আত্মজৈবনিক গ্রন্থে ভূমিকা না দিলেও চলে। কোনও বইতেই ভূমিকা না থাকলে চলে। কিন্তু কিছু পরিপ্রেক্ষিতের কারণে ভূমিকাটা পাঠককে আরাম দিতে পারে ভেবে দিচ্ছি। রত্না সাহা চৌধুরীর পুত্র হিসাবে আমার তাঁকে চেনাটা সুযোগবিচারে গভীর। তবে ১৭ বছর বয়স থেকেই দূরে থাকার কারণে কিছু মলিনতাও থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর চিন্তার স্পষ্টতা, ক্রমাগত সেটা আরও স্পষ্ট হতে থাকা আর যাকে সততা বলা হয় সেটা তাঁর কথাবার্তার একটা মৌলিক গুণ হিসাবে চিনতে আমার সময় লাগেনি বেশি।
এই গ্রন্থটি তিনি লিখতে বসেছেন ২০২১ সালের মার্চ মাসে, আমাদের অনুরোধে। শেষ করে ফেলেছেন পরের তিন বা চার সপ্তাহেই। আমরা বললে আরও দীর্ঘ তিনি করতেন। কিন্তু সেটা অপ্রয়োজনীয়। কথার তো শক্তিই সেটা, বাড়ালে বাড়েই; স্মৃতিও তাই। বরং একটা কাজ ‘সমাপ্ত’ করার আনন্দটা তাঁর প্রাপ্য।
রত্না নিজে যে বিবরণী, যে স্মৃতি, যে সত্য বলেছেন, তার গতি, ধারাবাহিকতা বা সত্যতা যাচাইয়ের কোনও চেষ্টাই এই রচনা সম্পাদনার সময় করা হয় নাই। একটা বা দুটো জায়গায় জাতীয় ঘটনার যদি ত্রুটিপূর্ণ স্মৃতিচারণ ঘটে থাকে, সেটা ছাড়া। তাঁর বানানও অবিকল রাখার একটা প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাতে কিছু পাঠকের জন্য অত্যাচার হয় ভেবে সেই সিদ্ধান্তে থাকিনি। ফলে তাঁর ভুল বানানগুলো শুধরানো হয়েছে, এবং তাঁর পছন্দের ‘সঠিক’ বানানগুলো সারা বইয়ে যাতে সমরূপ থাকে তা করা হয়েছে। একটা দুটো জায়গায় তাঁর ব্যবহৃত শব্দমালা বদলানো হয়েছে নিতান্ত এই কারণে যে পাঠক বুঝতে ভুল করতেন। যেমন, রত্না সাহা চৌধুরীর স্বামী পরলোকগত চিত্তরঞ্জনের শিক্ষক পদের বঞ্চনার কাহিনি বলতে গিয়ে তিনি ‘সহকারী শিক্ষক’ বলতে আসলে সহকারী হেডমাস্টার বুঝিয়েছিলেন। সেটা মেরামত না করা হলে গল্পটাই বোঝা যায় না। এরকম। কিছু ভাবনা দিয়ে তাঁর অনুচ্ছেদ বিভাজনও অটুট রাখা হলো। যেহেতু এই ভূমিকা লেখা হচ্ছে প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি লেখার আগে, তাই প্রকাশকের কোনও পরামর্শ থাকলে সেটা তখন ভাবা যাবে। এখানে পাঠকের খেয়াল রাখা উচিত হবে যে এই গ্রন্থের লেখক তেমন কিছু কখনও লেখেননি, আবার তিনি সাইবাররাজ্যে অপরিচিত নন। তাঁর ছোটো ছোটো অনুচ্ছেদ আসলে সাইবার-ব্লগের একটা জনপ্রিয় ধারা থেকে আসেনি। বরং তিনি নিজে ওভাবে কল্পনা করেছেন কথার বাঁকবদল। সেই কারণেই অনুচ্ছেদগুলো অবিকল রাখা ঠিক মনে হলো।
চিত্রসংযোগ এই বইয়ের সাথে খুবই যায়। ঘটনাচক্রে বাংলাদেশে সাধারণভাবে, এবং পশ্চিমবাংলায় ইদানীং কালে সচিত্র বড়োদের বই অনুপস্থিত একটা চর্চা প্রায়। চিত্রকর রাজীব দত্তকে চিত্রায়ন করতে অনুরোধ করলে তিনি রাজি হয়ে যান। সাম্মানিকহীন এসব কাজ যে কোনও চিত্রকরকে উৎসাহী করতে পারে সেটা তাঁদের প্রকাণ্ড দয়ালু মনের পরিচয় দেয়। আমি রাজীবকে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। সৃষ্টিসুখ প্রকাশনের প্রধান রোহণ কুদ্দুস আমার দীর্ঘদিনের ই-মেইল বন্ধু। রাজীবের মতো তিনিও আমার ই-মেইল বন্ধু কেবল। প্রকৌশলী এই বন্ধু এই গ্রন্থটি প্রকাশে রাজি হওয়াতে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
মানস চৌধুরী
ঢাকা
Be the first to review “সাধারণ মেয়ের গল্প”