প্রবন্ধের বই যে একেবারেই আমরা করিনি, তা নয়। কিন্ত এই বইটা সম্পর্কে আমার ভীতি ছিল আঞ্চলিক ভূগোলের মতো। এবং ড্রেসিং টেবলের ওপর রাখা ফিশবোলের মতো। একেবারে অজানা একটা বিষয়। তার ওপর কোথায় যে কী ভুল হয়ে যাবে টুক করে… Abesh যখন গত বইমেলায় জানিয়েছিল, ও তপন সিংহের ওপর প্রবন্ধের একটা বই প্রকাশ করতে চায়, আমি ঠিক কেমন রাজি হতে পারিনি। একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, যিনি কিনা সেভাবে বাঙালির ঘরে ঘরে বন্দিত নন, যাঁর সিনেমার দৃশ্য নিয়ে কোনও মীম তৈরি হয় না, তাঁর ছবি নিয়ে কোনও পোস্টার বানানো হয় না, তাঁর ওপর একটা গোটা বই! সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে লেখো না কেন বাপু? যাই হোক, এ ব্যাপারে আমার জ্ঞান-টান জিরো। তাই দেখিয়ে দিলাম Amitavaদার দিকে। সে চলচ্চিত্র জানে-বোঝে-লেখে, অতএব এই বইয়ের যোগ্য সমঝদার সে-ই। অমিতাভদা পাণ্ডুলিপি পড়ে-টড়ে বলল, “আবেশ যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছে, সেগুলো খুব ইউনিক। এখনও এভাবে তপন সিংহের ওপর লেখা হয়নি।” ব্যস, আর কী! আমি ঘটাঘট মাথা নেড়ে দিলাম।
প্রুফরিডিং শুরু হল। এক রাউন্ড প্রুফ দেখার পরে এল আমার কাছে। আমিও প্রুফের সঙ্গে সঙ্গেই পুরো পাণ্ডুলিপিটা পড়লাম। সত্যি বলতে কী, ১৬০ পাতা জুড়ে ৫টা প্রবন্ধ। কিন্তু পড়তে কোথাও আটকায় না। চলচ্চিত্র আমার বিষয় নয়, তাই তথ্য বা তত্ত্ব যাচাই করার দায় আমার ছিল না, সেগুলো যা করার অমিতাভদা করেছে। কিন্তু টেক্সট হিসাবে পড়তে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছিল।
সূচিপত্র এরকম।
১ – মার্ক্সবাদের মুখোশ ও তপন সিংহের সমাজবীক্ষা:
বঙ্গীয় সমকালের জলছবি
২ – জীবনবোধে রবীন্দ্রনাথ: তপন সিংহের ছবিতে
৩ – তপন সিংহের যুবদর্শন: উত্তরাধিকার থেকে উত্তরণে
৪ – জীবনের প্রতিবন্ধকতা জীবনীশক্তির আরোহণ:
তপন সিংহের প্রতিবন্ধী চরিত্রদের চর্যায়
৫ – তপন সিংহ আজীবন: চলচ্চিত্র-ভাবনা ও বিবর্তন
প্রচুর উক্তি, রেফারেন্স, তুলনামূলক আলোচনা (মাঝে মাঝে দেশকালের গণ্ডিতে আবদ্ধ না থেকেই) পাণ্ডুলিপিটাকে বেশ আলাদা করে দিয়েছে। শেষে বেশ কিছু আলোকচিত্র (আবেশ সেগুলো রীতিমতো কিনে পাঠিয়েছিল, গুগল ডাউনলোড নয়)। এমন সিরিয়াস কাজ সৃষ্টিসুখ প্রকাশ করবে ভাবতেই ভালো লাগছিল। কিন্তু লেখকের সিরিয়াসনেস মাপাটা তখনও বাকি ছিল। দ্বিতীয়বার প্রুফ চেক করে পিডিএফ-এ পাঠালাম বইয়ের ম্যাটার। মাসখানেক পর যখন ফেরত এল, পিডিএফ ফাইলে লেখক ২৩৩৪টা কমেন্ট অ্যাড করেছে। না, মানে সত্যিই তেইশ শ চৌত্রিশ। তারপর আর কী, আমার মহব্বত কা ইন্তেহাঁ। ধরে ধরে টুকটুক করে এক-একটা চেঞ্জ। কোথাও যতিচিহ্ন বদল, তো কোথাও প্যারাগ্রাফের ইনডেনটেশান বদল। কোথাও পুরো প্যারা রি-রাইট করা হয়েছে, আবার কোথাও বা সামান্য টাইপো। তা শেষমেশ তা-ও একদিন শেষ হল। আবার প্রুফ পাঠানো এল। এবার মাত্র গোটা কুড়ি পরিবর্তন। আমার ওপর রহম করে আবেশ বলল, “আমায় আর দেখাতে হবে না। হয়ে গেলে প্রেসে পাঠিয়ে দিও।” তা পাঠানো হল প্রেসে আজ।
ওহো! বইয়ের নামই বলা হয়নি।
তপন সিংহ — সার্বিক চলচ্চিত্র বীক্ষা
লেখক — আবেশ কুমার দাস
প্রি-অর্ডারের লিংক — http://sristisukh.com/pre-order/index.php?id=27