সচিন, কোহলি, মেসি, রোনাল্ডোদের তো কমবেশি সকলেই চিনি। কিন্তু বলতে পারি কি, বাংলার দামাল মেয়ে মধুমিতা বিস্তের কথা? কতটুকু জানি শার্মিন খান বা কিরণ বালোচের মতো ক্রিকেট বিপ্লবীদের গল্প? মারিয়া ইরিদয়ম নামের এক ক্যারম জিনিয়াস আছেন ভারতে, শুনেছি তার নাম? আয়ার্টন সেনা, মাইকেল শ্যুমাখার, নামগুলোই শুধু জানি। কিন্তু ক-জন চিনি অ্যালান প্রস্টকে? ফর্মুলা ওয়ান কার রেসিন-এর খুঁটিনাটি নিয়মের কতজন ক্রীড়ামোদী ঠিকঠাক খবর রাখি? এরকম সব চেনা অচেনা, অজানা, অল্প-জানা কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদদের কথা সহজ ভাষায় তুলে আনছেন সৌরাংশু।
শুধুমাত্র গতানুগতিক জীবনী নয়। এখানে একদিকে রয়েছে জীবন সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং তিতিক্ষার মধ্যে সেরা হয়ে ওঠার গল্প, অমোঘ নিয়তির মতো নেমে আসা ট্র্যাজেডি আর অপরদিকে খেলাগুলির টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, তাও সহজ ভাষায়, যা এই বইয়ের বাড়তি সম্পদ। এর সবটাই লেখকের নিজের চোখে দেখা, নিজের চর্চার মাধ্যমে পাওয়া, যা বইটিকে পাঠকের আরও কাছে এনে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
এর আগে বাংলা ভাষায় ক্রীড়াচর্চায় আমরা বিভিন্ন খেলা এবং খেলোয়াড়দের সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গাছে যে আমাদের সেই জানা, সেই খেলোয়াড়ের পরিসংখ্যানের মধ্যেই আবদ্ধ থেকে গেছে। আর এখানেই এই বইটির বিশেষত্ব। যেখানে খেলোয়াড় হবার সূত্রে খেলাগুলির একটি বস্তুনিষ্ঠ নিরপেক্ষ অথচ মনোগ্রাহী বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র জ্ঞানবৃদ্ধির সহায়কই হয়নি, উপরন্তু খেলাটিকে, খেলোয়াড়টিকে বুঝতে সাহায্য করেছে। বাংলা ভাষায় ক্রীড়াচর্চার ক্ষেত্রে এই সংকলনটি আগামী দিনে পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।
এর পাশাপাশি সংকলনটি পড়তে পড়তে মনে হয়েছে যে, এই ধরনের আরও কাজ আমাদের সার্বিক ক্রীড়াচর্চা এবং ক্রীড়াসংস্কৃতি গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা নেবে। যা একটি দেশের সামগ্রিক চরিত্র গঠন এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্ত। দর্শক, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, প্রশাসক নির্বিশেষে ক্রীড়াচর্চার এই সার্বিক বোধ গড়ে ওঠা আমাদের দেশে ভীষণ জরুরি। যা শুধুমাত্র স্পনসরের আশীর্বাদধন্য কতিপয় খেলার মধ্যেই আবদ্ধ না থেকে সমস্ত ধরনের খেলার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলবে। আশা করব সৌরাংশু শুধুমাত্র এই বইটি করেই তাঁর ক্রীড়াচর্চা বন্ধ করে দেবেন না এবং আরও বেশ কিছু খণ্ডের মাধ্যমে এই প্রয়াসটির পূর্ণ প্রকাশ ঘটাবেন যা হয়তো বিগত দিনের বহু হারিয়ে যাওয়া প্রতিভার ক্ষেত্রে হওয়া অবিচারের পুনরাবৃত্তি ঠেকাবে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময়দের জন্য।
পাঠককে অনুরোধ করব, বইটি নিজে পড়ুন এবং আরও বেশি করে অন্যকে পড়তে উৎসাহ দিন। এভাবেই সামগ্রিক ক্রীড়াসংস্কৃতি সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। আর যদি নিজের কথা বলি! মাঝেমাঝেই এর পাতা নেড়েচেড়ে দেখব এবং অধীর আগ্রহে এর পরবর্তী খণ্ডগুলির অপেক্ষা করব।
নরেন্দ্রনাথ আইচ
Be the first to review “ময়দানি স্ক্র্যাপবুক”