বাংলা বইয়ের দাম কেন এত বেশি সেই নিয়ে প্রায়ই কথা শুনতে হয় নানা জায়গায়। সত্যি বলতে কী, সৃষ্টিসুখ থেকে যে বইগুলো আমরা করি, চেষ্টা করি যতটা সম্ভব সেগুলোর দাম কম রাখা যায়। কিন্তু সেটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দস্তুর এটাই যে, বইয়ের মুদ্রিত মূল্যের ওপর ২০%-২৫% ছাড় দিতে হবে। কিছুদিন আগেই এক সিনিয়র প্রকাশকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। একটা বইয়ের দাম আমরা রাখছি ১২৫, ১০% ছাড়ে সেটা বিকোচ্ছে ১১২ টাকায়। ওই একই আকারের (মানে একই পৃষ্ঠাসংখ্যা, গড়নের) বইয়ের দাম তাঁরা রাখছেন ১৫০ টাকা। সেটা ২৫% ছাড়ে বিক্রি করছেন। হরেদরে পাঠক সেটা পাচ্ছেন ১১২ টাকায়। তিনি সুজন হিসাবেই পরামর্শ দিলেন — যে পুজোর যে মন্ত্র।
এর সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছে বইবিক্রেতার কমিশন। না, কোনও অভিযোগ নেই কোনও বইবিক্রেতার ওপর। তাঁদের এটাই বাণিজ্য, এটাই পেশা। কিন্তু স্বল্পমূল্যের এই বইগুলোতে যদি ৩০ শতাংশ ছাড় তাঁদের দিতে হয় (কারণ তাঁদের ২০ শতাংশ ছাড় পাঠককে দিতে হয়), তাহলে প্রকাশকের আদৌ কিছু থাকে কি? প্রিয় পাঠক, আপনি বুদ্ধিমান। আপনিই ঠিক করুন, বাংলা প্রকাশনার নতুন তরঙ্গ হিসাবে যে প্রকাশনাগুলোকে আপনারা চিহ্নিত করছেন, তাদের কম দামের বইগুলোর ওপর কম ছাড় নেবেন? নাকি সামনের বইমেলায় তারা আকাশছোঁয়া দামের বই করুক এবং তাতে চোখধাঁধানো ছাড় নেবেন?
আমরা নিতান্তই ছোট প্রকাশক। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর কাটে আমাদের প্রেসের ধার মেটাতে। আর অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পকেট খালি হয় প্রেসে অ্যাডভান্স পেমেন্ট দিতে।
এই সমস্যা এখন আমাদের অস্তিত্বের সংকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সৃষ্টিসুখ এবং আরও যে নতুন প্রকাশনাগুলো নতুন করে বই করতে চাইছে, তারা না থাকলে কারও বই করা আটকাবে না ঠিকই। কিন্তু যে নতুন বাংলা সাহিত্যের ধারা এবং নতুন প্রকাশনার স্বপ্ন নিয়ে আমরা বলাবলি করছি, সেটাকে বাঁচিয়ে রাখার দরকার আছে কিনা সে সিদ্ধান্ত পাঠককেই নিতে হবে। বই একটা পণ্য, প্রকাশনা একটা বাণিজ্য। শুধুমাত্র সাহিত্যপ্রেমের দোহাই দিয়ে সেটাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়।