আবার রোদ্দুর

149.00

প্রত্যেক লেখকের নিজস্ব নগর থাকে। বলা যায়, চরিত্র সমাবেশে আর আখ্যানের চালচিত্রে সে নগর নিজের ভাবনামাফিক নির্মাণ করে নেন লেখক। শাশ্বতী নন্দীও করেছেন। তাঁর এই আখ্যান-নগরের আঙ্গিকটি ছোটদের খেলনাঘরের মতো। তবে সেখানে মিথ্যের শাকপাতা নেই। একটু খেয়াল করলেই দেখব, শাশ্বতী তাঁর মায়াকলমে ডাক পাঠিয়ে আমাদের ঠেলে দিয়েছেন চেনা মুখেদের মিছিলে। যেখানে লাইফ সার্টিফিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আধারে হাতের ছাপ মেলা না-মেলার আশঙ্কায় ঘাম ঝরে বৃদ্ধের। যেখানে ম্যামোগ্রাফির রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা বধূটির বুক টনটন করে ওঠে অন্য এক মায়ের শিশুকে স্তন্যদানের দৃশ্য দেখে। অথবা সেই উদ্ধত মেয়েটা, যে কেরিয়ারকে সর্বস্ব করে জীবন-সম্পর্ক-ভালবাসাকে হেলায় উড়িয়ে দিতে পারে, তার দিকে অচেনা বিস্ময়ে অপলক তাকিয়ে থাকেন তারই গর্ভধারিণী মা । সেখানে বাবার শেষ স্মৃতি-অঙ্গুরীয় বিক্রি করে যে কিশোরী ড্রাগের ঠেকে গিয়ে পড়ে, তাকে দেখি জীবনে ফেরার কাকুতিতে অথবা চোখ চলে যায় সেই ফটোগ্রাফারটির দিকে, অন্তরালবর্তী স্বপনচারিণী অভিনেত্রীর ছবি তোলার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যে হাসপাতালে ভরতি হয়েছে, একদিকে চাকরি, অন্যদিকে প্রেমিকা — মাঝে দুলতে থাকে জীবন। কাহিনি থেকে কাহিনিতে এভাবেই জীবনকে দোলাচলে ফেলে দেন শাশ্বতী। অথবা জীবনের দোলাচলগুলিকেই তুলে আনানে তাঁর মায়ানগরীতে। তবে সমস্ত ব্যর্থতা, যন্ত্রণা, সমস্ত অসহায়তা-অপারগতার জমিতেও মখমল রোদ্দুরের চাদরটি বিছিয়ে দেন তিনি। যে রোদ্দুরে ঘাম ঝরে, সে রোদ্দুরই তো মায়াময় হয়ে একটা নতুন দিন, একটা নতুন জীবন, নতুন করে বেঁচে থাকা ঘোষণা করে। সেই রোদ্দুরই তো প্রতিদিন নিশিশেষে জীবনকে বলে যায় চরৈবেতি। তাই আখ্যানের অলিন্দে অলিন্দে এই আশা-রোদ্দুর ছড়িয়ে দিতে থাকেন শাশ্বতী।