ছোটদের বই ছোটরা কি আর পড়ে? হ য ব র ল থেকে প্রকাশিত অদিতি ভট্টাচার্য্যর ‘খেলতে খেলতে’ পড়তে পড়তে এই বুড়ো বয়সেও নিজেকে ছোট মনে হচ্ছিল। বইটির প্রচ্ছদ, বাঁধাই, ছাপা মনকাড়া। আমি লেখিকাকে চিনি না। সত্যি বলতে কী, বইটির ঝকঝকে প্রোডাকশান দেখেই এই বইমেলায় হাতে তুলে নিয়েছিলাম। বলাই বাহুল্য, ঠকিনি।
প্রথম গল্প ‘বাঘের ডাক’। এক গ্রামে হঠাৎ বাঘের ডাক শোনা যেতে থাকল। এলাকার মানুষজন স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে দিশেহারা। সত্যি বলতে কী, গল্পের প্লট এমন কিছু অজানা নয়। কিন্তু অদিতির পরিবেশনা, তাঁর নিপুণ গদ্য পাঠককে ধরে রাখে গল্পের শেষ পর্যন্ত। সব গল্পের ক্ষেত্রেই কমবেশি এই ব্যাপারটা খাটে। অদিতি সুন্দর গল্প বলেন। তাই মোটামুটি চেনা ধাঁচও তাঁর গল্পে নতুন করে অন্য মাত্রা খুঁজে পায়। যেমন বইটির নামগল্প। খেলার ছলে চিঠি লিখতে লিখতেই এক কিশোর কীভাবে একটা বড় চক্রান্ত বানচান করে দেয়, তা বেশ উপভোগ্য। এই প্রসঙ্গেই আসে পিসিমণির কথা। নীলুর পিসিমণি উপস্থিত বুদ্ধি, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণে অপরাধের কিনারা করেন। পিসিমণির তিনটি গল্প আছে এই সংকলনে। আশা করা যায়, এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে আরও অনেক কাহিনি আমরা ভবিষ্যতে পাব।
ভূতের গল্পে বাঙালির আকর্ষণ দুর্নিবার। সেদিক থেকে অবশ্য এই সংকলনের ভূতের গল্প দুটি পড়ে আমার মন ভরেনি। বরং সামাজিক যে গল্পগুলো আছে, যেমন ধরা যাক ‘মাশুল’, ‘নলে’ বা ‘কাঠের ঘোড়া’, সেগুলো যথেষ্ট উপভোগ্য। ‘চিন্টু ওস্তাদ’ পড়ে মনে মনে বেশ হেসেছি। আমাদের সকলের জীবনেই এমন ঘটনা বিরল নয়, আর সেইজন্যেই ছোটবেলাটা আমরা ফিরে ফিরে দেখি। লেখিকাকে বিশেষ ধন্যবাদ এমন করে সেই দায়িত্ব নেওয়ার জন্যে।
বইটিতে মোট ষোলোটি গল্প আছে। প্রতিটি গল্পের সঙ্গে যথাযথ ছবি এঁকেছেন সুমিত রায়। সুমিতবাবুর প্রচ্ছদ ও ইলাস্ট্রেশান বইটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আশা করা যায়, আমার মতো বুড়ো-আধবুড়োদের সঙ্গে সঙ্গে বইটি বয়সে যারা ছোট, তাদেরও ভালো লাগবে।
— মতিয়ার রহমান (পাইনকোন ডট কম-এ প্রকাশিত)
Be the first to review “খেলতে খেলতে”