লাতিন আমেরিকার প্রতিবাদের কাহিনি

160.00

জয়া চৌধুরীর অনুবাদে ৯ জন লাতিন আমেরিকার লেখকের ১৯টি প্রতিবাদের গল্প।

প্রতিবাদ চিরকাল মধ্যবিত্ত সমাজ করেছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় সব ধরনের প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যখন যেভাবে প্রতিবাদ ঘটেছে, তার শুরুটা হয়েছে মধ্যবিত্তের হাত দিয়েই। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে দেশে দেশে যেভাবে প্রশাসন বাজার-অর্থনীতির ধারাটির কাছে সম্পূর্ণ একপেশে হয়ে সমর্পণ করেছে, তার ফলস্বরূপ কোনও অসাম্য বা অন্যায়ের বিরুদ্ধেই কাউকে মুখ খুলতে দেখা যাচ্ছে না। অথবা হঠাৎ করেই আমরা সকলেই খুব সন্তুষ্ট হয়ে গেছি যে আমাদের রেগে ওঠার কোন কারণই পাওয়া যাচ্ছে না! এক মন্দাকিনী প্রবাহিত স্বর্গে বাস করছি, বা এমন এক বেহেস্ত যেখানে পুরুষের জন্য বাহাত্তর হুরীর ব্যবস্থা থাকলে নারীর জন্য একশ বাহাত্তর হুরের জোগান অফুরান! যতদিন সোভিয়েত রাষ্ট্রের পতন হয়নি ততদিন বিদ্রোহের ভাষা ছিল একরকম। বিশের শতকে লাতিন দুনিয়ার সাহিত্যে যে বুম যুগ এসেছিল তার অনেকটা স্থানই দখল করে রয়েছিল এই প্রতিবাদ। একদিন বিপ্লব হবে এবং সেখানে সব মানুষ এক হয়ে বসবাস করবে এমনতরো স্বপ্নের সে ছিল অন্য দুনিয়া। এখন ইন্টারনেট বিপ্লব এবং ধনতন্ত্রের সাম্রাজ্য বিস্তার সম্পূর্ণ হওয়ার পরে পৃথিবীর পুরনো সমস্যাগুলির প্রকাশ হয়েছে নব কলেবরে। অথচ পরিবেশ আর আগের মতো নেই। মাটির ভাঁড়ার শূন্য অথচ জনসংখ্যার এত এত হাঁ মুখ। দেশে দেশে শাসকের দুর্নীতির ওপরে কাঠামো বজায় রাখার লজ্জাবস্ত্রটুকুও টেনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর এখনও এক বিশাল সংখ্যার মানুষের হাতে পেনসিল ছাড়া কিস্যু পড়ে নেই। নতুন দুনিয়ায় সমস্যার নাম কোথাও ধর্ম, কোথাও খাদ্য, কোথাও মূলবাসী বনাম দখলদারদের বিরোধ, কোথাও জল কোথাও অরণ্য…
তাহলে কি লাতিন দুনিয়ার সাহিত্যের ভাষাও বদলে গেছে? তারই খোঁজে এই বইয়ের আয়োজন। বইটিতে বলিভিয়ার দুইজন অতি সমাদৃত তরুণ লেখক দানিয়েল আভেরাঙ্গা আর রোদরিগো উরকিওলাকে এনেছি। যাঁরা বলিভিয়ার খবর রাখেন, তাঁরা জানবেন কয়েকটি সেন্ট্রাল আমেরিকান ও লাতিন আমেরিকান দেশের মতন এই দেশটিও রাজনৈতিকভাবে নিরন্তর দোদুল্যমানতায় ভোগে। সাহিত্যে তার ছাপ পড়বেই। অন্যদিকে আছেন কলম্বিয়ার গ্লোরিয়া বের্নাল। এটি আর একটি দেশ যেখানে ড্রাগ চোরাচালানের সমস্যা বা নারী নিপীড়ন এখনকার শাসকদের কাছেও অনেকখানি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গ্লোরিয়া ওকালতি করার সুবাদে অসংখ্য সমস্যা বারবার তাঁর বিভিন্ন বইতে তুলে ধরেছেন। সেখান থেকেই কয়েকটি গল্প নির্বাচিত করেছি। লাতিন দুনিয়ার সুইজারল্যান্ড বলে খ্যাত উরুগুয়ের ক্রিস্তিনা পেরি রোসসির মতো শ্রদ্ধেয় লেখক এসেছেন বাংলায়। এর আগে তো কেউ পড়েননি রোসসির লেখা। শুধু নারীবাদী কলম বলেই নন, যে কোনও অসাম্যের বিরুদ্ধে তাঁর কলম বারবার গর্জে উঠেছে বুম যুগে। অন্যদিকে হন্ডুরাস দেশটি সম্পর্কে ভূগোলের ছাত্র ছাড়া কোনও বাঙালির আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। অথচ ভেনেজুয়েলার সিমোন বলিভারের নাম বাঙালির কাছে চে গেভারা বা ফিদেল কাস্ত্রোর চেয়ে কম আদৃত নয়। এই সিমোন বলিভারের সহযোদ্ধা ফ্রানসিস্কো মোরাসানকেও তুলে ধরেছেন হন্ডুরাসের লেখক হেক্টর ফ্লোরেস। এঁকে তো আমরা চিনিইনি কখনও। বিদ্রোহের কী ভাষ্য তাঁদের লেখায় উঠে এসেছে তা জানার প্রয়াসেই আমার কলম ধরা। পাঠকের তৃপ্তি এলে সেটাই পুরস্কার বলে জানব।

জয়া চৌধুরী

Customer Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “লাতিন আমেরিকার প্রতিবাদের কাহিনি”

Your email address will not be published. Required fields are marked *