সোক্কোরো, নিউমেক্সিকো : ১৯৭৭ আসিয়াছ মধ্যরাত্রে, সত্তর দশক তব বিপন্ন চরণে ধ্বনিয়াছে। দিশাহারা, দিকশূন্য, ত্রস্ত তুমি, তবুও তোমার কোথাও যাওয়ার ছিল নিদ্রিত সর্পের ন্যায় জনশূন্য হাইওয়ে বাহি নিভন্ত চাঁদের প্রতি চাহি, নিতান্ত ভঙ্গুর তুমি জাদুকর সাজিয়াছ, আস্তিনে লুকায়ে বেদনা সমনাম্বুলিস্ট যথা স্থির হয়ে দাঁড়ায়েছ (ঋজু হয়ে দাঁড়ায়েছ বুঝি!) রিওগ্রান্দে নামধারী, অতিশীর্ণ নদীটির ধারে নিস্তব্ধ একাকী অন্ধকারে নিস্তরঙ্গ তটিনীতে তোমার মুখের ছায়া হঠাৎ ছলাৎ করি উঠিয়াছে কেঁপে, রোডরানার পাখি হয়ে জাদুবলে উড়ে গেছে পকেটের চারটি ডলার, নির্জন নদীর বাঁকে ভয়াল দুঃস্বপ্নে লগ্ন ’মেরিক্যান ড্রিমে কয়েকটি বিষাক্ত সর্প চলিয়াছে ঝুমঝুমি বাজায়ে। সোক্কোরো নামক এক অলীক নগরী বুঝি জাগিয়াছে সেইরাত্রে নিদ্রাহীন শিয়রে তোমার।...
তদোগেন গিরতের কবিতা-সব্যসাচী সান্যাল
তদোগেন গিরতে পেশায় শিক্ষক। মঙ্গোলিয়ার ওন্দোরহান বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পারেটিভ লিটারেচার পড়ান। কবিখ্যাতি সেভাবে নেই। কোনও প্রকাশিত বই নেই। সময় কাটানোর জন্যই লেখালিখি করেন। তাঁর নিজের কথায় -- "কবিতা নিয়ে সেরকম কোনও অ্যাম্বিশন নেই। তাছাড়া আমার লেখাগুলি যে আদৌ কবিতা, মঙ্গোলিয়ার কোনও দৈনিক বা পত্রিকা সে কথা স্বীকার করে না।" তা এহেন তদোগেন গিরতের কবিতা নিয়ে সৃষ্টিসুখ প্রকাশন থেকে কলকাতা বইমেলা ২০১৮-য় প্রকাশিত হতে চলেছে কবিতা সংকলন -- 'তদোগেন গিরতের কবিতা'। অনুবাদ করেছেন সব্যসাচী সান্যাল। অনুবাদে কবির এমন অনায়াস চলাচল যে নিচে একটা কবিতা না দিয়ে পারা গেল না। আমি পাল্লা বেড়ালের ধুমসো লোম থেকে শব্দ বাছি আমি আর্গালি ভেড়ার পেট কাটতে...
অপ্রাকৃত ২-রূপঙ্কর সরকার
রূপঙ্কর সরকারের 'অপ্রাকৃত ২' বইটি অনলাইন অর্ডারের লিংক -- https://goo.gl/NRp6Pr অফলাইন -- সৃষ্টিসুখ, ৩০ এ সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট, কলকাতা ৯। যোগাযোগ -- ৯০৫১২ ০০৪৩৭ ================================== সংকলন থেকে 'রান্নাঘর' গল্পের অংশবিশেষ। ================================= বেলাল বললেন, “আসলে মিসেস তালুকদার ভয় পেতেন, যদি তাঁর দস্যি ছেলে কারও বাড়িতে কিছু ভেঙে-টেঙে ফেলে। নিজেদের ঘরেও অনেক শখের জিনিস ছিল তো ওঁদের, খুব দুরন্ত ছিল বাচ্চাটা। সেদিনও রান্নাঘরে ওকে বন্ধ করে লন্ড্রিতে কাপড় দিতে গেছিলেন। রান্নাঘরের জানলাগুলো বন্ধ ছিল, খেয়াল করেননি। ছেলেটা একটা প্লাস্টিকের টুলের ওপর উঠে জানলা খোলার চেষ্টা করছিল। টুলটা হঠাৎ স্লিপ করে –” রাইফা চোখে ওড়না চেপে ধরলেন। “মাথার ঠিক পেছনে লেগেছিল কিচেনের টেবল টপটা। হাসপাতালেও...
বাংলা বইয়ের দাম কেন এত বেশি?
বাংলা বইয়ের দাম কেন এত বেশি সেই নিয়ে প্রায়ই কথা শুনতে হয় নানা জায়গায়। সত্যি বলতে কী, সৃষ্টিসুখ থেকে যে বইগুলো আমরা করি, চেষ্টা করি যতটা সম্ভব সেগুলোর দাম কম রাখা যায়। কিন্তু সেটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দস্তুর এটাই যে, বইয়ের মুদ্রিত মূল্যের ওপর ২০%-২৫% ছাড় দিতে হবে। কিছুদিন আগেই এক সিনিয়র প্রকাশকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। একটা বইয়ের দাম আমরা রাখছি ১২৫, ১০% ছাড়ে সেটা বিকোচ্ছে ১১২ টাকায়। ওই একই আকারের (মানে একই পৃষ্ঠাসংখ্যা, গড়নের) বইয়ের দাম তাঁরা রাখছেন ১৫০ টাকা। সেটা ২৫% ছাড়ে বিক্রি করছেন। হরেদরে পাঠক সেটা পাচ্ছেন ১১২ টাকায়। তিনি সুজন হিসাবেই পরামর্শ দিলেন -- যে...
আজে গল্প বাজে গল্প-তাপস মৌলিক(টগবগ উৎসব সংখ্যা ১৪২৪)
১ এই লাইনটা এই গল্পের প্রথম লাইন। প্রথম লাইনে গল্পটা শুরু হল। দ্বিতীয় লাইনে চলতে শুরু করল। এই চতুর্থ লাইন যখন এল, তখন গল্পটা চলছে। চলতে চলতে চলতে চলতে চলতে — পঞ্চম লাইনের পর গল্পটা দেখল যে প্রথম অনুচ্ছেদ প্রায় শেষ। সামনে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ। ২ শীতের সকালে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল। গল্পটা এসে তাকে ধাক্কাধাক্কি করে তুলে বলল, “আরে ওঠো ওঠো। এত ঘুমোলে চলবে?” দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল, “ওঃ, এই সাতসকালে কেন জ্বালাতন করছ? কী চাই তোমার?” গল্পটা বলল, “দু-একটা চরিত্র-টরিত্র দাও, নইলে চলি কী করে?” “কীরকম চরিত্র দরকার? বাজেট কত?” “মানে?” “আরে চরিত্র তো তেত্রিশ...
নিষিদ্ধ ফল-দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
দশটি বসন্তকাল। কত দীর্ঘ সময়! তাদের যৌথ গুহাটির সামনে সে পা দুটি ভাঁজ করে বসেছিল। জায়গাটি নীরব। প্রথম বসন্তের বাতাসে শীতের মৃদু কামড়। সময় তার ওপরে বিশেষ ছায়া ফেলতে পারেনি। সেই আগেরই মতো সতেজ, সুন্দর রয়ে গেছে ইবা। অথচ তালাই তো আর সুন্দর নেই। তাকে দেখলে বৃদ্ধা মনে হয়। তার চামড়ায় বয়সের কুঞ্চন। তার পেটটি সর্বদাই উঁচু হয়ে থাকে কোনও এক অজ্ঞাত রোগের প্রকোপে। দশ বছরে আটটি সন্তান হলে এইরকমই হয়। মনে মনে নিজের সঙ্গে তালাইয়ের শরীরের তুলনা করে একটা বিকৃত আনন্দ হচ্ছিল ইবার। অথচ, হৃদয়ের গভীরে সে তালাইকে হিংসা করে। তীব্র, বিষময় ঈর্ষা! তালাইয়ের দু’দুটি ছেলের পিতা তার ঈশির।...
পাখিদের সমস্ত সাজ-তাপস কুমার লায়েক
মাঝে মাঝে কেউ কেউ প্রশ্ন করেন না, কোনও নির্জন দ্বীপে নির্বাসনে গেলে কোন বইগুলো নিয়ে যাবে সঙ্গে? ২-৩টে কবিতার বই নিয়ে অবশ্যই যাওয়া উচিত। তালিকায় যে বইটা যে কোনওদিন থাকবে, সেটা হল তাপস কুমার লায়েকের 'পাখিদের সমস্ত সাজ'। তাপসদার (কবির সঙ্গে পরিচয়ের মওকা পাইনি এই বইয়ের কবিতাগুলোর বাইরে, তবুও 'তাপসদা'... বড় আপনজন সে) কবিতা পড়তে পড়তে মাঝে মাঝেই ভাবি, অগ্রন্থিত কত কবিতা বাইরে রয়ে গেল। পড়ার সুযোগ হল না। অকালপ্রয়াত এই কবিকে পাঠক মনে রাখলেন না দেখে আক্ষেপও হয়। যাই হোক, 'পাখিদের সমস্ত সাজ' বইটিতে আছে সারেঙ ও ব্যালেরিনা জল, তুমি এই মহাদেশ, বৃষ্টি ও তামাকের ঘর, নাও, L14B কবিতা...
রূপকথার রাজকন্যা-ঈশানী রায়চৌধুরী(টগবগ উৎসব সংখ্যা)
ফিঙে তখন মওকা বুঝে দাদুর হাত ধরে ঝুলে পড়ল। চিরকালই তো এই খুদে মেয়ে ঘ্যানঘ্যান করতে এক্সপার্ট। অতিষ্ঠ হয়ে শেষে জগুবাবুর বাজার থেকে একটা স্টেগোসরাসের ছানা নিয়ে এল দাদু। দেশলাইয়ের বাক্স করে। ছোট্ট মাথা, শরীরটা তুলনায় বড়, লেজটা চিমড়েপানা। কিন্তু পিঠে ছোট্ট ছোট্ট কাঁটা আর পাত কই? দাদু বলেছিল, বড় হলে হবে। একটু ঘিয়ে আর বাদামি চেহারা। ফিঙে একটু খুঁতখুঁত করেছিল বটে মাথাটা কেমন ছোট বলে, দাদু বলল, “ছোট মাথাই ভালো। বুদ্ধি কম হলে তাড়াতাড়ি সে জন্তু বশ হবে, কারণ ছোটদের তো এমনিতে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না।” পেছনের বারান্দায় রাখা হবে ওকে। ওদিকে দু’ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই ফিঙেদের ভাড়া বাড়িটার...
বিশ্বাসঘাতক-প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়(টগবগ উৎসব সংখ্যা)
চল্লিশের উত্তাল বার্লিন, ঘনিয়ে আসছে রুশো-জার্মান যুদ্ধ। তারই মধ্যে বার্লিন টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে নিজের পি-এইচ-ডি নিয়ে ব্যস্ত গোরা মিত্তির। ওয়েলিংটন রোডের অনাথ আশ্রম থেকে বার্লিনের প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার্থে আসা, নাটকীয় ঘটনা সন্দেহ নেই। কিন্তু চল্লিশের বার্লিন গোরার জীবনে নিয়ে আসছে আরও নাটকীয় মুহূর্ত। গোরা বার্লিনের ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেস লিগের সদস্যও বটে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই যে দল অবিরাম কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভারতবর্ষকে ব্রিটিশমুক্ত করতে (যে দলের প্রতিষ্ঠাতা খোদ মানবেন্দ্রনাথ রায়)। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা গভীর সমস্যা নিয়ে এসেছে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেস লিগের জন্য -- সুভাষ বোসকে জার্মানি কোনও রকম সাহায্য না দিয়েই ফিরিয়ে দিয়েছে। এবং শুধু তাই নয়, আলেকজান্ডারপ্লাটজের বাড়িতে গুপ্ত আততায়ীর হাতে...
তেঁতুলপাতার গল্প-সৈকত মুখোপাধ্যায়
বই -- তেঁতুলপাতার গল্প | লেখক -- সৈকত মুখোপাধ্যায় | প্রিন্ট ভার্সান অর্ডারের লিংক -- https://goo.gl/GGxQiy ই-বুক অর্ডারের লিংক -- https://goo.gl/WHqK1w ============= লেডিস সাইকেল মনে আছে, ক্লাস নাইনে উঠে কিছুতেই ফুটবল-টুর্নামেন্টে নাম দিলাম না, শুধু অত লোকের সামনে হাফপ্যান্ট পরতে হবে — এই লজ্জায়। লজ্জা... কারণ রোগা রোগা পা দুটোতে হঠাৎ এত লোম, লজ্জা... কারণ গলার স্বর ভাঙা, লজ্জা... কারণ মেয়েরা হঠাৎই এত রহস্যময়ী। ত্রাসে, আতঙ্কে, মনখারাপে আমার চোখের নীচে কালো রেখা ফুটে উঠল, ঠোঁটের ওপর নীল। মানিক স্যারের বাড়ি অঙ্কের টিউশনে যেতাম। মানিক স্যার তাঁর নিজের মেয়ে ঝুপুকে আর আমাকে অঙ্ক কষতে দিয়ে বাজার যেতেন। তখনও ভালো করে সকাল হত না।...