১৬ আগস্ট, ২০১৫। ঢাকা থেকে ঘুরে এসেছি। বাড়ির পেছনে, বুলনোজ স্টোনের দেয়ালে বসে আছি। বাঁ দিকে শত বছরের পুরনো ওক গাছের পাতার অনবদ্য বাজনা, ডান দিকে দুটি কিশোরী বার্চ মাথার ওপর ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রীষ্মের মাতাল হাওয়ায় উড়ছে আমার এলোচুল। ভাবছি বাংলা কবিতার আঙ্গিক নিয়ে। কেমন যেন একঘেয়ে লাগছে এই আশি বছরের পুরনো ধারায় লিখতে। হঠাৎ কয়েকটি লাইন আমার ওপর ভর করল, সেল ফোনের মেমো অপশনে গিয়ে তা লিখে ফেললাম। এবং লক্ষ করলাম কী যেন নেই এই পঙক্তিগুচ্ছে, এবং নেই বলেই কেমন যেন নতুন লাগছে। কোনও এক অদ্ভুত উপায়ে এই পঙক্তিগুচ্ছে কোনও ক্রিয়াপদ নেই। ‘ইওরেকা’ বলে চেঁচিয়ে না উঠলেও নতুন কিছু আবিষ্কারের উচ্ছ্বাসকে দমাতে না পেরে আমার স্ত্রী মুক্তির সাথে বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ার করি। রাতেই আরও দু-একজনের সাথে কথা বলি। তখন মনে হয়েছিল, এটিই বাংলা কবিতার পরবর্তী গন্তব্য, ক্রিয়াপদহীন কবিতা। কবি শহীদ কাদরীকে একদিন ভয়ে ভয়ে একটি চিঠি লিখে কয়েকটি কবিতা পাঠিয়ে দিই। পরে আলাপ করি মুখোমুখি। তিনি বলেন, “ক্রিয়াপদ বাংলা ভাষার দুর্বল দিক আবার এটিই ভাষার শক্তি।” এর বেশি এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলেননি। একটি পরামর্শ তিনি দিয়েছেন, লেখাগুলো যেন কবিতা হয়ে ওঠে এ বিষয়ে লক্ষ রাখতে। ‘অযান্ত্রিক’ ওয়েবজিনের সম্পাদক আদনান সৈয়দ ভূমিকা সহ একগুচ্ছ ক্রিয়াপদহীন কবিতা ছেপে দেন। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত অত্যন্ত জনপ্রিয় বাংলা সাপ্তাহিক ‘বাঙালী’ পুরো একপাতা জুড়ে ক্রিয়াপদহীন কবিতা ছাপে। এর সম্পাদক সাংবাদিক কৌশিক আহমেদ এক সভায় বলেন, “এই কবিতাগুলোর মূল শক্তি হল ক্রিয়াপদ না থাকায় এরা সর্বকালের। এরা অতীতের, বর্তমানের এবং ভবিষ্যতের।”
— কাজী জহিরুল ইসলাম
Be the first to review “ক্রিয়াপদহীন ক্রিয়াকলাপ”