আমাদের বাথরুমগুলি
বাথরুম নাম্বার ১
শৈশবেই বাথরুমের দেওয়ালে লেগে যায় ম্যাজিক। ফলতঃ তখন থেকেই এবম্বিধ ঘর বড় প্রিয় ও মনোরম ছবিতে ছবিতে বদলে যায় মুহূর্তেই যেন অন্য কিছু, অন্য আদল নিয়ে লেগে থাকে মর্ফিং দেওয়ালের আবছা ঘুলঘুলি আলোয়। বাসি জলের ঠাণ্ডা রেখা ও চিত্রসমূহ, কোনার্ত মাকড়সাদের লম্বা লম্বা পাগুলিকে নিয়ে যায় জঙ্গলভরা কমিক্সের সবুজ বাক্সে আর সন্ধেবেলায় নিয়মিত মোমবাতিদের হাফপ্যান্ট গোলাটে অন্ধকারে এঁটে বসলে, এলোমেলো ক্যালেন্ডারের মতো দেওয়ালে কেঁপে ওঠে ছবিসহ বাথরুমের ড্যাম্প। তারপর বাথরুম বদলিয়ে যায়…
বাথরুম নাম্বার ২
ঘণ্টা পড়লেই নটিবয় শু-এর সঙ্গে ছুটে আসে সাদা মোজা পরা টিফিন বাক্স আর বারবারান্দায়, কাঠের রেলিং ঘেরা ঘোরানো সিঁড়ির মতো লাইন পড়ে গেলে, ছোটো বাথরুমের ভেজানো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুধু এ’পা-ও’পা করে দেওয়ালের ছটফটে ঘাম আর ফুলপ্যান্ট, চোখ মারামারি। অথচ অন্য সময়, চকখড়ি ও পুরনো পাখার কি-শ কি-শ শব্দে ব্ল্যাকবোর্ড, স্কুলবাড়ি ভরে গেলে দরজার পিছনে চুপচাপ নেমে আসে ডটপেনসিলে লেখা বাথরুমের নাম ও কারুকাজ; কার যেন পরীক্ষার খাতা। তারপর বাথরুম বদলিয়ে যায়…
বাথরুম নাম্বার ৩
হল্ট স্টেশনের গাছ ও উঠতি মফঃস্বলে, ঝুলন্ত তারজালি ঠাসা বয়েলডিমের মতো বিকেল নেমে আসতেই, হেডমিস্তিরী ঘরমুখো হাত কর্ণিকে দ্রুত, ইঁট-চুন-ঘেঁষে গেঁথে ফ্যালে পৈতৃক স্বপ্ন ও বাথরুম। কর্নারপ্লট ঘিরে দেওয়া হয় বাখারির বেড়া আর সুপুরি ও ক্যাকটাসের পর্যাপ্ত আলো-বাতাসে প্রতি সকালেই বাথরুমের চুনকামে লেখা হয় সংবাদপত্রের হাওয়া ও ফড় ফড় শব্দ। ফলে টিফিনের ব্যাগগুলি রোববার হলে, রঙমিস্ত্রীর এনামেল সবুজ হাত মুছে ফ্যালে পুরনো লুঙ্গির খোপকাটা ছবিতে আর প্রতিবেশীর নাম লেখা আলো পড়লে বাথরুমের দেওয়ালে দুলে ওঠে নিষেধাজ্ঞা, পরিচিত সাবানের দাগ। তারপর বাথরুম বদলিয়ে যায়…
বাথরুম নাম্বার ৪
-এর মানেই হলো ছুটন্ত মেঝে ভর্তি জল অথবা যেকোনো কিছু যা কিনা জলের মতো ছড়িয়ে যায় ভিজিয়ে দেয় আমাদের বেলবটম টানাছুটি স্টেশনগুলিতে, কখনো সখনো ঘুমচোখ রাতে। তারপর শীত করলে আমাদিগের গোড়ালিময় দেখা যায় একপ্রকার শির শির গন্ধ। ফলতঃ এইসব অপছন্দময়তায় কোম্পানি জুড়ে যে সমস্ত রেখাচিত্র চুপ চাপ জেগে ওঠে, আলো হলে খেয়াল হয় তাদের সকলের ডটপেন বই ও আমসত্ত্ব, হলদে সেলোফেনে মুড়ে ফিরি হয়েছে সেই কবে থেকে স্টেশনজানালায়। এ কথা জানার পরেই গতিবুঁদ – ঠিক কোণে তাকাতে পারলে চোখে পড়ে কাশফুল, নীচে বৃত্তাকার বালি অথবা জল কখনো বা স্লিপার পাথর। আর থেমে গেলে ভয় করে বার বার নোটিশফলকের পাশে লেখা হয় আঁকাবাঁকা ডটপেন, চাপা কাম, শীলা সাহু (খানকি) ফোন নং 2467893। তারপর বাথরুম বদলিয়ে যায়…
বাথরুম নাম্বার ৫
প্রতিবিম্ব উজ্জ্বলতর হলে দ্যাখা যায় অজস্র কাঁচছবি ঝুলছে বিদ্যুৎবারান্দা পেরিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বিবি ও সাহেবের ছবিছাপ নম্র গোলামে আর সমবেত বাথরুমগণের লিঙ্গনির্ধারণ হয়ে গ্যাছে আরও আগে বাথরুমবারান্দা ও দরজা দেওয়াল জুড়ে ক’বছরে ভরে গ্যাছে লেবেল নির্দেশ। তাই সন্ধ্যার ঝোঁকে বাথরুম-বাথরুমীদের চাপা আলাপে রোজ ভরে ওঠে মহল্লা বার, কফিশপ, পুল আর মাঝরাতে হ্যান্ডসাম ছেলেবাথরুমদের মাপা হিসি থেকে প্রকৃতই সুগন্ধ ভেসে এলে মেয়েবাথরুমীদের গোপন ব্যস্ততায় ভরে যায় আলোকরিডোর; গোলামদানীতে মেপে রাখা ছাঁচগোলাপের কারিকুরি। অথচ এখনো রাঙা টাই বাথরুমরীতি এক্সকিউজ মী বলে উঠে দাঁড়ালে এখানে কার্পেট লাইন পড়ে যায় টানা বাথরুমলাগোয়া খিলানে। জুতোর ময়লা লেগে বারংবার কাঁচসিলিং নোংরা হয়ে গেলে, মানুষের আয়নাফেরৎ পাপোশগুলি চমৎকার মুছে রাখে যাবতীয় টিস্যুলিপি, দাগ ও পালিশ। তারপর বাথরুম বদলিয়ে যায়…
Be the first to review “তৃতীয় বিশ্বের ইতিহাস (প্রথম ভাগ)”