে ওঠে। ভবিষ্যতের দিকে ধায়। অশ্রুর আড়ালে তখন প্রিয় এক মুখের মতন ঝলমল করে ওঠে ” অবান্তর”।
Be the first to review “অবান্তর”