রাত বাড়লেই আমি পাগল হয়ে যাই। পুকুরের কালো জলে সাঁতার কাটে একটা আধখাওয়া, এঁটো চাঁদ। আর আমার সাধ হয় ঈশ্বর হওয়ার।
ঈশ্বর হব! ঈশ্বর!
জানিস ‘ম’, আমি তখন মর্নিং স্কুল। হাফপ্যান্ট। তিনফুট। কিংবা আর-একটু বেশি। ঈশ্বর হতে চেয়ে লিখে ফেলেছিলাম আস্ত একটা বই। বাবার পুরনো ডায়েরিতে।
রুল টানা কাগজে আমার গোটা গোটা অক্ষর। সাড়ে তিন পাতা। আরও আধ পাতা ছবি ছিল তাতে। ঈশ্বর হওয়ার অনন্ত সাধ নিয়ে আমি তার নাম রেখেছিলাম, ‘অমনিবাস’।
সবাই হেসেছিল। আর আমি, ছোট্ট আমি, বুঝে ফেলেছিলাম আমি আর ঈশ্বর, দুজনেই আসলে চন্দ্রাহত।
…
ঈশ্বর! ঈশ্বরই তো!
একটা হঠকারি আশা নিয়ে লোকটা ইউনিভার্সিটি পাঠ চুকিয়ে দিয়েছিল। সে নাকি লিখবে। সাংবাদিকতা করবে। তাঁর মনে হয়েছিল, এই সব কিছু শিখতে হয় না। জর্জ বার্নার্ড শ-এর একটা বাক্য সে মনে গেঁথে নিয়েছিল। ‘খুব অল্প বয়স থেকেই স্কুলে যাওয়ার জন্য আমাকে আমার শিক্ষা থামিয়ে দিতে হয়েছিল।’
‘তোমার বাবার খুব মনখারাপ।’ লঞ্চে যেতে তাঁর মা বলেছিল কথাটা।
আর এই আগুনে ঝড়টাকেই ভয় পাচ্ছিল সে। প্রতিবারের মতো এবারও মা শুরু করেছিল অপ্রত্যাশিত ভাবে। খুব শান্ত গলায়। যে গলা শুনে কেউ উত্তেজিত হবে না। আর ঠিক ধর্মীয় আচরণের মতো নিয়ম মেনে লোকটা পালটা জিজ্ঞাসা করেছিল তাঁর মাকে। ‘আর সেটা কী কারণে?’
‘কারণ তুমি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছ।’
‘আমি কিছু ছাড়িনি,’ লোকটা উত্তর দিয়েছিল, ‘আমি শুধু কেরিয়ার বদল করেছি।’
…
লোকটা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ! আমি তো নই। তবু অমনই হলুদ এক দুপুরে পার্ট টু-র সেকেন্ড পেপারে ঠিক সাড়ে তিন পাতা লেখার পর খাতা জমা দিয়ে আমি বেরিয়ে এসেছিলাম।
আর হতভম্ব আমার মাকে, শেষ বিকেলে আমিও বলেছিলাম, ঠিক অমনই ভাবে, ‘আমি আর পড়ব না মা। আমার ডিগ্রি দিয়ে কী হবে?’
লোকটা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। আমি তো নই। আমার বাবাও ভায়োলিন বাজায়নি কোনও দিন। তাই ঠিক একবছর পর হাতড়ে হাতড়ে অমনই একটা বিভ্রান্ত ক্লাসরুমে মুখ গুঁজে আবার পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম আমি। সাড়ে তিন পাতা নয়। এবার লিখেছিলাম সব কটা প্রশ্নের উত্তর।
Be the first to review “মুহূর্তকথা”