সহস্রমুক্তার সন্ধানে

129.00

২০০ বছরের প্রাচীন পুথি থেকে মিলছে প্রায় ৮০০ বছর আগেকার এই বাংলার ইতিহাস। বাংলায় তখন আসীন পরাক্রমশালী নৃপতি মহীপাল। এদিকে দাক্ষিণাত্যের চোল নামক রাজা বেশ কয়েকবার বঙ্গভূমি তথা রাঢ়দেশ আক্রমণ করে। সেই সংঘর্ষের সুযোগেই মহাসামন্ত নরেন্দ্রনারায়ণ বঙ্গদেশে সাম্রাজ্য স্থাপনের চেষ্টা করেন। সে সময় এই অঞ্চলে বাস ছিল বৌদ্ধ তন্ত্রসাধিকাদেরও। সাম্রাজ্য স্থাপনের অনুষঙ্গে নরেন্দ্রনারায়ণের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় কিছু লোভী ব্যাভিচারী সেনানায়ক। তাদেরই একজন রাজার অজান্তে এই বৌদ্ধপল্লি আক্রমণ করে বলাৎকার ও হত্যা করে সাধিকাদের। তাঁদের পূজনীয় সহস্রমুক্তায় তৈরি বজ্রযানী দেবীমূর্তির মুণ্ডচ্ছেদ করে। অভিশাপ দেন দলপতি সাধিকা। শাপ লাগে রাজবংশে। সহস্র বৎসর এই দেবীমূর্তি যত্নে রাখতে হবে নয়তো বংশ লোপ পাবে। এরপর প্রতি শতকে বদলে যেতে থাকে বাংলার ইতিহাস। যবন আক্রমণ থেকে সামন্ততন্ত্রের অন্তর্কলহ বদলে দিতে থাকে বাংলার ভাগ্য। সেই বাঁকবদলের পটভূমিতে কী হয় এই রাজপরিবারের? এই দেবীমূর্তির? তারই উত্তর খুঁজতে আচমকা এই প্রাচীন পরিসরের ভিতর ঢুকে পড়ে জনাচারেক বর্তমানের তরুণ-তরুণী। তাদের কেউ হয়তো জানে, এই দেবীমূর্তির উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই লুকিয়ে আছে রাজ পরিবারের বহু বছরের অর্জিত সম্পদ প্রাপ্তির সম্ভাবনা। আবার তার পিছনে গবেষকের ছদ্মবেশে ঠক-প্রতারকেরাও আছে তক্কে তক্কে। শুরু হয় টানটান রহস্যের পালা। দেবীমূর্তি কি রক্ষিত আছে? কীভাবে উদ্ধার হয় এই প্রাচীন পুঁথি? নারীর অভিশাপ কী করে নারী ক্ষমতায়নের আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে? সুনিপুণ বুননে তা-ই লিপিবদ্ধ করেছেন সুশোভন চৌধুরী, তাঁর উপন্যাস ‘সহস্রমুক্তার সন্ধানে’। কিশোর সাহিত্য মানেই ভূত কিংবা কল্পবিজ্ঞান– এই চেনা ফর্মূলা ছেড়ে গোয়েন্দাগিরি এবং অ্যাডভেঞ্চারকে সামনে রেখে লেখক কিশোর তথা তরুণদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছেন এই বাংলারই ইতিহাস। যা অনেকাংশেই থাকে না ইতিহাস বইতে। থাকে না ইন্টারনেটে। আঞ্চলিক ইতিহাস তকমায় যা বেশিরভাগ সময়েই ব্রাত্য হয়ে পড়ে মূলস্রোতের ইতিহাস রচনায়। সহস্রমুক্তার সন্ধানে তাই প্রাচীন দেবীমূর্তি উদ্ধারের গল্পই শুধু নয়, আমাদের এই বাংলার ইতিহাসেরও সন্ধান বটে। সে ইতিহাসের সঙ্গে মিশেছে কল্পনা, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গোয়েন্দা গল্পের টানটান চলন। পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা রহস্য ও বিস্ময় এ উপন্যাসকে যেমন সুখপাঠ্য করেছে, তেমনই হয়ে উঠেছে ইতিহাসের নিজস্ব বয়ান। ফলে কিশোররা শুধু নয়, বড়রাও অন্তত একবার এ উপন্যাসের পাতায় চোখ রাখবেন। আসলে নিজেদের ইতিহাস কেই বা না জানতে চায়! বিশেষত গবেষণা যখন গল্প হয় উঠে আসে তখন ইতিহাস পড়ার স্বাদও যে বদলে যায়, এই সময়ে দাঁড়িয়ে নিজের লেখনীতে তা আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন লেখক।

Customer Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “সহস্রমুক্তার সন্ধানে”

Your email address will not be published. Required fields are marked *