গ্রন্থ পরিচিতি
প্রত্নবীজ
প্রথম প্রকাশ – বইমেলা ১৯৯৬প্রকাশক – হাওয়া-৪৯, সমীর রায়চৌধুরীপ্রচ্ছদ – মলয় রায়চৌধুরী দাম – ২০ টাকা গ্রন্থস্বত্ব – সুবিমল বসাক
কৃতজ্ঞতা স্বীকার – ‘হা-রে-রে-রে-রে’ এবং ‘মহল্লা লোদিপুর’ নামে কয়েকটা অংশ কবিতা-দর্পণ কৌরব এবং অনুক্ষণ (সিউড়ি) হাওয়া-৪৯ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
বইটির উৎসর্গপত্র —
আদরনীয় শ্রীসমীর রায়চৌধুরীআর শ্রীমতি বেলা রায়চৌধুরীরকরকমলে
বইটির ভূমিকা —
ইংরেজ বিতাড়িত নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ’এর বজরা এসে থামে মেটিয়াবুরুজে। পেছনে অর্ধশতাধিক বজরায় জীবজন্তু পাখী থেকে তওয়াএব, গায়িকা, নর্তকী, তবলিয়া, সারেঙ্গিঅলা, কোঠেবালি, আতরঅলা, খানসামা, বাবুর্চি, খাদিম, হেকিম, মৌলানা, মৌলভি, রাজমিস্ত্রি, ধোবি, হাজাম আরো আরো অনেক পেশাদার। নেমেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এলাকা গড়ে তোলে। ইংরেজদের সংস্পর্শে বাঙ্গালিকুলের একটি অংশ তোষামোদ ও চাটুকারি শিল্পে উন্নত হয়ে গুছিয়ে নেয় আখের। সুবে-বাঙ্গলার বাঙ্গালির রমরমা তখন, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ডাক্তার, প্লীডার, ব্যরিষ্টার, অফিসার, টিচার, বিজনেসম্যান, প্রফেসার, ক্লার্ক, কন্ট্রাক্টর, ইঞ্জিনিয়ার, জমিদার। একদিকে ইংরেজি শিক্ষা, অন্যদিকে ব্রাহ্মদের উদারতা, মাঝখানে হিন্দুদের সংস্কার।বাঙ্গলার বাইরে গড়ে ওঠে বাঙ্গালিদের নিজস্ব ঘরানার এলাকা; সেই এলাকায় কপাল খুলতে এসে জোটে বাঙ্গালি দোকানদার, চাঁদসী ডাক্তার, ঠিকাদার, মুদি, দশকর্ম ভাণ্ডার, হোটেল ব্যবসায়ী, কম্পাউন্ডার, ড্রাইক্লিনার্স, যাত্রাদল, হোমিওপ্যাথ, স্বর্ণকার, মেস-পরিচালক, পুরুত, কেরানি, ওষুধ প্রতিষ্ঠান, কাপড়ের দোকান, ইমারতি দ্রব্যের দোকান, নানান পেশাজীবী। এই সব বাঙালিরা মিশে গেছেন বিভিন্ন রাজ্যের ভূমিপুত্রের সাথে। ভাষা, সংস্কৃতি সব গ্রাস করে মিলিয়ে গেছেন তাদের মাঝে। যে জীবন, যে বাঙলা ভাষা, সে সংস্কৃতি বাঙ্গালির, তবু তা অন্যরকম। যেমন আন্দামানের বাঙ্গালি, যেমন শ্রীলঙ্কার তামিল, যেমন মরিসাসের বিহারী, যেমন ক্যারিবিয়ানের নিগ্রো, যেমন ফরাসি দেশের আরব, জার্মানির তুর্কি, আজারবাইজানে রাশিয়ান। যাদের যে কী ইতিহাস তা কেউ জানে না। এই রচনাটি সেই সব ‘মিথ’-এর গল্প। — সুবিমল বসাক২২/৬, ভার্নার লেনবেলঘরিয়া, কোলকাতা-৫৬
বইটির পশ্চাদপটে লিখিত —
সেই ১৯৬৫ সালে সুবিমল বসাকের প্রথম পেশকারী ছাতামাথা—যা আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে তুমুল আলোড়ন—যা ছিল তৃণমূল স্তরে ভাষার কারুকার্য, বিষয়হীনতার ঔজ্জ্বল্য। উপন্যাসের ব্যাকরণ সিদ্ধ প্রথা, মাপাজোকা উপস্থাপনা, আঁটোসাঁটো আঙ্গিক, লতাপাতা ঘেরা প্রাসাদ—সব ভেঙেচুরে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়া হয়েছিল বিধগ্ধ সমালোচকের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে।ত্বক ও শিরার মত দেহ-শরীরে, সুবিমলের গদ্যের ভাষা ও বিষয় সহ-অবস্থান করছে। সাব-অলটার্ন এই উপন্যাস বস্তুতঃ শ্রেণী-সংগ্রামের চেতনায় উজ্জীবিত। কি আঙ্গিক, কি চরিত্র, কি উপস্থাপনা, কি ভঙ্গিমা, কি ভাষা ইস্তেমাল — লেখা ও কথ্যভাষার সমৃদ্ধ রত্নরাজি সুবিমলের অধিকৃত খজানা। তাঁর হাতে রয়েছে সেই মূল্যবান কাসকেট, যার ভেতর অজস্র অভিজ্ঞতার মণিমুক্তা; ডালা খোলার সঙ্গে সঙ্গে বিরল রত্নরাজির রঙিন ছটায় ঝিকমিক করে সমগ্র সিন্ধু-সভ্যতা, মহেঞ্জোদারো-হরপ্পার খুঁটিনাটি দৃশ্যপট — প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার নস্টালজিক অভিপ্রেত।
এথি
প্রথম প্রকাশ – ডিসেম্বর, ২০০১প্রকাশক – এবং প্রকাশনী, শ্রীসুভাষ ঘোষপ্রচ্ছদ – সুবিমল বসাকদাম – ৩৫ টাকাগ্রন্থ স্বত্ব – শুভময় বসাক
কৃতজ্ঞতা স্বীকার – কালিমাটি, এবং, আজকের গল্প, মাঝি, একালে রক্তকরবী, এবং প্রিয়শিল্প, দধীচি, সান্নিধ্য
বইটির উৎসর্গপত্র —
উৎসর্গ
মহল্লা লোদিপুর, পাটনা
বইটির পশ্চাদপটে লিখিত —
সুবিমল বসাক ১৫.১২.১৯৩৯ বিহারে, পাটনায় জন্ম। শৈশব-কৈশোর, শুরু-যৌবন কাটে অপখ্যাত লোদিপুর মহল্লায়। কাজের ধান্ধা ও কায়িক পরিশ্রমে অর্থোপার্জনে আসা কয়েক ঘর বাঙালি পরিবার ছাড়া সেখানে আশেপাশে ছড়ানো-ছিটানো স্থানীয় অন্ত্যজ শ্রেণীর প্রান্তিক মানুষ, ভারতবর্ষের জনসমাজ।
১৯৬৫ সনে প্রকাশিত তাঁর প্রথম ডিন্যারেটিভাইজড উপন্যাস ‘ছাতামাথা’, কলকাতা কেন্দ্রিক সাহিত্যিক অনুশাসনে হেনেছিল মোক্ষম আঘাত। রচনাটির ন্যারেটিভ ঢাকার কুট্টি এক্কাচালকদের ভাষায় নির্মিত এবং সংলাপ রাঢ় অঞ্চলের। বাংলা ভাষায় প্রথম রাইজোম্যাটিক উপন্যাস — ঘাসের মতো বিশৃঙ্খল। মুক্ত সূচনা ও মুক্ত সমাপ্তির দিক চিহ্ন।
১৯৯৬ সনে প্রকাশিত তাঁর ‘প্রত্নবীজ’ উপন্যাসটি বাংলা সাব-অলটার্ন সাহিত্য হিসাবে একটি জল বিভাজক। এই উপন্যাসে সুবিমল বসাক নিজে বর্ণিত সমাজটির অন্তর্গত, সবর্ণচেতনা বহির্ভূত, নিম্নবর্গীয় শব্দচেতনা, ডিস্ট্রাকচার্ড রচনা কাঠামো, চরিত্র প্রান্তবাসী, সংস্কৃতিবস্তু স্থানিক, মনন-ভাঁড়ার বৈভিন্ন্যময়। তাঁর প্রতিস্ব মেট্রোপলিটান না-হওয়ায় তিনি পৃথক অনুশাসন এলাকায় বিচরণ করছেন।
‘এথি’ উপন্যাসটি প্রত্নবীজের পরবর্তী কালীন।
তিজোরীর ভেতর তিজোরী
প্রথম প্রকাশ – ডিসেম্বর, ২০০৫প্রকাশক – হাওয়া-৪৯, সমীর রায়চৌধুরীপ্রচ্ছদ – সুবিমল বসাকদাম – ৩৫ টাকাগ্রন্থ স্বত্ব – সংরক্ষিত
কৃতজ্ঞতা স্বীকার – খনন, এবং মুশায়েরা, শৈলী, ভগ্নাংশ, কালিমাটি, হাওয়া-৪৯, ছিটেফোঁটা
বইটির উৎসর্গপত্র —
উৎসর্গ
চিরঞ্জীব শূর রাহুল পুরকায়স্থ
প্রিয়জনেষু
বইটির পশ্চাদপটে লিখিত —
সুবিমল বসাকের গদ্য শরীর যে ভাবে ভাষা ব্যবহারে গড়ে উঠেছে, তা তাঁর অন্ত্যজ শব্দে, নিম্নবর্গীয় বুলিতে, বাক্যের অধোগঠনে, যুক্তিভিন্নতায়, সামঞ্জস্য ভঙ্গে, অনুশাসন হীনতায়, মূলধারার বিপক্ষে, অভিজ্ঞতার গভীরতা ও ব্যাপ্তির এথিকাল তালুকে উদ্দীপ্ত হয় বলে, বিষয় বস্তু ও প্লটের বৈভিন্ন্যকে অনায়াসে সে খেলাতে পারে।
Be the first to review “সুবিমল বসাক সংকলন (দ্বিতীয় খণ্ড)”