ফালগুনী ঘোষ লিখলেন।
আমরা যারা এইটিজের মাঝামাঝি থেকে নাইনটিজের শেষের মধ্যে নিজেদের বালক-বালিকা বা কিশোর-কিশোরীবেলা কাটিয়েছি তারা বোধ হয় সকলেই আনন্দমেলার ভক্ত ছিলাম। আমি তো মারাত্মকভাবেই ছিলাম। মাসকাবারির হিসেবে সে বই আসত। পাতে পড়ামাত্রই টানাটানি তিনবছরের ছোটো ভাইয়ের সাথে। জিতত সে-ই। ছোটদের বড়রা অনেকসময় জিতিয়েও দেয়। কিন্তু মন পড়ে থাকত পাণ্ডব গোয়েন্দার পাঁচ মূর্তির দিকে। এরপরে কী যে হল, সেই ভাঙাবাড়িতে ঢুকে তারা কি পারল গুপ্ত রহস্য উদ্ধার করতে?
কিংবা সন্তু কাকাবাবুর সবুজদ্বীপে কত ঘুরে বেড়াতাম রাতভর। আরো ছিল ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু। এদের হাত ধরে গা ছমছমে সব অভিজ্ঞতা ঝুলিতে এসে জড়ো হত। তখন তো বুদ্ধিশুদ্ধি এমন দরকচা মেরে যায়নি! তাই বেশি কিছু ভাবার আগেই বিচিত্র সব আবিষ্কার, দেশ, মহাকাশ, ঘটনা একেবারে জলবৎ তরলং হয়ে জিতে নিত টুকরো দিল। অথচ বইয়ের পাতায় বিজ্ঞান, ইতিহাসে প্রবল অনীহা। শিক্ষিকা হতে গেলে যে যন্ত্রণা সহ্য করে ওগুলো গলাধঃকরণ করতে হয়, তাই করেছি। অথচ প্রফেসর শঙ্কুর কল্পবিজ্ঞানে ডুবে যেতে গিয়ে চোখ চকচক করে উঠত।
এত কথা আজ বলছি কেন! কারণ অলোক সান্যাল এর বারীন রায়ের বাঁশি। গল্প আছে তিনটে। কতদিন পর আবার ইতিহাস আর কল্পবিজ্ঞানে মজে গেলাম বঙ্কুবাবু, ফেলুদা, জমিদার বারীন রায়ের হাত ধরে। ছোটবেলার অভ্যাসে এখনও আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকী বাড়িতে আসে, কিন্তু হামলে পড়াটা খুব মিস করি। পড়তে গিয়ে ঠোক্কর খাই। ক্বচিৎ দু-একটা লেখা হালকা বাতাসের মতো ছুঁয়ে যায়। কিন্তু আসর জমিয়ে তুলতে পারে না। আর এই বই হাতে নিয়ে সেই স্বাদ ফিরে পেলাম।
Be the first to review “বারীন রায়ের বাঁশি”