ঠিক কোন দায়বদ্ধতা থেকে একজন মা তাঁর শিশুকন্যাকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিতে পারেন যে, ভবিষ্যতের সমাজ তাকে কোনোদিন ‘বেশ্যা’ও বলতে পারে! সুচতুর রাজনীতির এই কূটচালে সে যেন ভেঙে না পড়ে, বরং এই কটুক্তি যেন তাকে মানসিক সমর্থন জোগায় যে, সে ঠিক পথে চলছে বলেই পরিচিত এই আঘাত নেমে এসেছে। লিঙ্গবৈষম্যের দীর্ঘাকালীন ইতিহাস আর তার কুৎসিত চেহারা যে আমাদের অজানা, তা নয়। কিন্তু নানা কারণে আমাদের উৎপ্রেক্ষা এক্ষেত্রে কিছুতেই কাঙ্ক্ষিত সমানুভূতির জায়গায় পৌঁছাতে দেয় না। সহানুভূতির আর্দ্ররস খানিকটা সান্ত্বনার প্রলেপ দিয়ে মুছে দিতে চায় ক্ষতগুলিকে। ঠিক এইখানে দাঁড়িয়েই বিপ্রতীপ ভূমিকা নেন শতাব্দী দাশ। তিনি উন্মুক্ত করেন ক্ষতমুখ। কারণ, তিনি জানেন, সেই বীভৎসতার সম্যক পরিচয় না পেলে, তা মন থেকে মেনে নিতে না পারার জায়গায় পৌঁছানো না অবধি, পুরুষ-নারী কারোর পক্ষেই লিঙ্গ-রাজনীতির ছলনাপ্রবণ কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসার মনোবল অর্জন করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় মানসিক মুক্তি। তাই নিজের সন্তানকে সমাজের বিপজ্জনক প্রবণতাগুলো চিনিয়ে দেওয়ার অছিলাতেই ব্যস্টি-সমষ্টির যোগসূত্র রচনা করে ফেলেন শতাব্দী। আমরা অনুধাবন করি, নারীবাদী এই চিঠি কেবল এক কন্যার জন্য লেখা এক মায়ের চিঠি নয়। বরং এর আবেদন সুদূর প্রসারিত আগামীতে। এ বইতে অন্যান্য যে প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন শতাব্দী, তা যেমন জরুরি, তেমনই বিদ্যায়তনিক পরিসরের বাইরে জেন্ডার-স্টাডিজ চর্চার পরিধিকে প্রসারিত করতেও তা অগ্রণী। আমাদের নিত্যকার যাপন কীভাবে লিঙ্গ-রাজনীতির বেড়ি পায়ে পায়ে নিয়েই এগিয়ে চলেছে, সেটুকু বুঝতে এই চিঠি ও নিবন্ধগুলি নিশ্চিতরূপেই অবশ্যপাঠ্য।
নারীবাদী চিঠি ও অন্যান্য
₹149.00
Be the first to review “নারীবাদী চিঠি ও অন্যান্য”