অরণ্য রায়কে চেনেন? শীর্ণ, অবিন্যস্ত চুলে ঘুরে বেড়ানো বছর ২৮-২৯-এর যুবক। পদার্থবিদ্যার গবেষক। সমস্ত এলোমেলোর, অবিন্যস্ততার মধ্যেও তাই তার চোখেমুখে বুদ্ধির ছাপ নজর এড়ায় না। সেই অরণ্য রায় জড়িয়ে পড়ে একের পর এক ঘটনায়। রহস্য ঘিরে ধরে। আর তত বুদ্ধির আগল খুলতে থাকে অরণ্যের। মগজাস্ত্রের অনুশীলন চলে জোরদার। বিজ্ঞানের সূত্র আর তত্ত্ব ধরে আপাত ধোঁয়াশাময় ঘটনাগুলির যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যায় ভরে ওঠে অরণ্য রায়ের নোটবুক। আর পাঠক এক সাবলীল বিজঙানভিত্তিক পরিক্রমার অন্তে খোঁজ পান রহস্যমুক্তির।
এই অরণ্য রায় তার সব কর্মকাণ্ড নিয়ে হাজির তরুণ লেখক দেবব্রত বিশ্বাসের কলমে। তারই ফসল ‘এবার অরণ্যে’, প্রকাশিত সৃষ্টিসুখ প্রিন্ট থেকে । আত্মভোলা তবু ঝকঝকে, বুদ্ধিদীপ্ত এক যুবকের সঙ্গে দু-মলাটের এই সফর পাঠক উপভোগই করবেন।
প্রচ্ছদ — সুমিত রায়
Dr. Dhoumendra Mandal
‘এবার অরন্যে’র দুটি গল্পই আমার বেশ লেগেছে। দুটি গল্পেরই plot গুলির মধ্যে নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া গেছে। পরিবেশ সৃষ্টি ও যথাযথ সংলাপের জন্য লেখক যথেষ্ট কৃতিত্বের দাবী রাখে। রহস্য মুক্তির জন্য বিজ্ঞান এবং মনস্তত্ত্বের নতুন নতুন তথ্য পাঠককে সমৃদ্ধ করবে। আসা রাখি, ভবিষ্যতে রহস্য আরো ঘনীভূত হবে এবং অরন্য রায় নিজেকে বিকশিত করার আরো সুযোগ পাবে।
Sandip Mondal
সৃষ্টিসুখ থেকে প্রকাশিত তরুণ লেখক দেবব্রত বিশ্বাসের নতুন বই ‘এবার অরণ্যে’ আসলে দুটি ছোট উপন্যাস ‘বেলা শেষের গান’,ও ‘মরণের এপার হতে’র সংকলন।আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে লেখকের দক্ষতা প্রশংসনীয়।তার সাথে ছোট ছোট বাক্যে সাবলীল গদ্যের সাথে পরিমিত হিউমারের ব্যবহার এ বইকে সুখপাঠ্য করে তুলেছে।এ তুলনা করার সময় যদিও আসেনি তবুও এ লেখায় যেন হুমায়ুন আহমেদের স্বাদ মেলে।’বেলাশেষের গান’এ তাসানন্দ খেলা যেন মিসির আলির ESP টেস্ট কে মনে করায়। অরণ্য রায়ের নোট নেওয়া বা paranormal ঘটনার ব্যাখ্যাও মনে করিয়ে দেয় মিসির আলিকে।তাইবলে অরণ্য রায় মিসির আলি নন।’মরণের এপার হতে’তে দেখি সে যেন মিসির আলির মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণী ক্ষমতার সাথে ফেলুদার মগজাস্ত্রের রহস্যভেদী ক্ষমতার অধিকারী।এই দুয়ের সাহায্যে সে গণেশ সমাদ্দারের Near Death Experience পরীক্ষা থেকে নিজেকে রক্ষা করে পাঠককে ভরসা জোগায় যে অদূরে বাংলা সাহিত্যে হয়তো এক আইকনিক চরিত্র হতে চলেছে অরণ্য রায়।যদিও অনেক পথ চলা বাকি।
ধরুন আপনি সাহিত্য অনুরাগী কিন্তু বর্তমানে আপনার প্রথম প্রেম মোবাইল,ইন্টারনেট-সেক্ষেত্রে চিন্তা নেই এ বই আপনাকে আপনার প্রথম প্রেম থেকে দূরে পাঠাবে না,বরং আপনার অনুসন্ধিৎসু মনের খিদে মেটাতে বারবার গুগল করতে হবে ট্রানজিসন ফেজ,ইনফিনিটি লুপ, রায়টার্স ব্লক বা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাই এর ব্যাপারে।অথবা আপনি স্ট্রিং থিওরি নিয়ে একটু জানতে চাইবেন যা আপনাকে জানাবে শ্রোডিংগারের সেই বন্ধ বাক্সের কথা যেখানে নাকি একটা বিড়াল একই সাথে জীবিত বা মৃত অবস্থায় আছে,কিংবা হয়তো আপনি মাল্টিভার্সে মজে গেলেন।
আসলে আপনি যদি সাহিত্য রসিক হন তো এ বই আপনাকে বিজ্ঞান পিপাসু করে তুলবে,আবার আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র হলে এ বইয়ের নান্দনিকতায় আপনার সাহিত্যে অনুরাগ আসবেই।লেখকদের প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় -এ আপনারা লেখেন কিভাবে?সৈয়দ মুজতবা আলী এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন,”আমি আমার সন্তানদের দেখাতে পারি,কিন্তু সন্তান উৎপাদনের পদ্ধতি দেখাতে পারি না।”কাজেই এ প্রশ্ন পাঠকের মনেই থাক।এ রহস্য লেখকের নিজস্ব।কয়েক স্থানে একই বাক্য পুনঃ ব্যাবহার আর কিছু বিশেষণের বেঠিক প্রয়োগ ছাড়া ত্রুটিহীন এ লেখা।মোটকথা আধুনিক পাঠকের মনের রসনা তৃপ্তিতে সম্পূর্ণ সফল এ বই।
বইটিতে মুদ্রণপ্রমাদ প্রায় নেই।লেখার ফন্ট,পাতার কোয়ালিটি চোখের আরাম দেয়।প্রচ্ছদের ছবিতে কনট্রাস্ট রঙের ব্যবহার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।ছবিটিও কৌতূহল জাগায়।তবে ছবির মান আরও একটু ভালো হতে পারতো।আর মাত্র দুটি ছোট কাহিনীর সংকলনে মন ভরলো না,আরও কয়েকটির অন্তর্ভুক্তি হলে ভালো লাগতো।
Indrajit Mitra
একটা অসাধারণ নভেলার কালেকশন। দুটো গল্পই অন্য এক জগৎ থেকে থ্রিল বয়ে আনে। অসাধারণ প্লট আর ক্যারেকটারের খেলায়, লেখার লালিত্যে সত্যি লোভনীয় এই বই। লেখকের কাছে এরকম লেখা আরও বেশি বেশি করে পড়তে চাই। সৃষ্টিসুখ প্রকাশনাকে এরকম একটা বই বের করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
Review By Eminent Writer Riju Ganguly
Link of the Goodreads Comment:
https://www.goodreads.com/book/show/54279707
কিছুদিন পর-পরই নানা গ্রুপে পাঠকেরা একটা প্রশ্ন তোলেন— “হুমায়ূন আহমেদের মিশির আলি সিরিজ পড়ে আমি মুগ্ধ। এইরকম আরও লেখা পড়তে চাই। সন্ধান দিন।”
সত্যি বলছি, আমি নিজেও এইরকম লেখার সন্ধান করে চলেছিলাম দীর্ঘ-দীর্ঘদিন ধরে। অ্যাবনরমাল সাইকোলজি আর প্যারাসাইকোলজির অমন মিশ্রণ আর স্বাদু ভাষা যিনি পড়েছেন তিনিই ওইরকম লেখা আরও খুঁজবেন। সেটাই স্বাভাবিক।
পাইসি!
নবীন লেখক দেবব্রত বিশ্বাস-এর এই বইটি প্রায় ‘নীরবে দূরে’ প্রকাশিত হয়েছিল গতবছর। সুমিত রায়-এর করা প্রচ্ছদ দেখে ধারণা করাও অসম্ভব যে এই শীর্ণকায় বইটিতে এমন কিছু থাকতে পারে। তাই বইটা হাতে নিয়েও যদি কেউ রেখে দিয়ে থাকেন তাহলে তাতে কিছুমাত্র অস্বাভাবিকত্ব নেই।
ঠিক কী আছে এই বইয়ে?
পদার্থবিদ্যার শিক্ষক অরণ্য রায় নিভৃতচারী। ক্লাস নেওয়া, জটিল গণিতে ঠাসা বইয়ে ডুবে থাকা, আর বিকেলবেলা কৃষ্ণসায়রের চারপাশে দু’পাক হাঁটা— মোটামুটি এটাই তাঁর দিনলিপির বিষয়। একাকিত্বের সঙ্গে “তুমি একজনই শুধু বন্ধু আমার, শত্রুও তুমি একজন” সম্পর্কে আবদ্ধ অরণ্যের দুটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা নিয়ে এই বই।
প্রথম কাহিনি ‘বেলাশেষের গান’।
অরণ্য’র বৈকালী ভ্রমণের সময় তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় একজনের। মানুষটি অসম্ভব ভালো গল্প বলেন। কিন্তু তাঁর আচরণ রহস্যময়। যে আখ্যানটি তিনি বলছেন সেও ভারি অবাক-করা। মানুষটি দাবি করেন, তাঁর লেখা গল্পরা নাকি সত্যি হয়ে যায়! এদিকে গল্প অসম্পূর্ণ থাকার মাঝেই অরণ্য’র সঙ্গে দেখা করতে আসে এক অপরূপা— যার কথা ও আচরণের অর্থ না বুঝলেও তাকে উপেক্ষা করতে পারে না। সব মিলিয়ে বোঝা আর না-বোঝার অদ্ভুত কুয়াশায় হারিয়ে যেতে থাকে অরণ্য।
কে এই লেখক, যাঁর নাম আগে কখনও শোনেনি অরণ্য? তাঁর বক্তব্য কি সত্যি? কী চান তিনি? আর… কে ওই মেয়েটি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা নিয়েই লেখা হয়েছে অত্যন্ত চমৎকার বড়োগল্পটি। এতে কিছু-কিছু বর্ণনার মেদুরতা, ন্যারেটিভের মাঝে নানা বৈজ্ঞানিক তথ্য, জীবনানন্দের কবিতা— সব পড়ে সত্যিই বড়ো বেশি করে মনে পড়ে মিশির আলি’র স্রষ্টাকে।
দ্বিতীয় কাহিনি ‘মরণের এপার হতে’।
কোয়ান্টাম থিওরি দিয়ে কি অবচেতনের রহস্য ভেদ করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অরণ্য যখন বিভ্রান্ত, সেইসময় এক চিকিৎসক অরণ্যকে আহ্বান জানান তাঁর বাড়িতে ক’দিন থেকে যাওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে বোঝা যায়, চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তারটি এমন বেশ কিছু রোগীর সান্নিধ্যে এসেছিলেন, যারা মৃত্যুর খুব কাছে গিয়েও ফিরে এসেছে। তাদের সেইসব নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স তিনি রেকর্ড করে রেখেছেন। তাঁর অনুরোধে অরণ্য সেই রেকর্ড বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এমন একটি প্যাটার্ন পায় যার অর্থ অত্যন্ত মারাত্মক। এরই মধ্যে তার সঙ্গে ঘটে যায় এক ব্যাখ্যাতীত ঘটনা।
কী হয় এরপর? অরণ্য কি খুঁজে পায় এ-সবের অর্থ?
এই কাহিনিতে মায়াবি বর্ণনা কম, কিন্তু রহস্য সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করেছে৷ একরাতে ঘুম ভেঙে অরণ্য’র যে অভিজ্ঞতা হয় তা পড়তে গিয়ে আমার রীতিমতো গা-ছমছম করছিল— এ-কথা অকপটে বলি। গল্পের শেষে সমাধানটিও চমকপ্রদ। হয়তো ‘বৃহন্নলা’-র উচ্চতায় উঠতে পারেননি লেখক। তবে তিনি সঠিক পথেই এগিয়েছেন।
আমার খুব-খুবই ভালো লেগেছে এই দু’টি লেখা। ভরসা রাখি, পাঠকের আনুকূল্য পেলে লেখক এই ধারায় আরও লেখা উপহার দিয়ে আমাদের ‘অরণ্যচারী’ করে রাখবেন।