বারোটি গল্পের সবকটিতেই বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাপ রয়েছে। গল্পুগুলির দৈর্ঘ্যও বেশ বিচিত্র। বিষয়বস্তু বা চরিত্রসৃষ্টিতে ও অনুরূপ বৈচিত্র্য।
এই পরীক্ষাপর্ব সত্যিই তারিফ করার মতো। সব পরীক্ষা হয়তো সফল হয়নি, কিন্তু প্রত্যেক গল্পেই সেই তাগিদটুকু অনুভব করা যায়। লেখক নিজেও সম্ভবত সচেতন সে বিষয়ে।
ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে যে গল্পগুলি ভীষণভাবে দাগ কাটল সেগুলি অপেক্ষাকৃত দৈর্ঘ্যে খাটো।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে ‘লেডিজ সাইকেল’! এক্কেবারে সার্থক পরীক্ষা। বিষয় ও নির্মাণ — উভয়ত। এর পরেই ‘দ্বিরাগমন’! আহা, এটি একটু বড়। আখ্যানটি পরিচিত হলেও মাত করে দিয়েছেন অনবদ্য কথনে।
আর একটি গল্প, ব্যতিক্রমী কারণ সেটি সাধুভাষায় রচিত। ‘মায়াচিঠি’! গল্পের পরতে পরতে সাজসজ্জা আছে, মনোমুগ্ধকর বর্ণন। কাহিনির সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখেই। অপেক্ষাকৃত বড় গল্পগুলির মধ্যে আমার সর্বাধিক মনোহরণ করেছে ‘স্পর্শদোষ’!
তবে সব গল্পগুলির মধ্যেই নতুন পথ খোঁজার নিরলস, আন্তরিক, প্রচেষ্টা চোখে পড়ে। সব সময় সার্থক হয়নি।
যেমন, ‘হ্যামেলিনের হারানো শিশুরা’ গল্প যেন বড় বেশি আরোপিত লাগল, খুব চেষ্টা করতে হয়েছে বলে মনে হল।
‘বর্ণচোর’ গল্পটি দারুণ, কিন্তু শেষ দুটি বাক্য আমার মনোমত হল না। বড্ড সোজা, এই গল্পগুলির সঙ্গে মানানসই নয়।
তবে লেখককে অনেক ধন্যবাদ এরকম একটি গল্পগ্রন্থ উপহার দেবার জন্য। জনপ্রিয়তার সম্ভাবনাকে মাথায় না রেখে তিনি এই কাজ করেছেন যা নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্ববহ।
আধুনিক লেখক ও পাঠকদের কাছে মননশীল বইটি সমাদৃত হবার আশা রাখছি। তাঁদের অনুরোধ ও করব পড়ে দেখার জন্য।
ধন্যবাদ সৃষ্টিসুখকে, এরকম একটি বইকে রীতিমতো সুলভ মূল্যে প্রকাশ করার জন্য।
— ভাস্কর বোস
Be the first to review “তেঁতুলপাতার গল্প”