গ্রামীণ পর্যটন বা ভিলেজ ট্যুরিজম একটি সাম্প্রতিক ধারণা। যতদিন আমাদের দেশে শহর গ্রামকে গ্রাস করেনি, ততদিন গ্রামেও যে বেড়াতে যাওয়া যায়, এমন কেউ ভাবেনি। নিজের জীবন দিয়ে এই সত্যিটা অনুভব করেছি। আমার যেখানে জন্ম ও বড়ো হওয়া, সে জায়গা গ্রাম ছিল। নয়ের দশকের শেষদিক থেকে সে জায়গা ক্রমশ শহর হতে শুরু করল এবং কয়েক বছরের মধ্যে বৃহত্তর কলকাতার পিনকোডে ঢুকে পড়ল। ঠিক একই সময়ে ভিলেজ ট্যুরিজমের বিকাশ ঘটতে আরম্ভ করে উত্তর বাংলায়। প্রথম দুটি গন্তব্য ছিল দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি গ্রাম তিনচুলে এবং জলপাইগুড়ির ডুয়ার্স অঞ্চলে গরুমারা অভয়ারণ্যের প্রবেশপথ লাটাগুড়ি। সে ইতিহাস লিখেছি অভিযান পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ‘ডুয়ার্সঃ একটি অফুরান ভালোবাসার গল্প’ বইতে। ক্রমশ দক্ষিণবঙ্গে গ্রামীণ পর্যটনের বিস্তার ঘটে। সুন্দরবনের নানা গ্রামে ও শান্তিনিকেতনের আশেপাশে বেশ কিছু গ্রামে পর্যটকরা যেতে শুরু করেন। কয়েক বছর আগে ভারত সরকার ইউএনডিপি-র আর্থিক সহায়তায় সারা দেশের ৩২টি স্থানকে চিহ্নিত করে আধুনিক গ্রামীণ পর্যটনের মডেল কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য। এইসব পরিবর্তনের আগে থেকে আমার গ্রামে ঘোরা শুরু, দূষণহীন আবহাওয়া ও যন্ত্রসভ্যতার প্লাস্টিক সার্জারিবিহীন প্রকৃতির অমোঘ টানে। গ্রামের মেলায় উৎসবে প্রাণের ছোঁয়া পেতে। চেনা, অচেনা ও অল্পচেনা কত যে গ্রামে বেড়িয়েছি, তার হিসেব নেই। সচিত্র ভ্রমণকথা লিখেছি নানা পত্র-পত্রিকায়। তার থেকে নির্বাচিত কয়েকটি লেখা নিয়ে এই বই। এই সুযোগে সেই সব পত্রিকার সম্পাদক ও বিভাগীয় সম্পাদককে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। পত্রিকাগুলি হল ভ্রমণ, সানন্দা, বর্তমান, লংজার্নি, আজকের সম্পূর্ণা, লেটস গো ইত্যাদি। বইটি সুন্দর করে সাজিয়ে প্রকাশ করার জন্য প্রকাশক, ভ্রাতৃপ্রতিম রোহণ কুদ্দুস ও সৃষ্টিসুখের সঙ্গে যুক্ত সকলকে আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। প্রিয় পাঠক, বইটি পড়ে শিকড়ের টান বিন্দুমাত্র অনুভব করলে ধন্য বোধ করব।
অরুণাভ দাস
শান্তিনিকেতন, ০১/০১/২০১৭
Be the first to review “গ্রামে টইটই”